০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ত্রাণ কার্যক্রমে মুখোমুখি প্রতিবন্ধকতা

  • Sarakhon Report
  • ০২:০০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫
  • 29

সারাক্ষণ রিপোর্ট

শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার এক বিধ্বস্তকর ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দুইটি প্রধান বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বহু রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। চার বছরের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ইতিমধ্যে পরিবহন ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলি জরুরি প্রয়োজন ও পথসমূহের মূল্যায়ন শুরু করেছে।

অবকাঠামো ও ত্রাণ কার্যক্রম

  • লজিস্টিক মূল্যায়ন: জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন চলছে।
  • নায়প্যিটাও বিমানবন্দর: এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ারের ধ্বংসের ফলে এখানে বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ।
  • মন্দালয় বিমানবন্দর: কাঠামোগত ক্ষতি সত্ত্বেও, স্থানীয় অংশীদার ও Mitsubishi Corp.-এর সহযোগিতায় ত্রাণ ফ্লাইট পুনরায় শুরু হয়েছে।
  • ইয়াংগন বিমানবন্দর: দেশের দক্ষিণে অবস্থিত, বর্তমানে কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা

  • রাস্তার অবস্থা: অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত ও অবরুদ্ধ হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
  • সম্পদ সংকট: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগের সমস্যা কার্যক্রমে বাঁধা দিচ্ছে।
  • অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ: সংঘর্ষ ও সীমান্ত অঞ্চলে বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণ ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলেছে।
  • বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ: নায়প্যিটাও বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের ধ্বংস এবং আর্থিক ও সরবরাহের সমস্যা থাকায়, পুনরায় বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
  • ভূমিধসের ঝুঁকি: রাজধানীর বিমানবন্দরে ভূমিধসের আশঙ্কাও বিদ্যমান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা

  • আর্থিক সাহায্য: জাতিসংঘ প্রথমে ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।
  • প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা: সামরিক সূত্র অনুযায়ী কমপক্ষে ১৬৪৪ জন নিহত ও হাজার হাজার আহত; সিভিল সোসাইটি সংগঠন প্রায় ২৫০০ জনের মৃত্যুর অনুমান করছে।
  • মানবিক সংকট: ইতোমধ্যে ৩ মিলিয়ন মানুষ গৃহছাড়া পড়েছে এবং ২০ মিলিয়ন মানুষ সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে।
  • নীতিগত প্রতিশ্রুতি: বিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার দুই সপ্তাহের অভিযানবিরতি ঘোষণা করে ত্রাণ সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
  • ইউরোপীয় সহায়তা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের ECHO আঞ্চলিক প্রধান মানবিক কর্মীদের নিরাপদ প্রবেশ ও ভিসা প্রদানকে জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন। ইউরোপীয় কমিশন প্রথমে ২.৫ মিলিয়ন ইউরো আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করেছে এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

আঞ্চলিক সহায়তা ও পরিস্থিতির বিবরণ

  • সহায়ক দেশসমূহ: ভারত, চীন ও সিঙ্গাপুর শিপ, ট্রাক কনভয় ও বিমান প্রেরণের মাধ্যমে সরবরাহ ও কর্মী পাঠিয়েছে।
  • থাইল্যান্ডের অবদান: থাইল্যান্ড ৫৫ জন সামরিক বাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য পাঠিয়েছে।
  • ব্যাংককের ক্ষতি: ঢাকার মতোই, ব্যাংককের উচ্চতর ভবনগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় ১৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে, যা প্রধানত আধা-নির্মিত ৩০ তলার অফিস টাওয়ারের ধসের কারণে হয়েছে।

সরবরাহের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

  • বিকল্প ভূমি পথ: স্থানীয়দের পরিচিত রাস্তাগুলি ব্যবহার করে ত্রাণ সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে।
  • ফ্লাইট পরিচালনা: যদি রানওয়ে নিরাপদ থাকে, তাহলে ম্যানুয়াল বা মোবাইল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিট ব্যবহার করে ফ্লাইট পরিচালনার সম্ভাবনা আছে, যেমনটি আন্তর্জাতিক সঙ্কট গোষ্ঠীর সিনিয়র উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন।
  • অতিরিক্ত সরবরাহ: পূর্বনির্ধারিত স্টক থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করা হলেও, ব্যাপক প্রভাবের কারণে আরও সরবরাহ, খোঁজ-উদ্ধার দল, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয় ও নন-ফুড আইটেম প্রেরণের প্রয়োজন রয়েছে।
  • নগদ সহায়তা: CARE-এর মতে, জরিমানা ভিত্তিক নগদ সহায়তা দ্রুত, সস্তা ও কার্যকর হতে পারে, যদিও স্থানীয় বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত প্রতিবন্ধকতা ও তথ্যের সীমাবদ্ধতা

  • পানীয় জল সংকট: বিদ্যুৎ অভাবে পানীয় জলের সমস্যা ও নগরাঞ্চলে মৃতদেহ পরিচালনায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
  • তথ্যের প্রবাহে বাধা: সামরিক সরকারের ইন্টারনেট ব্লক তথ্য প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
  • বিদেশি সাংবাদিকদের সীমাবদ্ধতা: সামরিক শাসনব্যবস্থার (SAC) পক্ষ থেকে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে, কারণ বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংকট এবং হোটেলের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থার কারণে যথোপযুক্ত সুবিধা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।

উপসংহার

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, ব্যাপক অবকাঠামো ক্ষতি এবং পরিবহন ও সরবরাহের জটিলতার কারণে ত্রাণ কার্যক্রমে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহায়তার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদানের চেষ্টা চললেও, নিরাপদ প্রবেশাধিকার, পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ত্রাণ কার্যক্রমে মুখোমুখি প্রতিবন্ধকতা

০২:০০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার এক বিধ্বস্তকর ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দুইটি প্রধান বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বহু রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। চার বছরের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ইতিমধ্যে পরিবহন ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলি জরুরি প্রয়োজন ও পথসমূহের মূল্যায়ন শুরু করেছে।

অবকাঠামো ও ত্রাণ কার্যক্রম

  • লজিস্টিক মূল্যায়ন: জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন চলছে।
  • নায়প্যিটাও বিমানবন্দর: এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ারের ধ্বংসের ফলে এখানে বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ।
  • মন্দালয় বিমানবন্দর: কাঠামোগত ক্ষতি সত্ত্বেও, স্থানীয় অংশীদার ও Mitsubishi Corp.-এর সহযোগিতায় ত্রাণ ফ্লাইট পুনরায় শুরু হয়েছে।
  • ইয়াংগন বিমানবন্দর: দেশের দক্ষিণে অবস্থিত, বর্তমানে কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা

  • রাস্তার অবস্থা: অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত ও অবরুদ্ধ হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
  • সম্পদ সংকট: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগের সমস্যা কার্যক্রমে বাঁধা দিচ্ছে।
  • অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ: সংঘর্ষ ও সীমান্ত অঞ্চলে বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণ ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলেছে।
  • বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ: নায়প্যিটাও বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের ধ্বংস এবং আর্থিক ও সরবরাহের সমস্যা থাকায়, পুনরায় বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
  • ভূমিধসের ঝুঁকি: রাজধানীর বিমানবন্দরে ভূমিধসের আশঙ্কাও বিদ্যমান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা

  • আর্থিক সাহায্য: জাতিসংঘ প্রথমে ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।
  • প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা: সামরিক সূত্র অনুযায়ী কমপক্ষে ১৬৪৪ জন নিহত ও হাজার হাজার আহত; সিভিল সোসাইটি সংগঠন প্রায় ২৫০০ জনের মৃত্যুর অনুমান করছে।
  • মানবিক সংকট: ইতোমধ্যে ৩ মিলিয়ন মানুষ গৃহছাড়া পড়েছে এবং ২০ মিলিয়ন মানুষ সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে।
  • নীতিগত প্রতিশ্রুতি: বিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার দুই সপ্তাহের অভিযানবিরতি ঘোষণা করে ত্রাণ সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
  • ইউরোপীয় সহায়তা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের ECHO আঞ্চলিক প্রধান মানবিক কর্মীদের নিরাপদ প্রবেশ ও ভিসা প্রদানকে জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন। ইউরোপীয় কমিশন প্রথমে ২.৫ মিলিয়ন ইউরো আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করেছে এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

আঞ্চলিক সহায়তা ও পরিস্থিতির বিবরণ

  • সহায়ক দেশসমূহ: ভারত, চীন ও সিঙ্গাপুর শিপ, ট্রাক কনভয় ও বিমান প্রেরণের মাধ্যমে সরবরাহ ও কর্মী পাঠিয়েছে।
  • থাইল্যান্ডের অবদান: থাইল্যান্ড ৫৫ জন সামরিক বাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য পাঠিয়েছে।
  • ব্যাংককের ক্ষতি: ঢাকার মতোই, ব্যাংককের উচ্চতর ভবনগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় ১৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে, যা প্রধানত আধা-নির্মিত ৩০ তলার অফিস টাওয়ারের ধসের কারণে হয়েছে।

সরবরাহের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

  • বিকল্প ভূমি পথ: স্থানীয়দের পরিচিত রাস্তাগুলি ব্যবহার করে ত্রাণ সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে।
  • ফ্লাইট পরিচালনা: যদি রানওয়ে নিরাপদ থাকে, তাহলে ম্যানুয়াল বা মোবাইল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিট ব্যবহার করে ফ্লাইট পরিচালনার সম্ভাবনা আছে, যেমনটি আন্তর্জাতিক সঙ্কট গোষ্ঠীর সিনিয়র উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন।
  • অতিরিক্ত সরবরাহ: পূর্বনির্ধারিত স্টক থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করা হলেও, ব্যাপক প্রভাবের কারণে আরও সরবরাহ, খোঁজ-উদ্ধার দল, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয় ও নন-ফুড আইটেম প্রেরণের প্রয়োজন রয়েছে।
  • নগদ সহায়তা: CARE-এর মতে, জরিমানা ভিত্তিক নগদ সহায়তা দ্রুত, সস্তা ও কার্যকর হতে পারে, যদিও স্থানীয় বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত প্রতিবন্ধকতা ও তথ্যের সীমাবদ্ধতা

  • পানীয় জল সংকট: বিদ্যুৎ অভাবে পানীয় জলের সমস্যা ও নগরাঞ্চলে মৃতদেহ পরিচালনায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
  • তথ্যের প্রবাহে বাধা: সামরিক সরকারের ইন্টারনেট ব্লক তথ্য প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
  • বিদেশি সাংবাদিকদের সীমাবদ্ধতা: সামরিক শাসনব্যবস্থার (SAC) পক্ষ থেকে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে, কারণ বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংকট এবং হোটেলের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থার কারণে যথোপযুক্ত সুবিধা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।

উপসংহার

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, ব্যাপক অবকাঠামো ক্ষতি এবং পরিবহন ও সরবরাহের জটিলতার কারণে ত্রাণ কার্যক্রমে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহায়তার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদানের চেষ্টা চললেও, নিরাপদ প্রবেশাধিকার, পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।