সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতর পরিদর্শন করেছেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম সফর। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের ফলে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তাদের আদর্শিক চালিকাশক্তি আরএসএসের মধ্যেকার সম্ভাব্য দূরত্ব নিয়ে চলা জল্পনা কার্যত শেষ হয়েছে।
আরএসএসের সদর দফতর সফর
মোদী হলেন দ্বিতীয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যিনি নাগপুরের আরএসএস সদর দফতরে গিয়েছেন; এর আগে ২০০০ সালে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অটল বিহারী বাজপেয়ী সেখানে যান। আশ্চর্যজনকভাবে, মোদীর ক্ষেত্রেও এটি তাঁর তৃতীয় মেয়াদে সদর দফতর পরিদর্শন। এর আগে ২০১৩ সালে তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আরএসএসের প্রশাসনিক কেন্দ্র সফর করেন।
আরএসএসের ভূমিকা ও মূল বার্তা
সফরে মোদী ড. হেডগেওয়ার স্মৃতি মন্দিরে আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং সংগঠনের শিকড়কে “ভারতীয় সংস্কৃতির আধুনিক অক্ষয় বট” বলে বর্ণনা করেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, এই অক্ষয় বটের ডালপালা হল লক্ষ লক্ষ আরএসএস স্বয়ংসেবক, যারা নানাভাবে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। মোদী আরও উল্লেখ করেন যে আরএসএস ভারতীয় সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনার মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
চিকিৎসা পরিষেবায় আরএসএসের অবদান
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মাধব নেট্রালয় প্রিমিয়াম সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি মাধব নেট্রালয় আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের নতুন ভবন, যা আরএসএসের প্রাক্তন প্রধান মাধবরাও গোলওয়ালকরের নামে স্থাপিত। মোদী জানান, সম্প্রতি প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলায় আরএসএস স্বয়ংসেবকরা চোখের চিকিৎসা সংক্রান্ত “নেত্র কুম্ভ” উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে আরএসএস
১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আরএসএস শীঘ্রই শতবর্ষ পূর্ণ করতে চলেছে। মোদী মনে করিয়ে দেন যে ১৯২৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সময়টি ছিল স্বাধীনতার লড়াইয়ের সংকটকাল। এখন শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আরএসএস ভারতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে নিজস্ব ভূমিকা রাখছে। মোদীর মতে, দেশ যে এগিয়ে চলেছে এবং বড় বড় লক্ষ্য পূরণ করছে, তার পেছনে আরএসএসের কয়েক দশকের নিরলস প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে।
আরএসএস-বিজেপি সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা
বেশ কিছুদিন ধরে আরএসএস ও বিজেপির মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু মোদীর নাগপুর সফর সেই জল্পনা দূর করেছে। আরএসএস নেতারা বলছেন, মোদীর এই সফর “অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও ঐতিহাসিক” এবং দল ও সংগঠনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার স্পষ্ট বার্তা দেয়। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে রাম মন্দির নির্মাণ, তিন তালাক রদ করা, অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল—এই সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মোদীর নেতৃত্বেই বাস্তবায়িত হয়েছে, যা আরএসএসের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল।
নাগপুর সফরে আরও অনুষ্ঠান
নাগপুরে মোদী আরও যান দীক্ষাভূমিতে, যেখানে ১৯৫৬ সালে ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর তাঁর অসংখ্য অনুসারীসহ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। মোদী দীক্ষাভূমিকে সামাজিক ন্যায়বিচার ও প্রান্তিক মানুষকে ক্ষমতায়নের প্রতীক বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, একটি “উন্নত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত” গড়াই হবে সংবিধান রচয়িতা ড. আম্বেদকরের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।
উপসংহার
নাগপুরে আরএসএস সদর দফতর সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে সংগঠনের শতবর্ষপূর্তির প্রাক্কালে বিজেপি ও আরএসএস ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাবে। আরএসএসকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে, যা অব্যাহতভাবে জাতীয় চেতনা জাগিয়ে রাখছে এবং স্বয়ংসেবকদের মাধ্যমে সেবা ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।