ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজকেরা ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে নিয়োগসহ সব প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, তৃতীয় পক্ষের অডিট ও নাগরিক নজরদারির দাবি তোলেন। অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
উদ্যোগ ও স্থান-কাল
জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির উদ্যোগে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দলের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজু।
অংশগ্রহণকারী ও বক্তৃতা
ড. এ আর খানের পরিচালনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন—
• মো. সিদ্দিকুর রহমান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টি
• মো. (মাওলানা) ওবায়দুল হক, চেয়ারম্যান, নেজামে ইসলাম পার্টি
• আবুল কাশেম মজুমদার, চেয়ারম্যান, জাস্টিজ পার্টি
• মোবারক হোসেন বিজ্ঞানী, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সৎ সংগ্রামী পার্টি
• নারী নেত্রী এলিজা রহমান
• জোয়ার্দার মঈনুল ইসলাম মিলন, সভাপতি, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি (ঢাকা উত্তর)
এ ছাড়া আরও বহু নেতাকর্মী মানববন্ধনে অংশ নেন।
সভাপতির বক্তব্যের মূলপ্রস্তাব
সভাপতি মো. মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত গড়ে তুলতে হবে। তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেন। একই সঙ্গে পূর্ববর্তী সময়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আহ্বান জানান।
অভিযোগের সুনির্দিষ্ট দিকগুলো
বক্তাদের দাবিতে উঠে আসে—
• নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের তদন্ত
• প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ–দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা যাচাই
• সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনা
বক্তারা বলেন, বাজারে ঘুষ–লেনদেনের নানা তথ্য ঘুরে বেড়ালেও সেগুলোর নিরপেক্ষ যাচাই এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াই এখন প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনসাধারণের প্রত্যাশা—ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতি বিলুপ্ত হবে এবং মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পাবে। কিন্তু এই প্রত্যাশার পরিপন্থী কোনো উদ্যোগ বা নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হলে তা জনস্বার্থবিরোধী হবে।
দাবি ও সুপারিশ
১) ঢাকা ওয়াসার সব অনিয়ম–দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন
২) অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি ও অপসারণ
৩) নিয়োগ ও ক্রয়—সব প্রক্রিয়ায় ই–টেন্ডার, তৃতীয় পক্ষ অডিট ও নাগরিক নজরদারি চালু
৪) পানি মান নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ, নিয়মিত প্রকাশ্য পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও অভিযোগ গ্রহণের হটলাইন চালু
৫) সুপেয় পানির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জলাধার–শোধনাগার আধুনিকায়ন
পরবর্তী করণীয়
বক্তারা ঘোষণা করেন, দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ না হলে বৃহত্তর নাগরিক ঐক্য গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে সরকার ও কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়, যাতে ওয়াসার সেবায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনআস্থা ফিরে আসে।
উপসংহার
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা পুনর্ব্যক্ত করেন—সবার জন্য নিরাপদ, সুপেয় পানি পাওয়া একটি মৌলিক নাগরিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় আনা এখন সময়ের দাবি।
#ট্যাগ: #ঢাকা_ওয়াসা #সুপেয়_পানি #দুর্নীতিবিরোধী_আন্দোলন #মানববন্ধন #জাতীয়_প্রেসক্লাব #জবাবদিহি #স্বচ্ছতা #নাগরিক_অধিকার