ডেনমার্কের শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি নোভো নরডিস্কে বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তন আসছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হেলগে লুন্ডসহ সাতজন স্বাধীন বোর্ড সদস্য পদত্যাগ করছেন। এর মাধ্যমে নোভো নরডিস্ক ফাউন্ডেশন সরাসরি বোর্ড নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং সাবেক সিইও লার্স রেবিয়েন সোরেনসেন নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন।
বোর্ডে ক্ষমতার পালাবদল
নোভো নরডিস্ক ফাউন্ডেশন—যা ব্যবসা ও দাতব্য কার্যক্রম একত্রে পরিচালনা করে—মঙ্গলবার ঘোষণা দেয় যে তারা কোম্পানির বোর্ডে নিজস্ব প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে। এদের মধ্যে সোরেনসেন আগামী দুই থেকে তিন বছর বোর্ডের নেতৃত্ব দেবেন।
এই পরিবর্তনের ফলে বোর্ডের গঠন নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে, যা নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান হেলগে লুন্ড ও ফাউন্ডেশনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই অবশেষে চেয়ারম্যান ও ছয়জন স্বাধীন পরিচালক সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ওয়েগোভি বিক্রি ও মার্কিন বাজারে মনোযোগ
নোভো নরডিস্কের এই প্রশাসনিক সংকট এমন এক সময় ঘটছে, যখন তাদের ওজন কমানোর ওষুধ ‘ওয়েগোভি’ একসময় ইউরোপে কোম্পানিটিকে সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। কিন্তু এ বছর প্রতিদ্বন্দ্বী এলাই লিলি বাজারে শেয়ার দখল করায় কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
ফাউন্ডেশন মনে করে, বোর্ড পরিবর্তনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও মার্কিন বাজারে বাড়তি মনোযোগ আনতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই এখন নোভোর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ক্ষেত্র।
নতুন সিইওর প্রতি আস্থা
আগস্টে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সিইও মাইক ডাউস্টডারের প্রতি ফাউন্ডেশন পূর্ণ আস্থা জানিয়েছে। তিনি কোম্পানিতে পুনর্গঠন ও প্রায় ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে উৎপাদন ও বাজারকেন্দ্রিক পুনর্নির্মাণে মনোযোগ দিচ্ছেন।
নতুন চেয়ারম্যান সোরেনসেন বলেন, “আমরা মনে করি এই পরিবর্তনের জন্য নতুন দৃষ্টি ও উদ্যম দরকার ছিল। ডাউস্টডারের নেতৃত্বে কোম্পানির পুনর্গঠনে আমরা সম্পূর্ণ একমত।”
শেয়ারহোল্ডার সভায় পরিবর্তনের অনুমোদন
নভেম্বরের ১৪ তারিখে একটি বিশেষ শেয়ারহোল্ডার সভায় বোর্ডের নতুন গঠন অনুমোদনের জন্য ভোট হবে। যদি নতুন প্রার্থীরা নির্বাচিত হন, তাহলে বোর্ডে ছয়জন শেয়ারহোল্ডার-নির্বাচিত এবং চারজন কর্মী-নির্বাচিত সদস্য থাকবেন—যা বর্তমান আটজন শেয়ারহোল্ডার সদস্যের তুলনায় কম।
যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক কৌশল ও মূল্যচাপ
নতুন নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি ভোক্তামুখী বাজারে প্রবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করতে চায়। সোরেনসেন বলেন, “আমরা সবাই এমন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি, যাদের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রে নির্ভরশীল। তাই বোর্ডে মার্কিন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সদস্য থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।”
নোভো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওষুধের দাম কমানোর চাপের মুখেও রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া
ফাউন্ডেশনের এই নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউনিয়ন ইনভেস্টমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজার মার্কাস ম্যান্স বলেন, “বোর্ডের ভবিষ্যৎ কাঠামো ও কৌশল নিয়ে মতপার্থক্যের কারণেই এই পরিবর্তন এসেছে।”
অন্যদিকে কিছু বিনিয়োগকারী যেমন এটিজি হেলথকেয়ারের লুকাস লিউ বলেছেন, “পুরনো সিইও কেন আবার চেয়ারম্যান হচ্ছেন, তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।”
তবে ডেনিশ ফান্ড গ্লোবাল হেলথ ইনভেস্টের প্রধান ক্লাউস হেনরিক জোহানসেন জানিয়েছেন, “আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করব, নতুন নেতৃত্ব উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধির জন্য কী পদক্ষেপ নেয়।”
দ্রুত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
সোরেনসেন এক বিবৃতিতে বলেন, “দ্রুত পরিবর্তনই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী ওষুধ শিল্প দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তাই নোভো নরডিস্কের টিকে থাকা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বোর্ড নবায়ন অপরিহার্য।”
নিয়ন্ত্রণ ফাউন্ডেশনের হাতে
নোভো নরডিস্ক ফাউন্ডেশন কোম্পানিটির মূল নিয়ন্ত্রক শেয়ারহোল্ডার, যারা নোভো হোল্ডিংসের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন ও পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে, যার লক্ষ্য বিক্রি বাড়ানো ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।
#নোভো নরডিস্ক, #ফাউন্ডেশন,# বোর্ড পরিবর্তন, #লার্স রেবিয়েন সোরেনসেন, #মাইক ডাউস্টডার,# ওয়েগোভি,# ডেনমার্ক,# ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, #সারাক্ষণ রিপোর্ট