শক্তিশালী ভূমিকম্পে নরসিংদী জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উঁচু ভবনগুলো দুলে ওঠে, বিভিন্ন স্থানে মাটিতে ফাটল দেখা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং পাঁচজনের মৃত্যুও নিশ্চিত হয়েছে। পুরো শহরজুড়ে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট আপনাদের জন্য ঘটনাটি সহজভাবে পুনর্গঠিত আকারে তুলে ধরছে।
উৎপত্তিস্থলে সবচেয়ে বড় ভবনে তীব্র দুলুনি
মাধবদীর সবচেয়ে বড় ভবন জে অ্যান্ড জে টাওয়ার—১৪ তলা কাঠামো। নিচের কয়েকটি তলায় হাসপাতাল এবং ওপরের ৪৮টি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন অসংখ্য মানুষ।
ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সনেট মো. নোমান। তিনি বলেন, পুরো ভবন এপাশ–ওপাশ দুলছিল। রোগীসহ সবাই আতঙ্কে নিচে নামতে শুরু করেন। কিছু রোগী হাতে স্যালাইন ঝুলিয়েই নিচে নেমে আসেন। ভবনের চারটি এক্সিট থাকায় সবাই নিরাপদে বের হতে পেরেছেন।
ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীরাও বলেন, এ রকম কম্পন তাঁরা আগে কখনো দেখেননি।
বাড়িঘর কাঁপন, মানুষ রাস্তায় ছুটে আসে
শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসে।
• ছোট মাধবদীর তৃতীয় তলার বাসিন্দা জসিম মিয়া পরিবার নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসেন—তিনি জীবনে এমন ঝাঁকুনি দেখেননি।
• চা–দোকানি বজলু মিয়াও দোকান ফেলে দৌড়ে সড়কে চলে আসেন।
• সাততলা ভবনের গৃহবধূ সালমা আক্তার হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান।
• ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনও বলেন, আজকের অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড, দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সাবস্টেশনে আগুন লাগায় যন্ত্রাংশ পুড়ে যায় এবং পলাশ–ঘোড়াশালের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হয়।
বিভিন্ন ভবনে ফাটল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক
ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের একটি ছয়তলা মাদ্রাসায় চার–পাঁচটি স্থানে ফাটল দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি করেন।
মাধবদীর নওয়াপাড়ায় ছয়তলা ভবনের মালিক ফজলুল হক জানান, শতাধিক মানুষের বসবাসের ভবনটি ভয়াবহভাবে দুলে ওঠে। হুড়োহুড়িতে কয়েকজন হাত–পায়ে আঘাত পান।
নরসিংদীতে পাঁচজনের মৃত্যু
ভূমিকম্পজনিত ঘটনায় জেলার তিন উপজেলায় অন্তত পাঁচজন মারা যান।
• সদর উপজেলা: বহুতল ভবনের নির্মাণসামগ্রী একতলা বাড়ির ছাদে ধসে পড়ে বাবা–ছেলে নিহত—দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও ওমর ফারুক (৯)।
• পলাশ:
– মাটির ঘরের দেয়াল ধসে মারা যান ৭৫ বছর বয়সী কাজম আলী ভূঁইয়া।
– আবার একই উপজেলায় ভূমিকম্পের সময় স্ট্রোকে মারা যান ৬৫ বছর বয়সী নাসির উদ্দীন।
• শিবপুর: গাছ থেকে পড়ে মারা যান ফোরকান মিয়া (৩৫); কম্পনে ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যান।
দুটি স্থানে মাটিতে দীর্ঘ ফাটল
পলাশ উপজেলার দুটি জায়গায় বড় ধরনের মাটিচ্যুতি ঘটে।
• দড়িহাওলাপাড়ার বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে কাঁচা রাস্তায় বড় ফাটল।
• লেবুপাড়ায় ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্মের আঙিনায় একাধিক দীর্ঘ ফাটল।
স্থানীয়রা জানান, ভূমিকম্পের সময়ই এসব ফাটল দেখা দিয়েছে।
চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৮০ জন
নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, ভীত হয়ে দৌড়ানোর সময় পড়ে যাওয়া বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া মোট ৮০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনায় নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভবন দুলুনি, মাটিচ্যুতি, অগ্নিকাণ্ড—সব মিলিয়ে দিনটি স্থানীয়দের জন্য ছিল দুঃসহ অভিজ্ঞতায় ভরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















