০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জাপানে স্ট্যান্ড-আপ কমেডির জোয়ার: বিদেশি ও দ্বিভাষী শিল্পীদের হাতে নতুন হাসির পথ ডায়ানা ড্যানিয়েলের জন্য একটি নতুন সকাল প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩৭) বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো প্যারিস থেকে তেঙ্গাহ: একটি ফরাসি রেট্রো থিমের বাসা অন্ধকার ভ্রমণের উত্থান: অতীতের ক্ষত দেখতেই কেন বাড়ছে পর্যটকের ভিড় সেনেগালে দুর্নীতি দমন না রাজনৈতিক প্রতিশোধ? ফায়ে–সোঙ্কো সরকারের কড়াকড়িতে বিতর্ক তুঙ্গে মরক্কোর দাখলা অ্যাটলান্টিক বন্দর: আফ্রিকা-সাহেল বাণিজ্যের নতুন প্রবেশদ্বার বিশ্বের ৯৯% চিপ প্রযুক্তির নায়ক: সেমিকন্ডাক্টর কিংবদন্তি চি-তাং সা’র অস্থি চীনে সমাহিত রাশিয়ায় নির্বাসন থেকে সিরীয় উপকূলে নতুন বিদ্রোহের ছক আঁকছেন আসাদের সাবেক গুপ্তচরপ্রধান ও কোটিপতি চাচাতো ভাই

রাশিয়ার ওপর নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: তেলের বাজারে ধাক্কা ও চাপ বাড়ছে

FILE PHOTO: A model of a pump jack is seen in front of the displayed word "Sanctions," U.S. and Russia flag colours in this illustration taken March 8, 2022. REUTERS/Dado Ruvic/Illustration/File Photo

রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কঠোর নিষেধাজ্ঞা জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত, চীন ও তুরস্কের কেনাকাটা কমে আসছে, শিপিংব্যয় বেড়েছে এবং ‘শ্যাডো ফ্লিট’ কার্যত ধীর হয়ে পড়েছে। এর ফলে রাশিয়ার তেল রপ্তানি মূল্য পড়ে যাচ্ছে এবং সরবরাহে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে—যা ক্রেমলিনকে নতুন চাপের মুখে ফেলেছে।

গানভরের ধাক্কা ও লুকয়েল-রসনেফটের আর্থিক ক্ষতি

১ ডিসেম্বর সুইস কোম্পানি গানভর ঘোষণা করে—সহ-প্রতিষ্ঠাতা টরবজর্ন টর্নকভিস্ট পদত্যাগ করছেন এবং নিজের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র লুকয়েলের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সম্পদ বিক্রি আটকে দেওয়ায় গানভর বাধ্য হয় পিছিয়ে যেতে। লুকয়েল ও রসনেফট—রাশিয়ার দুই প্রধান তেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান—এই ধাক্কায় বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য: ভারত-চীনসহ প্রধান ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, লুকয়েল বা রসনেফটের তেল বেচাকেনা সহজতর করা বিদেশি প্রতিষ্ঠানও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে পড়তে পারে। এতে ভারত ও চীনের মতো ক্রেতাদের ওপর চাপ স্পষ্ট। নভেম্বরের তুলনায় ভারতীয় রিফাইনারি গুলোর রাশিয়ান তেল কেনা হঠাৎ বেড়ে গেলেও এখন আবার তারা ক্রয় কমাতে শুরু করেছে। অনেক বেসরকারি রিফাইনারি ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞায় টার্গেট হওয়া সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কেনা বন্ধ করেছে।

রপ্তানি কমে ৩৯% পর্যন্ত নামার সম্ভাবনা

চীন, ভারত ও তুরস্ক—তিন দেশেই আমদানি কমায় কয়েক মাসের মধ্যে রাশিয়ার তেল রপ্তানি দৈনিক ১.৪ মিলিয়ন ব্যারেল কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে অক্টোবরে যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছিল তার প্রায় ৩৯% হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

The impact of Russian oil sanctions on energy markets - Atlantic Council

জাহাজ সংকট, রুট বদল ও বাড়তি খরচ

গ্রিক জাহাজগুলো রাশিয়ার ইউরালস গ্রেডের তেল পরিবহনে আগ্রহ হারাচ্ছে। শ্যাডো ফ্লিটের ট্যাংকারগুলোর কার্যক্রমও এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। যারা এখনও তেল বহন করছে, তারা দীর্ঘ রুট ব্যবহার করছে বা মাঝপথে তেল স্থানান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে—যার ফলে পরিবহন ব্যয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। ব্রেন্টের তুলনায় রাশিয়ার তেল এখন প্রায় ২০ ডলার পর্যন্ত ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে।

শ্যাডো ট্রেডিংয়ের নতুন পথ, কিন্তু ঝুঁকি রয়ে গেছে

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে লুকয়েল ও রসনেফট তৃতীয় পক্ষ—টাটনেফট, মোরএক্সপোর্ট, রুসএক্সপোর্টের মতো কম পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছে। এরা আবার ছাড়ে সেই তেল ভারতের রিফাইনারিগুলোর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে নিষিদ্ধ তেলকে ‘ডিনায়েবল’ রাখা সম্ভব হলেও বাজারে ছাড় আরও বাড়ছে।

ইউক্রেনের ড্রোন হামলা: রিফাইনারি উৎপাদন ৭-১০% কমতে পারে

ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা এখন আরও সুনির্দিষ্ট। একই রিফাইনারিতে প্রতি দুই-তিন সপ্তাহ পরপর আঘাত হানায় মেরামত ধীর হচ্ছে। এবার তারা প্রধান ইউনিট নয়, বরং জটিল সেকেন্ডারি ইউনিট লক্ষ্য করছে—যেগুলো চালাতে পশ্চিমা প্রযুক্তি লাগে। পাশাপাশি জ্বালানী ডিপো, লোডিং টার্মিনাল এমনকি শ্যাডো-ফ্লিট ট্যাংকারও টার্গেটে পড়ছে। এতে রাশিয়ার মোট রিফাইনারি উৎপাদন ৭-১০% কমে যেতে পারে।

বাজারে বাড়তি চাপ: তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা

রাশিয়া রিফাইনারিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরও অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করলে বিশ্ববাজারে সরবরাহ অতিরিক্ত বেড়ে যাবে। আগামী বছর চাহিদার তুলনায় তিন গুণ বেশি বাড়বে সরবরাহ—এমন পূর্বাভাস রয়েছে। ওপেক+ দেশগুলো (রাশিয়াসহ) যথেষ্ট কাটছাঁট না করলে দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে।

ক্রেমলিনে অস্বস্তি, কিন্তু বিকল্প নেই

রপ্তানি কমে যাওয়া ও দাম পড়ে যাওয়া—দুই দিক থেকেই চাপে রাশিয়া। সাবেক রাশিয়ান জ্বালানি নির্বাহী সের্গেই ভাকুলেঙ্কো বলেন, “তারা অস্বস্তিতে… কিন্তু কিছু করার তেমন সুযোগ নেই।” এই পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিকভাবে একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে, কারণ ইউক্রেন যেমন দুর্বল হাতে আছে, তেমনি এখন রাশিয়াও চাপে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জাপানে স্ট্যান্ড-আপ কমেডির জোয়ার: বিদেশি ও দ্বিভাষী শিল্পীদের হাতে নতুন হাসির পথ

রাশিয়ার ওপর নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: তেলের বাজারে ধাক্কা ও চাপ বাড়ছে

০৭:২১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কঠোর নিষেধাজ্ঞা জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত, চীন ও তুরস্কের কেনাকাটা কমে আসছে, শিপিংব্যয় বেড়েছে এবং ‘শ্যাডো ফ্লিট’ কার্যত ধীর হয়ে পড়েছে। এর ফলে রাশিয়ার তেল রপ্তানি মূল্য পড়ে যাচ্ছে এবং সরবরাহে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে—যা ক্রেমলিনকে নতুন চাপের মুখে ফেলেছে।

গানভরের ধাক্কা ও লুকয়েল-রসনেফটের আর্থিক ক্ষতি

১ ডিসেম্বর সুইস কোম্পানি গানভর ঘোষণা করে—সহ-প্রতিষ্ঠাতা টরবজর্ন টর্নকভিস্ট পদত্যাগ করছেন এবং নিজের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র লুকয়েলের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সম্পদ বিক্রি আটকে দেওয়ায় গানভর বাধ্য হয় পিছিয়ে যেতে। লুকয়েল ও রসনেফট—রাশিয়ার দুই প্রধান তেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান—এই ধাক্কায় বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য: ভারত-চীনসহ প্রধান ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, লুকয়েল বা রসনেফটের তেল বেচাকেনা সহজতর করা বিদেশি প্রতিষ্ঠানও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে পড়তে পারে। এতে ভারত ও চীনের মতো ক্রেতাদের ওপর চাপ স্পষ্ট। নভেম্বরের তুলনায় ভারতীয় রিফাইনারি গুলোর রাশিয়ান তেল কেনা হঠাৎ বেড়ে গেলেও এখন আবার তারা ক্রয় কমাতে শুরু করেছে। অনেক বেসরকারি রিফাইনারি ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞায় টার্গেট হওয়া সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কেনা বন্ধ করেছে।

রপ্তানি কমে ৩৯% পর্যন্ত নামার সম্ভাবনা

চীন, ভারত ও তুরস্ক—তিন দেশেই আমদানি কমায় কয়েক মাসের মধ্যে রাশিয়ার তেল রপ্তানি দৈনিক ১.৪ মিলিয়ন ব্যারেল কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে অক্টোবরে যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছিল তার প্রায় ৩৯% হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

The impact of Russian oil sanctions on energy markets - Atlantic Council

জাহাজ সংকট, রুট বদল ও বাড়তি খরচ

গ্রিক জাহাজগুলো রাশিয়ার ইউরালস গ্রেডের তেল পরিবহনে আগ্রহ হারাচ্ছে। শ্যাডো ফ্লিটের ট্যাংকারগুলোর কার্যক্রমও এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। যারা এখনও তেল বহন করছে, তারা দীর্ঘ রুট ব্যবহার করছে বা মাঝপথে তেল স্থানান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে—যার ফলে পরিবহন ব্যয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। ব্রেন্টের তুলনায় রাশিয়ার তেল এখন প্রায় ২০ ডলার পর্যন্ত ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে।

শ্যাডো ট্রেডিংয়ের নতুন পথ, কিন্তু ঝুঁকি রয়ে গেছে

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে লুকয়েল ও রসনেফট তৃতীয় পক্ষ—টাটনেফট, মোরএক্সপোর্ট, রুসএক্সপোর্টের মতো কম পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছে। এরা আবার ছাড়ে সেই তেল ভারতের রিফাইনারিগুলোর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে নিষিদ্ধ তেলকে ‘ডিনায়েবল’ রাখা সম্ভব হলেও বাজারে ছাড় আরও বাড়ছে।

ইউক্রেনের ড্রোন হামলা: রিফাইনারি উৎপাদন ৭-১০% কমতে পারে

ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা এখন আরও সুনির্দিষ্ট। একই রিফাইনারিতে প্রতি দুই-তিন সপ্তাহ পরপর আঘাত হানায় মেরামত ধীর হচ্ছে। এবার তারা প্রধান ইউনিট নয়, বরং জটিল সেকেন্ডারি ইউনিট লক্ষ্য করছে—যেগুলো চালাতে পশ্চিমা প্রযুক্তি লাগে। পাশাপাশি জ্বালানী ডিপো, লোডিং টার্মিনাল এমনকি শ্যাডো-ফ্লিট ট্যাংকারও টার্গেটে পড়ছে। এতে রাশিয়ার মোট রিফাইনারি উৎপাদন ৭-১০% কমে যেতে পারে।

বাজারে বাড়তি চাপ: তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা

রাশিয়া রিফাইনারিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরও অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করলে বিশ্ববাজারে সরবরাহ অতিরিক্ত বেড়ে যাবে। আগামী বছর চাহিদার তুলনায় তিন গুণ বেশি বাড়বে সরবরাহ—এমন পূর্বাভাস রয়েছে। ওপেক+ দেশগুলো (রাশিয়াসহ) যথেষ্ট কাটছাঁট না করলে দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে।

ক্রেমলিনে অস্বস্তি, কিন্তু বিকল্প নেই

রপ্তানি কমে যাওয়া ও দাম পড়ে যাওয়া—দুই দিক থেকেই চাপে রাশিয়া। সাবেক রাশিয়ান জ্বালানি নির্বাহী সের্গেই ভাকুলেঙ্কো বলেন, “তারা অস্বস্তিতে… কিন্তু কিছু করার তেমন সুযোগ নেই।” এই পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিকভাবে একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে, কারণ ইউক্রেন যেমন দুর্বল হাতে আছে, তেমনি এখন রাশিয়াও চাপে।