সেনেগালের দুর্নীতি দমন অভিযান ঘিরে তীব্র বিতর্ক
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট বাসিরু দিওমায়ে ফায়ে এবং প্রধানমন্ত্রী উসমানে সোঙ্কো ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশজুড়ে দুর্নীতি দমন অভিযান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পাঁচজন সাবেক মন্ত্রীসহ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল-এর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমালোচকেরা বলছেন, এই অভিযানে মূলত বিরোধী পক্ষকেই টার্গেট করা হচ্ছে।
কারা অভিযানের আওতায়?
কোভিড–উনিশ মহামারির সময় সরকারি তহবিল অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাত এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে সাল সরকারের সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ম্যাকি সাল-এর ছেলে আমাদু সাল দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর দুলাভাই আমাদু মানসুর ফায়ে — সাবেক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী — গত মে মাসে গ্রেপ্তার হন।
সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় ফায়ে–সোঙ্কো
নতুন সরকার দুর্নীতি দমনে একাধিক আইন পাশ করেছে। জালিয়াতি ও দুর্নীতি দমনের জাতীয় দপ্তর সংস্কার করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার “হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা আইন” চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও বেশি রাজনৈতিক পদধারী ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের সম্পদ ঘোষণা করতে হচ্ছে।
সরকারের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ওমর সাল বলেন, এসব আইন রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক বৈষম্য কমাতে সহায়তা করছে। নাগরিক সমাজের নেতা আলিউন তিনে মনে করেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি দমনের রাজনৈতিক ইচ্ছা স্পষ্ট।

গণমাধ্যমে চাপ বাড়ার অভিযোগ
তবে সমালোচকেরা বলছেন, দুর্নীতি দমনের উদ্যোগের আড়ালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমছে। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে চাওয়ায় দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে আরও বহু সাংবাদিক আটক হয়েছেন। দেশের তিনশো একাশিটি গণমাধ্যমকে ‘প্রেস কোড’ অমান্য করার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিরোধীদের অভিযোগ — ‘উইচ হান্ট’
গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশই বিরোধী বা সাল সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বিরোধী শিবির দাবি করছে, এই অভিযান মূলত রাজনৈতিক প্রতিশোধ। দুই হাজার তেইশ সালে সোঙ্কো নিজেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং নির্বাচন শুরুর মাত্র দশ দিন আগে মুক্তি পান। বিশ্লেষকদের মতে, অভিযোগগুলো সরকারি অডিট রিপোর্ট থেকে এসেছে; ফলে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাই প্রমাণ করবে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
দুর্নীতি দমন জনসমর্থন পেলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। সাল সরকারের সময়ে যেসব কোম্পানি বড় অবকাঠামো ও খনিজ খাতে কাজ করেছে, তারা চুক্তি পুনর্বিবেচনা, পুনরায় দর-কষাকষি বা নতুন কর দাবির মুখে পড়তে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার তেল ও গ্যাস কোম্পানি উডসাইড দুই হাজার উনিশ থেকে দুই হাজার বাইশ সময়কার বকেয়া কর নিয়ে সেনেগাল সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে।
সরকারের ব্যাখ্যা
সরকারের দাবি, দুর্নীতি দমন দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও স্বচ্ছ করছে। এতে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। ডাকার-এর এক উদ্যোক্তা বলেন, দুর্নীতি কমাতে সরকার সফল হলে সব সেক্টরেই বিনিয়োগ বাড়বে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















