সারাক্ষণ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের কিছু দুগ্ধ খামারিরা বার্ড ফ্লু ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠছেন কারন তারা তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা দেখছেন। বিশেষ করে গ্রামীন এলাকাগুলিতে এই ক্ষতির প্রভাব বেশী পড়বে বলে তারা মনে করছেন।
সেন্ট্রাল মিশিগানের ছোট শহর মার্টিনে সরকার নির্দেশিত বাধা-নিষেধ গুলো মানতে বলছেন যা কোভিড ১৯ এর সময়কে মনে করিয়ে দেয়।
মার্চে, যুক্তরাষ্ট্রে গবাদি পশুতে প্রথম এটি সনাক্ত হয়। ৪ টি কেসের মধ্যে ২ টি মানুষের ভিতরে সনাক্ত হয়েছে। যে ১২ টি রাজ্যে গবাদিপশুর শরীরে বার্ড ফ্লু কনফার্ম হয়েছে, সেখানে অধিক সংখ্যক মানুষের উপরে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন রাজ্যে পরীক্ষা ভিন্নতর উপায়ে করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই রোগটি কোভিড১৯ এর চেয়েও ভয়াবহতার রুপ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঝুকি বাড়ার সাথে সাথে অন্য রাজ্যগুলো মিশিগানের উপরে লক্ষ্য রাখছে। কারন তারা সেখানে তাদের সফলতা ও বিফলতা দুটোই দেখা হচ্ছে।
মিশিগানের কয়েক ডজন উৎপাদনকারী, সরকারী স্বাস্থ্যবিভাগের সদস্য এবং গবেষকদের সাথে কথা বলে ডাটা সংগ্রহ করতে পারলেও এখানকার খুব কম সংখ্যক কৃষকই এই ইন্টাভিউতে অংশগ্রহণ করে।
মিশিগানের মার্নের একজন দুগ্ধ খামারী ব্রায়ান ডিমান বলেন, রাজ্যের সাড়া দেওয়ার নমূনা আর প্রাদূর্ভাব কোভিড-১৯ এর কথা মনে করিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, এই বসন্তে অনেক ডেইরি মালিকরা ফেডারেল থেকে তেমন কোনো সাড়া পাননি । যেমন তাদের কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রটেকটিভ ইকুপমেন্ট সরবরাহ করা হয়নি। তিনি এখনো তার কর্মচারীদেরকোনো ধরনের মাস্কও সরবরাহ করেননি কারন তিনি এখনো জানেননা যে, এইন রোগটি কেমন করে ছড়ায়।
ব্রায়ান ডিমান তার পোল্ট্রি ফার্মের সামনে, মিশিগান।
নতুন কোন কিছু নেই
টিম বোরিং, মিশিগানের কৃষি পরিচালক বলেন, সামাজিক লজ্জা এবং অর্থনৈতিক কারনে কৃষকরা গরুকে বার্ড ফ্লু পরীক্ষা করাচ্ছেননা। অথচ, এটি দেশের ৬ষ্ঠ বৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। নানা কারনে সামনের দিনগুলিতে মিশিগানে এটি ঠেকানোতে চ্যালেঞ্জ নেমে আসতে পারে।
এই রাজ্যে গত ৯ জুলাই শেষবারের মতো একটি রোগাক্রান্ত গরুর পালে পরীক্ষা চালায় এবং সেখানে ২৬ তম গরুতে এর পজিটিভ রেজাল্ট আসে।যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, অন্য আরো ৫টি রাজ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালানো হয় এবং কনফার্ম কেস ও পাওয়া যায়। মার্চ মাস থেকে ১৪০টি গরুর পালে পরীক্ষায় পজিটিভ সনাক্ত হয়। রোগ সনাক্ত হওয়া গরুর উপরে গবেষণার জন্যে মিশিগান ফার্মগুলোকে $২৮,০০০ পর্যন্ত অনুদান দেয়া হয়েছে।
নতুন হুমকি
USD ’ র তদন্তে দেখা গেছে, পোল্ট্রি এন্ড ক্যাটল এ কর্মরত প্রায় ২০০ মানুষ বার্ড ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়েছে। অন্য রাজ্যের পশুবিদরা রোগ ছড়িয়ে যাবার ঝুঁকি কতটা তা জানার জন্যে মিশিগানের কেসগুলো ট্র্যাক করেছে।
নর্থ ক্যারোলিনার স্টেট ভেরিনারিয়ান মাইক মার্টিন বলেন,“ মিশিগান তাদের পরীক্ষা চালানোর কাজটি খুব ভালো করছেন এবং তারা সেটাও চেষ্টা করছেন যে রোগটা কোথায়।”
মিশিগানের মার্টিনের একটি দুগ্ধ খামারের প্রবেশ পথে সতর্ক বার্তা
প্রধান রাস্তা
দুগ্ধ খামারিরা শংকিত যে তাদের গরুগুলো এরপরেই আক্রান্ত হতে পারে। এখনো তারা জানেনা কিভাবে সেটি তারা মোকাবেলা করবেন।
ডাফ চেপিন, মিশিগানের রেমাসের একজন দুগ্ধ খামারী বলেন, তিনি তার কর্মচারীদের এই ভাইরাসের ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন। তিনি কর্মচারীদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বলিত আই প্রটেকটিভ গিয়ার ব্যবহার করাতে চেষ্টা করছেন।
আইওনা কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা চাদ শ’ বলেন, রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ ইতোমধ্যে বার্ড ফ্লু সিম্পটম নিয়ে আছেন যারা এখনো দিনে তিনবার পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
কঠিন পরীক্ষা
USDA ডাটা দেখায় যে, আইডাহো এবং কলোরাডোর পরেই মিশিগান হচ্ছে তৃতীয় রাজ্য যেখানে গবাদি পশুতে সর্বোচ্চ সনাক্ত হয়েছে। এই রাজ্যে ৬.৫ মিলিয়ন মুরগীকে গত এপ্রিলে ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন গত এপ্রিলে দুগ্ধজাত বাছুরকে নেগেটিভ সনাক্ত হলে পরে অন্য রাজ্যে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছে।
মিশিগান মে মাসে আরো নানারকম কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে খামারে ভিজিটরদের জন্যে লগ বই রাখা, পশদের স্থানান্তরের জন্যে ব্যবহৃত ট্রাকগুলিকে জীবানুমূক্ত করা এবং এছাড়াও আরো অনেক ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।
কলোরাডো জুলাইয়ের ৩ তারিখে প্রথম মানব কেস রিপোর্ট করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার মডার্নাকে $১৭৬ মিলিয়ন ডলার পুরুষ্কৃত করেছে যাতে সে মানুষের বার্ড ফ্লু নিরাময়ের জন্যে একটি নতুন ট্যাব /দরজা খুলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রী টম ভিলসাক বলেন, দুই ডজনের উপরে কোম্পানী গবাদি পশুর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্যে কাজ করছে যেহেতু সারাদেশে ১৪০ টিরও বেশী গরুর পালে ইতোমধ্যে পজিটিভ ধরা পরেছে।