সত্যেন্দ্রকুমার বসু
রাজাও সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তখনই মশালের আলোতে পরিব্রাজককে অভ্যর্থনা করে এক মহামূল্য আচ্ছাদনে সজ্জিত জমকালো তাঁবুতে স্থাপন করলেন। এই বলে অভ্যর্থনা করলেন, ‘গুরুদেব! আপনার এ শিষ্য আপনার আগমন বার্তা শুনে আহ্লাদে আহার-নিদ্রা ত্যাগ করেছে। কোন্ পথে আসছেন শুনে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আজ রাত্রেই আপনি পৌঁছবেন।
তাই আমার স্ত্রী, সন্তানরা আর আমি সকলেই জেগে থেকে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে করতে আপনার অপেক্ষা করছি।’একটু পরেই মহারানী জন-পঞ্চাশেক দাসীর সঙ্গে এসে পড়লেন। রাত্রি যখন প্রভাত হয়ে এল, তখন হিউএনচাঙ আর সহ্য করতে না পেরে একটু বিশ্রামের অবকাশ প্রার্থনা করলেন।
হিউএনচাঙের প্রতি রাজার আচরণ এই নমুনামাফিকই চলল।একদিকে যেমন রাজা ধর্মগুরুর চরণে উপহার আর সম্মানের স্রোত নিবেদন করতে থাকলেন, আর রাজ্যের মহা মহা ভিক্ষু সন্ন্যাদীদের ধর্মগুরুর আদেশানুবর্তী করে রেখে দিলেন, তেমনি আবার এত বড় পণ্ডিতকে হাতে পেয়ে তাঁকে নিজ পারিবারিক গুরু আর তুরফানের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অগ্রণী করে এখানেই রেখে দেবার মতলব করলেন।
ধর্মগুরু বৃথাই অনুযোগ করলেন, ‘আমি সম্মানলাভ করবার জন্যে এই যাত্রা আরম্ভ করি নি। আমাদের দেশে শাস্ত্রগুলি অসম্পূর্ণ দেখে আমার দুঃখ হয়, আর সেই জন্যেই শাস্ত্রোদ্ধার করবার জন্যে আমি মৃত্যুভয় তুচ্ছ-জ্ঞান করে, অজ্ঞাত ধর্মমতগুলি জানবার জন্যে পশ্চিমদেশের অভিমুখে যাত্রা করেছি, আমার ইচ্ছা দৈব অমৃতবাণীর ধারা কেবল ভারতবর্ষেই সিঞ্চিত না হয়ে চীনেরও সর্বত্র সিঞ্চিত হোক। হে রাজন, আপনার সংকল্প ত্যাগ করুন, আর আমাকে এত বেশী বন্ধুতার সম্মানদানে বিরত থাকুন।’
(চলবে)