আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
এই সময়ে আমার পেছন দিকে কুকুরের গর্গর আওয়াজ আর মানুষের পায়ের শব্দ পেলুম। ফিরে দেখলুম, একটি শক্তসমর্থ চেহারার ছোকরা বুড়োর দিকে হে’টে আসছে। বুঝলুম, এই-ই হল এই গোরুর পালের জুড়ি রাখাল।
এক-টুকরো যবের রুটি চিবোতে-চিবোতে ছোকরা জিজ্ঞেস করল:
‘ব্যাপার কী, আলেক্সান্দর-জ্যাঠা?’
‘যাচ্ছিল এখেন দে’। তা শুধলো, আলেক্সান্দ্রঙ্কা ইস্টিশন কোন্ মুখে? বলচে দেমেনেভো থেকে নাকি আসচে।’
রুটি চিবনো বন্ধ করে ছেলেটা এবার আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
‘তা কী করি হয়?’ বলল ও।
‘আমিও তো তাই ভাবচি। দেমেনেভো তো ইস্টিশনের একেবারে গায়েই। আলেক্সান্দ্র কা-দেমেনেভো ও তো একই জায়গা। ছোকরা কিসের খোঁজে ইদিকে
এয়েচে কইতে পার?’
‘এরে গাঁয়ে পাঠানো দরকার,’ ছেলেটা শান্তভাবে পরামর্শ দিল। ‘মিলিটারি ছাউনির নোকেরাই খুঁজে বের করুক এখন। এর পেটে অনেক কথা আচে, বুইলে!’
যদিও আমার কোনো ধারণা ছিল না এই মিলিটারি ঘাঁটিটা কী ধরনের আর তারা কীভাবেই বা আমার সবকিছু খাঁজে বের করবে, তবু আমার গ্রামে যাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। আর তা অন্য কোনো কিছুর জন্যে না হলেও অন্তত এই কারণে যে ওই অঞ্চলের গ্রামগুলোর অবস্থা ছিল সচ্ছল আর গ্রামগুলো ছিল বিক্ষুব্ধও। কাজেই আর সময় নষ্ট না করে আমি পাশের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জঙ্গলের মধ্যে সোধিয়ে গেলুম।
রাখাল ছেলেটা আমার সঙ্গে এ’টে উঠতে না-পেরে শিগগিরই পিছিয়ে পড়ল, কিন্তু ওর শয়তান কুকুরটা ইতিমধ্যে বার দুই আমার পায়ে কামড় বসাতে কসুর করল না। কিন্তু কুকুরের কামড়েও কোনো ব্যথা বোধ স্বলুম না সে-সময়ে। তাছাড়া অত জোরে ছোটবার সময়ে গাছের ডালপালা চাবুকের মতো শপাং-শপাং করে গায়ে-মুখে-মাথায় পড়ছিল, মুখে যেন ধারালো নখ বিধিয়ে দিচ্ছিল ডালগুলো আর হঠাৎ-হঠাৎ গজিয়ে ওঠা মাটির ঢিবি আর কাটা গাছের গাড়িগুলো পায়ে পায়ে বাধা দিচ্ছিল। তবু আমার কোনো কিছুতেই খেয়াল ছিল না।