মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ভারতের কাস্ট গনণা কি সে দেশের রাজনীতির আরেক অধ্যায়ের সূচনা?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ১১.০০ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ভারতের সাংবিধানিক সমতা‑সত্ত্বেও বর্ণ (কাস্ট) রীতি সামাজিক পরিচয়, অর্থনৈতিক সুযোগ ও বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে এখনো গভীরভাবে কার্যকর। ২০২৪‑২৫ এর রাজনৈতিক পরিবেশে ওবিসি, দলিত ও অন্যান্য বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভোট‑ব্যবহার, সংরক্ষণ নীতি এবং জাতিগত (কাস্ট) গণনার সিদ্ধান্ত নতুন করে রাজনীতির সমীকরণ পালটে দিচ্ছে।

বর্ণ ও ভোটব্যাংক: ওবিসিদের লড়াই

• অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) ভারতের বৃহত্তম একক ভোট‑গোষ্ঠী—জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ। বিজেপি‑র সাম্প্রতিক সাফল্যের বড় অংশই ওবিসি ও ‘এক্সট্রিমলি ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস’ (EBC) উপ‑গোষ্ঠীকে কাছে টেনে নেওয়ার ফল। ২০১৪‑তে দলটি ওবিসি ভোটের ৩০ শতাংশ, ২০১৯‑এ ৪১ শতাংশ ও ২০২৪‑এ প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি অংশ পায়।

• বিরোধী ‘INDIA’ জোট ও আঞ্চলিক মণ্ডল‑দলগুলো (যেমন বিহারের আরজেডি‑জেডিইউ, উত্তর প্রদেশের এসপি) পুনরায় ওবিসি‑কেন্দ্রিক রাজনীতিতে জোর দিচ্ছে। বিহারের নিজস্ব কাস্ট সার্ভে দেখিয়েছে, রাজ্যের ৬৩ শতাংশই ওবিসি, যা সংরক্ষণ বাড়ানোর দাবিকে আরও জোরালো করেছে।

জাতিগত গণনা: কেন নতুন ঢেউ উঠেছে

• ১৯৩১‑এর পর প্রথমবার জাতীয় জনগণনায় পূর্ণাঙ্গ বর্ণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভূচিত্রে বড় আনছে। তথ্যমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের ভাষ্য, এই পদক্ষেপ ‘সামাজিক‑অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে’।

• বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ণাঙ তথ্য কনস্টিটিউশনে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ‑সীমার প্রশ্ন, নির্বাচন কেন্দ্র পুনর্নির্ধারণ ও নারী‑সংরক্ষণ বাস্তবায়নের গতিপথ বদলাতে পারে।

দলীয় কৌশল ও নির্বাচনী বাস্তবতা

• ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের এক্সিট‑পোল দেখায়, বিজেপি‑নেতৃত্বাধীন এনডিএ এখনো ওবিসিদের সর্বাধিক সমর্থন ধরে রেখেছে; তবে কংগ্রেস‑সহ INDIA ব্লকও নিজেরা ভোট‑ভাগ বাড়িয়েছে, ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র।

• সাংবাদিক‑গবেষক মিলান বৈষ্ণবের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ‘পিছিয়ে‑পড়া শ্রেণির লড়াই’ হবে আগামী নির্বাচনগুলোর মূল চাপের বিন্দু; বিজেপি ও বিরোধী জোট দু’পক্ষই এই গ্রুপ নির্ণায়ক ভেবে কৌশল সাজাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

মিলান বৈষ্ণব, কার্নেগি এনডাওমেন্ট:

“বিজেপির ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি ওবিসি‑দের আনুগত্য; তবে নতুন কাস্ট গণনা সেই সমীকরণ বদলে দিতে পারে, কারণ সংখ্যা জানা মানে দাবিও বাড়বে।”

রাহুল বর্মা, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ:

“জাতীয় কাস্ট গণনা হলে বিজেপির ‘এক হিন্দু’ প্ল্যাটফর্মের উপরে আবার বর্ণীয় স্বার্থ মূর্ত হবে; বিরোধীরা ওই তথ্য দিয়ে সংরক্ষণ‑বন্টন পুনর্বিন্যাসের তাগিদ তুলতে পারে।”

অশ্বিনী বৈষ্ণব, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী:

“দেশ এগিয়ে যাচ্ছে—কাস্ট গণনা সমাজের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট করবে এবং নীতিনির্ধারণ আরও তথ্যভিত্তিক হবে।”

উপসংহার

ভারতের বর্ণব্যবস্থা রাজনীতিতে অতীতেও কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তবে আসন্ন জাতীয় কাস্ট গণনা বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ওবিসি এখনো বিজেপির জন্য বড় শক্তি, তবু পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, সংরক্ষণ‑সীমা বিতর্ক ও আঞ্চলিক মণ্ডল‑দলগুলোর জোট‑রাজনীতি মিলিয়ে ভোটব্যবহারের গতিপথ দ্রুত পাল্টাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—‘সংখ্যা বিচারে শুধু নয়- ন্যায়’ বনাম ‘জাতীয় ঐক্য’-র দ্বৈরথ ভারতীয় গণতন্ত্রের পরবর্তী অধ্যায় নির্ধারণ করবে এ গননা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024