নেপালের কিংবদন্তি পর্বতারোহী কামি রিতা শেরপা আবারও ইতিহাস গড়েছেন। তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে ৩১তম বারের মতো আরোহণ করে নিজের আগের রেকর্ডই ভেঙেছেন।

৫৫ বছর বয়সী এই শেরপা মঙ্গলবার (স্থানীয় সময় ভোর ৪টায়) ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দলের গাইড হিসেবে ৮,৮৪৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শৃঙ্গে পৌঁছান।

‘এভারেস্ট ম্যান‘ নামে পরিচিত কামি রিতা

“কামি রিতা শেরপার আলাদা করে পরিচিতির প্রয়োজন নেই। তিনি শুধু নেপালের পর্বতারোহী নায়ক নন, বরং এভারেস্টের প্রতীক হিসেবেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত,” এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তার অভিযান সংগঠক প্রতিষ্ঠান সেভেন সামিট ট্রেকস।

তিনি প্রথমবার এভারেস্ট জয় করেন ১৯৯৪ সালে একটি বাণিজ্যিক অভিযানের গাইড হিসেবে। এরপর প্রায় প্রতি বছরই তিনি শৃঙ্গ জয় করেছেন। এমনকি ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে দুইবার করে আরোহণ করেছেন।

প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেললেন পাসাং দাওয়াকে

এভারেস্টে সবচেয়ে বেশি বারের আরোহণের দৌড়ে তার সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক নেপালি শেরপা পাসাং দাওয়া, যিনি এখন পর্যন্ত ২৯ বার শৃঙ্গ জয় করেছেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহেই তিনি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠেছিলেন।

“এটা শুধু কাজ” — বলছেন কামি রিতা

গত বছর মে মাসে ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কামি রিতা বলেন, “এই রেকর্ড নিয়ে আমি খুশি, কিন্তু রেকর্ড তো একদিন না একদিন ভেঙেই যায়। আমার বেশি খুশি লাগে এই ভেবে যে, আমার কাজের মাধ্যমে নেপালকে সারা বিশ্বে তুলে ধরা যাচ্ছে।”

ধর্মীয় আচার ও পর্বতজীবনের ঝলক

এই মাসের শুরুতে কামি রিতা তার এভারেস্ট যাত্রার কিছু মুহূর্ত সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। এর মধ্যে ছিল পূজা নামক একটি তিব্বতি বৌদ্ধ আচার, যা সফল ও নিরাপদ আরোহণের জন্য প্রার্থনার অংশ।

বিদেশিদের মধ্যেও রেকর্ড

কামি রিতার এই অসামান্য সাফল্যের ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ব্রিটিশ পর্বতারোহী কেনটন কুল ১৯তম বার এভারেস্ট জয় করেন, যা একজন বিদেশি (শেরপা নন) হিসেবে সর্বোচ্চ আরোহণের রেকর্ড।

এ মৌসুমে ৫০০ জনেরও বেশি আরোহন

চলতি পর্বতারোহণ মৌসুমে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ এবং তাদের গাইডরা সফলভাবে এভারেস্টে আরোহণ করেছেন। নেপালের পর্যটন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর শুধু এভারেস্ট নয়, অন্যান্য শৃঙ্গসহ মোট ১,০০০-এরও বেশি আরোহণের অনুমতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

ভিড় ও পরিবেশগত ঝুঁকি

বছরের পর বছর পর্বত আরোহণের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এভারেস্টে অতিরিক্ত ভিড় এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। গত বছর একটি নিয়ম চালু করা হয় যাতে প্রত্যেক অভিযাত্রীকে নিজের মলমূত্র পরিষ্কার করে বেজ ক্যাম্পে নিয়ে আসতে হয়, যাতে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা যায়।

এই নীতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চূড়ান্তভাবে এসব নিয়ম কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে।