ইউক্রেনীয়-আমেরিকান কবি ইলিয়া কামিনস্কির ২০১৯ সালের মহাকাব্যিক কাব্যগ্রন্থ ডেফ রিপাবলিক আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ চলমান, আর তার নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রও বহু সময়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত। এই বইকে কেন্দ্র করে আগামী ২৯ আগস্ট লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে শুরু হচ্ছে মঞ্চনাটক, যেখানে বধির ও শ্রবণক্ষম অভিনেতারা একসঙ্গে উপস্থাপন করবেন গল্পটি—ইশারাভাষা, কথ্য ইংরেজি, ক্যাপশন ও নীরবতার সমন্বয়ে।
ভিডিও সাক্ষাৎকারে কামিনস্কি কথা বলেছেন যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের সহনশীলতা, সংকটের সময় কবিতার শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে।
ডেফ রিপাবলিকের গল্প ও তাৎপর্য
বইটিতে এক গর্ভবতী নারী ও তার স্বামী এক বধির ছেলেকে সৈন্যের গুলিতে নিহত হতে দেখেন। এর প্রতিবাদে পুরো শহর একযোগে কর্তৃপক্ষের কথা না শোনার সিদ্ধান্ত নেয়। কামিনস্কির মতে, এটি ভিকটিমহুডের নয়, বরং টিকে থাকার গল্প।
তিনি নিজের ইউক্রেন সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন—৮০ বছরের বেশি বয়সী চাচা-চাচিকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা এবং বোমা হামলার পরও সকালের নাস্তার আমন্ত্রণ। তার মতে, এটাই জীবনের দৃঢ়তা—যুদ্ধের মধ্যেও প্রেম, যত্ন ও দৈনন্দিনতা বজায় রাখা।

যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তার ধারণা
সোভিয়েত যুগের নির্যাতন থেকে পরিবারসহ পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া কামিনস্কি এখন প্রাকৃতিকভাবে নাগরিক হলেও দেশটিকে তিনি জটিল মনে করেন। ইতিহাস জানার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। ৯০-এর দশকের পাঠ্যপুস্তক যেমন উজ্জ্বল ছিল, এখন তার অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে।
মঞ্চনাটকে রূপান্তর
তার মতে, নিজের শিল্প থেকে অন্যরা নতুন শিল্প তৈরি করলে তা কেবল কৃতজ্ঞতার বিষয় নয়, শেখারও সুযোগ। নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে তিনি নতুন বইয়ের জন্য অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
এ নাটকে অনেক বধির অভিনয়শিল্পী রয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য মেডিকেড তহবিল কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, প্রতিবন্ধী শরীরকে হাসপাতালের সীমানা থেকে রাজনৈতিক সংখ্যালঘু হিসেবে দেখার ধারণা তার বইয়ের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

কবিতার শক্তি ও ধীরতার প্রয়োজন
কামিনস্কি মনে করেন, সবকিছু যখন দ্রুতগতিতে চলছে, তখন কবিতা আমাদের ধীর হতে ও মনোযোগী হতে শেখায়। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দেখেছেন—বোমা আশ্রয়ে কেউ উপন্যাস পড়ছে না, কিন্তু অনেকে কবিতা আবৃত্তি করছে।
ইউক্রেনীয় কবিতার অনুবাদ ও প্রচার
তিনি বর্তমানে ইউক্রেনীয় কবিতা অনুবাদ করে আমেরিকান পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের খবর এখন আগের মতো মনোযোগ পাচ্ছে না, তাই ছোট পরিসরে হলেও তিনি মনোযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন বইয়ের তিন-চতুর্থাংশ প্রস্তুত থাকলেও তা শিগগিরই প্রকাশ হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখনকার সময় নিয়ে লিখলে তা হয়তো ডেফ রিপাবলিক-এর মতো উচ্চস্বরে নয়, বরং নীরবতার ভেতরে মনোযোগ জাগানোর জন্য হবে—যাতে দ্রুতগতির পৃথিবীতে কিছুটা থামা যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















