০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৃজনশীল পন্থার আহ্বান

জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক
বুধবার মস্কোতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত ও রাশিয়ার উচিত আরও সৃজনশীল ও নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা। তিনি এই বক্তব্য দেন ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশন ফর ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক, টেকনোলজিক্যাল অ্যান্ড কালচারাল কো-অপারেশন (IRIGC-TEC)-এর বৈঠকে, যেখানে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-রাশিয়া জ্বালানি বাণিজ্যের ওপর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে উদ্বেগ
জয়শঙ্কর জানান, ভারত-রাশিয়ার বাণিজ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির কারণে দুই দেশের বাণিজ্যের আকার বেড়েছে ঠিকই তবে ভারতের রপ্তানি স্থবির রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে, কিন্তু ভারতের রপ্তানি ছিল মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার। গত চার বছরে দুই দেশের বাণিজ্য পাঁচগুণ বেড়েছে, কিন্তু ঘাটতি বেড়েছে নয়গুণ — ৬.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫৮.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। জয়শঙ্করের মতে, এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করা জরুরি।

সমাধানের প্রস্তাব
বাণিজ্য ঘাটতি কাটাতে তিনি কয়েকটি প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমানো, লজিস্টিক সমস্যা সমাধান, আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডর, নর্দার্ন সি রুট ও চেন্নাই – ভ্লাদিভোস্তক করিডর সক্রিয় করা এবং অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা সহজ করা। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি
রাশিয়ার প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্টুরভ, যিনি বৈঠকে সহ-সভাপতিত্ব করেন, বলেন যে মস্কো ভারতের জ্বালানির চাহিদা পূরণ অব্যাহত রাখবে। তিনি জানান, রাশিয়া অপরিশোধিত তেল, তেলজাত পণ্য, থার্মাল ও কোকিং কয়লা সরবরাহ চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি ভারতের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে।

ইইউএফটিএ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ভারত-ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি। বুধবার এই চুক্তির প্রাথমিক কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জোর দেন যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত।

তার মতে, দুই দেশের সহযোগিতা বাড়াতে হলে বাণিজ্যকে বৈচিত্র্যময় করা, যৌথ উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং দক্ষ জনশক্তির গতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের পুরনো পথে আটকে থাকা যাবে না। আরও বেশি এবং ভিন্নভাবে কাজ করাই আমাদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।”

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৃজনশীল পন্থার আহ্বান

০৩:৪৫:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক
বুধবার মস্কোতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত ও রাশিয়ার উচিত আরও সৃজনশীল ও নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা। তিনি এই বক্তব্য দেন ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশন ফর ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক, টেকনোলজিক্যাল অ্যান্ড কালচারাল কো-অপারেশন (IRIGC-TEC)-এর বৈঠকে, যেখানে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-রাশিয়া জ্বালানি বাণিজ্যের ওপর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে উদ্বেগ
জয়শঙ্কর জানান, ভারত-রাশিয়ার বাণিজ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির কারণে দুই দেশের বাণিজ্যের আকার বেড়েছে ঠিকই তবে ভারতের রপ্তানি স্থবির রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে, কিন্তু ভারতের রপ্তানি ছিল মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার। গত চার বছরে দুই দেশের বাণিজ্য পাঁচগুণ বেড়েছে, কিন্তু ঘাটতি বেড়েছে নয়গুণ — ৬.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫৮.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। জয়শঙ্করের মতে, এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করা জরুরি।

সমাধানের প্রস্তাব
বাণিজ্য ঘাটতি কাটাতে তিনি কয়েকটি প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমানো, লজিস্টিক সমস্যা সমাধান, আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডর, নর্দার্ন সি রুট ও চেন্নাই – ভ্লাদিভোস্তক করিডর সক্রিয় করা এবং অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা সহজ করা। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি
রাশিয়ার প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্টুরভ, যিনি বৈঠকে সহ-সভাপতিত্ব করেন, বলেন যে মস্কো ভারতের জ্বালানির চাহিদা পূরণ অব্যাহত রাখবে। তিনি জানান, রাশিয়া অপরিশোধিত তেল, তেলজাত পণ্য, থার্মাল ও কোকিং কয়লা সরবরাহ চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি ভারতের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে।

ইইউএফটিএ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ভারত-ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি। বুধবার এই চুক্তির প্রাথমিক কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জোর দেন যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত।

তার মতে, দুই দেশের সহযোগিতা বাড়াতে হলে বাণিজ্যকে বৈচিত্র্যময় করা, যৌথ উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং দক্ষ জনশক্তির গতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের পুরনো পথে আটকে থাকা যাবে না। আরও বেশি এবং ভিন্নভাবে কাজ করাই আমাদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।”