০৮:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী বিমানবাহিনী ভারতের: নিউজউইক ভারতের ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশীকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণঘাতী শঙ্খিনী সাপ ( ব্যান্ডেড ক্রাইট): রঙিন সৌন্দর্যের আড়ালে লুকানো মারাত্মক বিষ সৃজনশীলতা ও সাহিত্যের উৎসব: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে লিট-কার্নিভাল ২০২৫ হাঙ্গেরির রাজনৈতিক সংকট, ভিক্টর অরবান ও প্রোপাগান্ডার চ্যালেঞ্জ  কুড়িগ্রামের নয়টি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষায় কেউ পাস করেনি রাফাহ খুলতে ইসরায়েল–মিসরের সমন্বয়, অস্থির যুদ্ধবিরতির মাঝে সতর্ক অগ্রগতি ভারতের কুইক-কমার্সে জেপ্টোর ৪৫০ মিলিয়ন ডলার—গতি নয়, লাভজনক ‘ডেনসিটি’ই লক্ষ্য” কেয়া পায়েলের জীবন কাহিনী: শৈশব থেকে অভিনয়ের সাফল্যের পথে অবকাশ শেষে রবিবার খুলছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত- প্রথম কার্যদিবসে সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাহায্যের মুখোশে স্বার্থ: নতুন যুগে আমেরিকার আর্থিক কূটনীতি

নতুন যুগের সূচনা

কেউ কল্পনাও করেনি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেবেন। অথচ ১৪ অক্টোবর তিনি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলির সঙ্গে দেখা করবেন — একই মতাদর্শের সহযোগী হিসেবে। উদ্দেশ্য, আর্জেন্টিনার জন্য এক বিশাল আর্থিক উদ্ধারপ্যাকেজের বিস্তারিত আলোচনা।

ইতোমধ্যেই আমেরিকা দেশটিকে ২০ বিলিয়ন ডলারের ‘সোয়াপ লাইন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে — যা আর্জেন্টিনার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের প্রায় অর্ধেক। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো। কারণ মাইলির মুদ্রা সংস্কার নীতির ফলে পেসোর মান ব্যাপকভাবে পড়ে গিয়েছিল। ট্রেজারি বিভাগ এমনকি ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো ‘এক্সচেঞ্জ স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ ব্যবহারের কথাও ভাবছে।

সহায়তা নয়, স্বার্থকেন্দ্রিক আর্থিক কূটনীতি

যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে নতুন সতর্কতা দিলেন ট্রাম্প

দ্বিতীয় মেয়াদের আট মাস পূর্ণ না হতেই ট্রাম্প মূলত আমেরিকার আর্থিক কূটনীতির ধরনটাই পাল্টে দিয়েছেন। দশকের পর দশক ধরে আমেরিকার নীতিনির্ধারকেরা দরিদ্রতা দূরীকরণ ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব বৃদ্ধির নামে বিভিন্ন সংস্থা, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে সাহায্য পাঠাতেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সেই তহবিলের অর্ধেক বন্ধ করেছে, বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপে ফেলেছে এবং তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক উদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই নতুন নীতি এক কথায় স্বার্থনির্ভর। এখন অর্থ যাবে কেবল সেই দেশগুলোর কাছে — যাদের শাসকগোষ্ঠী ট্রাম্পের রাজনৈতিক মিত্র, অথবা যেসব দেশকে চীনের প্রভাববলয় থেকে টেনে আনা সম্ভব। দরিদ্রতা দূরীকরণের চেয়ে এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে ভূরাজনৈতিক লাভ।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ

এপ্রিল মাসে আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসান্ট জানিয়েছিলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সংস্কার করলে আমেরিকা সহায়তা বন্ধ করবে না। এতে সংস্থাগুলির কিছুটা স্বস্তি আসে। কিন্তু এখন আবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে — হোয়াইট হাউসের দাবিগুলো বাস্তবসম্মত নয়।

বেসান্ট চান, আইএমএফ তার মোট ঋণ কার্যক্রম কমাক এবং চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হ্রাসে সহায়তা করুক — যা বাস্তবে কার্যকর করতে বহু বছর লাগবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট আইএমএফ | বাণিজ্য |  বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

পুনর্গঠিত তিন সংস্থা

ট্রাম্প প্রশাসন তিনটি প্রধান সংস্থাকে নিজেদের নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী সাজিয়েছে:

১. ইউএসএইড (USAID): জুলাইয়ে এর শেষ তহবিলও স্টেট ডিপার্টমেন্টে হস্তান্তর করা হয়, যেখানে সাহায্যবিরোধী কর্মকর্তাদের এক ক্ষুদ্র দল সেই অর্থের নতুন ব্যবহার খুঁজছে।
২. মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (MCC): এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকলেও এখন প্রায় এক-চতুর্থাংশ আকারে পুনরায় চালু হয়েছে। নতুন প্রধান হয়েছেন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস ল্যান্ডাউ।
৩. ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (DFC): বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ দেয় এই প্রতিষ্ঠান। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে গঠিত DFC-এর ঋণসীমা ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা বেসরকারি বিনিয়োগে গঠিত। এখন তা ২৫০ বিলিয়নে বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে, যা কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষ।

এই সংস্থাগুলো আর অনুদান নয় — প্রায় বাজারদর সুদে ঋণ বা ইকুইটি বিনিয়োগ দেবে। যে প্রকল্পে লাভ নেই, তা সরকারি অর্থের অপচয় হিসেবে গণ্য হবে।

আর্জেন্টিনাকে বিশেষ সহায়তা

মাইলির সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এখন নিঃশর্ত সমর্থন জানাচ্ছে। আমেরিকা সাধারণত আইএমএফের মাধ্যমে সহযোগিতা দেয়, কিন্তু এবার নিজে দ্বিপাক্ষিকভাবে এগিয়ে এসেছে। যদিও আর্জেন্টিনা এখনো বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ দ্রুত শেষ করছে, ফলে এই সহায়তা টেকসই হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা চালিয়ে যাবে চীন

চীনকে চাপে রাখার কৌশল

চীন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা — ২০১৬ সালের পর থেকে দেশটি ১৮৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে উদ্ধার তহবিলে, যা আইএমএফের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ফলে বহু দেশ চীনের কাছে ঋণগ্রস্ত, আর এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য শুল্ক–জোট তৈরি কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমেরিকা এখন আর্জেন্টিনাকে বলেছে, তারা ১৮ বিলিয়ন ডলারের চীনা সোয়াপ লাইন বাতিল করুক এবং একই সঙ্গে চীনে সয়াবিন বিক্রি বন্ধ করুক। ট্রেজারি কর্মকর্তাদের মতে, এই ধরনের আরও কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বেইলআউট পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

“আমেরিকা ফার্স্ট অপরচুনিটি ফান্ড”

স্টেট সেক্রেটারি মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে তিন বিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে: এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে চীনা অংশীদারদের প্রভাব আছে। পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরে টুনা মাছ শিকার ও লাতিন আমেরিকায় খনিজ সম্পদে চীনা প্রবেশ বন্ধে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।

দেশীয় শিল্পনীতির সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির যোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, বিদেশি সহায়তাও এখন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে কাজে লাগবে। এজন্য জ্বালানি, খনিজ ও প্রতিরক্ষা শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

Dólar HOY: cotización del dólar oficial y precios del martes 5 de agosto -  TyC Sports

জাম্বিয়ায় খনি দ্রুত পুনরায় চালু করতে প্রণোদনা, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার সঙ্গে খনিজ চুক্তি, এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে কপার খনির জন্য রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প — সবই এই নীতির অংশ। এমনকি গ্রিনল্যান্ডে খনিজ অনুসন্ধান ও ড্রোনে ব্যবহৃত ব্রাশলেস মোটর উৎপাদন বাড়াতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সীমিত সামর্থ্য

এই পরিকল্পনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চীনের মাত্র দুটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বিদেশি ঋণ বইয়ের মূল্য ২০২৪ সালে ছিল ৫০৬ বিলিয়ন ডলার — যেখানে আমেরিকা সর্বোচ্চ ৩০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মতে, ট্রাম্পের এই উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়ন হলে ব্যয় হবে বিরাট। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, সময়ের সঙ্গে ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবতার মুখোমুখি হবে — তখন হয়তো এইসব বৃহৎ বেইলআউট পরিকল্পনা বাদ দিয়ে খনিজ প্রকল্পেই সীমিত থাকবে মনোযোগ।

তবে যদি তিনি থামেন না এবং DFC–এর সম্প্রসারণ অনুমোদিত হয়, তাহলে ট্রাম্প যুগে আমেরিকার বিদেশি অনুদান বাইডেন আমলের চেয়েও বেশি হবে — যা তাঁর নিজের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির সমর্থকদের কাছে বেমানানই মনে হবে।

এইভাবে আমেরিকার আর্থিক কূটনীতি এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে — যেখানে মানবিক সহায়তার জায়গা নিচ্ছে কৌশলগত স্বার্থ, আর সাহায্যের ভাষা বদলে যাচ্ছে মুনাফার ভাষায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী বিমানবাহিনী ভারতের: নিউজউইক

সাহায্যের মুখোশে স্বার্থ: নতুন যুগে আমেরিকার আর্থিক কূটনীতি

০৪:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

নতুন যুগের সূচনা

কেউ কল্পনাও করেনি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেবেন। অথচ ১৪ অক্টোবর তিনি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলির সঙ্গে দেখা করবেন — একই মতাদর্শের সহযোগী হিসেবে। উদ্দেশ্য, আর্জেন্টিনার জন্য এক বিশাল আর্থিক উদ্ধারপ্যাকেজের বিস্তারিত আলোচনা।

ইতোমধ্যেই আমেরিকা দেশটিকে ২০ বিলিয়ন ডলারের ‘সোয়াপ লাইন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে — যা আর্জেন্টিনার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের প্রায় অর্ধেক। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো। কারণ মাইলির মুদ্রা সংস্কার নীতির ফলে পেসোর মান ব্যাপকভাবে পড়ে গিয়েছিল। ট্রেজারি বিভাগ এমনকি ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো ‘এক্সচেঞ্জ স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ ব্যবহারের কথাও ভাবছে।

সহায়তা নয়, স্বার্থকেন্দ্রিক আর্থিক কূটনীতি

যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে নতুন সতর্কতা দিলেন ট্রাম্প

দ্বিতীয় মেয়াদের আট মাস পূর্ণ না হতেই ট্রাম্প মূলত আমেরিকার আর্থিক কূটনীতির ধরনটাই পাল্টে দিয়েছেন। দশকের পর দশক ধরে আমেরিকার নীতিনির্ধারকেরা দরিদ্রতা দূরীকরণ ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব বৃদ্ধির নামে বিভিন্ন সংস্থা, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে সাহায্য পাঠাতেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সেই তহবিলের অর্ধেক বন্ধ করেছে, বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপে ফেলেছে এবং তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক উদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই নতুন নীতি এক কথায় স্বার্থনির্ভর। এখন অর্থ যাবে কেবল সেই দেশগুলোর কাছে — যাদের শাসকগোষ্ঠী ট্রাম্পের রাজনৈতিক মিত্র, অথবা যেসব দেশকে চীনের প্রভাববলয় থেকে টেনে আনা সম্ভব। দরিদ্রতা দূরীকরণের চেয়ে এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে ভূরাজনৈতিক লাভ।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ

এপ্রিল মাসে আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসান্ট জানিয়েছিলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সংস্কার করলে আমেরিকা সহায়তা বন্ধ করবে না। এতে সংস্থাগুলির কিছুটা স্বস্তি আসে। কিন্তু এখন আবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে — হোয়াইট হাউসের দাবিগুলো বাস্তবসম্মত নয়।

বেসান্ট চান, আইএমএফ তার মোট ঋণ কার্যক্রম কমাক এবং চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হ্রাসে সহায়তা করুক — যা বাস্তবে কার্যকর করতে বহু বছর লাগবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট আইএমএফ | বাণিজ্য |  বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

পুনর্গঠিত তিন সংস্থা

ট্রাম্প প্রশাসন তিনটি প্রধান সংস্থাকে নিজেদের নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী সাজিয়েছে:

১. ইউএসএইড (USAID): জুলাইয়ে এর শেষ তহবিলও স্টেট ডিপার্টমেন্টে হস্তান্তর করা হয়, যেখানে সাহায্যবিরোধী কর্মকর্তাদের এক ক্ষুদ্র দল সেই অর্থের নতুন ব্যবহার খুঁজছে।
২. মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (MCC): এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকলেও এখন প্রায় এক-চতুর্থাংশ আকারে পুনরায় চালু হয়েছে। নতুন প্রধান হয়েছেন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস ল্যান্ডাউ।
৩. ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (DFC): বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ দেয় এই প্রতিষ্ঠান। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে গঠিত DFC-এর ঋণসীমা ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা বেসরকারি বিনিয়োগে গঠিত। এখন তা ২৫০ বিলিয়নে বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে, যা কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষ।

এই সংস্থাগুলো আর অনুদান নয় — প্রায় বাজারদর সুদে ঋণ বা ইকুইটি বিনিয়োগ দেবে। যে প্রকল্পে লাভ নেই, তা সরকারি অর্থের অপচয় হিসেবে গণ্য হবে।

আর্জেন্টিনাকে বিশেষ সহায়তা

মাইলির সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এখন নিঃশর্ত সমর্থন জানাচ্ছে। আমেরিকা সাধারণত আইএমএফের মাধ্যমে সহযোগিতা দেয়, কিন্তু এবার নিজে দ্বিপাক্ষিকভাবে এগিয়ে এসেছে। যদিও আর্জেন্টিনা এখনো বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ দ্রুত শেষ করছে, ফলে এই সহায়তা টেকসই হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা চালিয়ে যাবে চীন

চীনকে চাপে রাখার কৌশল

চীন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা — ২০১৬ সালের পর থেকে দেশটি ১৮৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে উদ্ধার তহবিলে, যা আইএমএফের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ফলে বহু দেশ চীনের কাছে ঋণগ্রস্ত, আর এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য শুল্ক–জোট তৈরি কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমেরিকা এখন আর্জেন্টিনাকে বলেছে, তারা ১৮ বিলিয়ন ডলারের চীনা সোয়াপ লাইন বাতিল করুক এবং একই সঙ্গে চীনে সয়াবিন বিক্রি বন্ধ করুক। ট্রেজারি কর্মকর্তাদের মতে, এই ধরনের আরও কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বেইলআউট পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

“আমেরিকা ফার্স্ট অপরচুনিটি ফান্ড”

স্টেট সেক্রেটারি মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে তিন বিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে: এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে চীনা অংশীদারদের প্রভাব আছে। পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরে টুনা মাছ শিকার ও লাতিন আমেরিকায় খনিজ সম্পদে চীনা প্রবেশ বন্ধে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।

দেশীয় শিল্পনীতির সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির যোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, বিদেশি সহায়তাও এখন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে কাজে লাগবে। এজন্য জ্বালানি, খনিজ ও প্রতিরক্ষা শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

Dólar HOY: cotización del dólar oficial y precios del martes 5 de agosto -  TyC Sports

জাম্বিয়ায় খনি দ্রুত পুনরায় চালু করতে প্রণোদনা, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার সঙ্গে খনিজ চুক্তি, এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে কপার খনির জন্য রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প — সবই এই নীতির অংশ। এমনকি গ্রিনল্যান্ডে খনিজ অনুসন্ধান ও ড্রোনে ব্যবহৃত ব্রাশলেস মোটর উৎপাদন বাড়াতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সীমিত সামর্থ্য

এই পরিকল্পনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চীনের মাত্র দুটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বিদেশি ঋণ বইয়ের মূল্য ২০২৪ সালে ছিল ৫০৬ বিলিয়ন ডলার — যেখানে আমেরিকা সর্বোচ্চ ৩০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মতে, ট্রাম্পের এই উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়ন হলে ব্যয় হবে বিরাট। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, সময়ের সঙ্গে ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবতার মুখোমুখি হবে — তখন হয়তো এইসব বৃহৎ বেইলআউট পরিকল্পনা বাদ দিয়ে খনিজ প্রকল্পেই সীমিত থাকবে মনোযোগ।

তবে যদি তিনি থামেন না এবং DFC–এর সম্প্রসারণ অনুমোদিত হয়, তাহলে ট্রাম্প যুগে আমেরিকার বিদেশি অনুদান বাইডেন আমলের চেয়েও বেশি হবে — যা তাঁর নিজের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির সমর্থকদের কাছে বেমানানই মনে হবে।

এইভাবে আমেরিকার আর্থিক কূটনীতি এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে — যেখানে মানবিক সহায়তার জায়গা নিচ্ছে কৌশলগত স্বার্থ, আর সাহায্যের ভাষা বদলে যাচ্ছে মুনাফার ভাষায়।