নেতৃত্বহীনতার চাপে ভেঙে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী প্রধানশিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১১৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৩টিতেই বছরের পর বছর প্রধানশিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে। এই নেতৃত্বহীনতা শিক্ষার মান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে, অভিযোগ স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের।
সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে প্রশাসন ও পাঠদানের ভার
প্রধানশিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষকরা এখন ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক’ হিসেবে দ্বৈত দায়িত্ব পালন করছেন। একদিকে প্রশাসনিক কাজ, অন্যদিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান—এই দুই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। এর ফলে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাতেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
পরমেশ্বরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মরশেদা আখতার জানান, প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন উপজেলা অফিসের সরকারি কাজ সামলাতে হয় তাঁকে, এতে বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকে।
একইভাবে বাগরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মুসলিমা আখতার বলেন, মাসের ৩ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত তাঁকে উপজেলা অফিসে থাকতে হয়। এতে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
লধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক শাহ আলম বলেন, অতিরিক্ত প্রশাসনিক কাজের চাপে শ্রেণিকক্ষে সময় দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বছরের পর বছর শূন্য পদে বিদ্যালয়
টেকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক সেলেহা আখতার জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে কোনো স্থায়ী প্রধানশিক্ষক নেই। মাত্র চারজন শিক্ষক দিয়ে পুরো স্কুল চালানো দুঃসহ হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান স্পষ্টভাবে নিচে নেমে গেছে।”
অভিভাবক রাবিউল ইসলাম, যার সন্তান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, বলেন, “একজন শিক্ষককে একসঙ্গে একাধিক ক্লাস নিতে হয়। এতে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
প্রশাসনিক জটেই মূল সংকট
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই সংকটের মূল কারণ কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক জটিলতা। প্রধানশিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি একটি জাতীয় বিষয় হওয়ায় স্থানীয়ভাবে শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব নয়।
সোনারগাঁ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে পদোন্নতির অনুমোদন না দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ স্থানীয় শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব নয়। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।”
দ্রুত সমাধানের দাবি অভিভাবকদের
স্থানীয় জনগণ ও অভিভাবকরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি—যোগ্য শিক্ষকদের পদোন্নতি ও নিয়োগের মাধ্যমে শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করা হোক, যাতে শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক হয় এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মান সুরক্ষিত থাকে।
#সোনারগাঁও #শিক্ষা_সংকট #প্রাথমিক_বিদ্যালয় #প্রধানশিক্ষক_সংকট #নারায়ণগঞ্জ #বাংলাদেশ_শিক্ষা