কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম শিক্ষক সংকট
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইইউ) এখন এক ভয়াবহ একাডেমিক সংকটে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি বিভাগে তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক গুণগত নিশ্চয়তা সেল (IQAC)-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন মাত্র ৪০৬ জন, যেখানে অনুমোদিত পদ সংখ্যা ১,০৮০। অর্থাৎ ৬৭৪টি পদ এখনো শূন্য।
কয়েকজন শিক্ষকই সামলাচ্ছেন বহু কোর্স
শিক্ষকের ঘাটতির কারণে অনেক বিভাগে মাত্র দুই থেকে তিনজন শিক্ষক একাধিক কোর্স পড়াচ্ছেন। এই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর পাঠদান সংক্রান্ত নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাইন আর্টস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফার্মেসি, মার্কেটিং এবং কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম।

প্রতিটি বিভাগে ছয় থেকে সাতটি ব্যাচ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হচ্ছেন ভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে ক্লাস নিতে, যার ফলে মূল বিষয়ের গভীরতা ও ব্যবহারিক শেখার সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নতুন নিয়োগে স্থবিরতা
চলতি বছরের শুরুতে কর্তৃপক্ষ ২১টি বিভাগে ৫৯টি নতুন শিক্ষক পদ সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ইউজিসির আর্থিক অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রক্রিয়াটি থমকে যায়।
শেষ পর্যন্ত মাত্র ছয়টি পদে নিয়োগের অনুমোদন মেলে, যা ঘোষণার তুলনায় অতি অল্প। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক স্বীকার করেছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর এবং প্রশাসন ইউজিসির কাছে নতুন অনুমোদনের জন্য কাজ করছে।
অন্যদিকে, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল “আর্থিক ছাড়পত্র ছাড়াই”। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইয়াকুব আলী অভিযোগ করেছেন, তাঁকে এই সিদ্ধান্তে পরামর্শ করা হয়নি। এসব মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ প্রশাসনের সমন্বয় হীনতার চিত্র তুলে ধরে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের সতর্কতা
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একযোগে দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, অব্যাহত সংকট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মান নষ্ট করবে এবং স্বীকৃতি হারানোর ঝুঁকি তৈরি করবে।

ফার্মেসি বিভাগের এক চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, “যদি এই অবস্থা চলতেই থাকে, আমাদের ডিগ্রির কোনো মূল্য থাকবে না—দেশে বা বিদেশে চাকরির বাজারে। আমরা প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছি না, কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করছি।”
ইউজিসির নীরবতা ও শিক্ষার্থীদের হতাশা
এ বিষয়ে এখনো ইউজিসি কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
অপর্যাপ্ত শিক্ষক ও বন্ধ থাকা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসের কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে—একদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জরুরি প্রয়োজন—এই দ্বন্দ্বেই আটকে আছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ।
#ট্যাগ: #ইসলামী_বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষক_সংকট #শিক্ষা_সংকট #ইউজিসি #কুষ্টিয়া
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















