০৮:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ১৬৩ শিক্ষক শাস্তির মুখে

সিলেট জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৩ জন শিক্ষক অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছেন। এই অনিয়মের কারণে জেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও প্রভাব

সিলেট জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অস্বাভাবিক অনুপস্থিতি শুধু শিক্ষার মানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: কোন সময়ে নেওয়া হয়েছে

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।

উপজেলাভিত্তিক অনুপস্থিতির চিত্র

সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত শিক্ষক পাওয়া গেছে বিশ্বনাথ উপজেলায়—২৪ জন।

No photo description available.

এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় অনুপস্থিতির সংখ্যা হলো:

  • • বিয়ানীবাজার: ২০ জন
  • • সিলেট সদর: ১৬ জন
  • • বালাগঞ্জ: ১১ জন
  • • ফেঞ্চুগঞ্জ: ৪ জন
  • • গোলাপগঞ্জ: ১২ জন
  • • জকিগঞ্জ: ১৬ জন
  • • কানাইঘাট: ৭ জন
  • • জৈন্তাপুর: ৪ জন
  • • গোয়াইনঘাট: ১০ জন
  • • কোম্পানীগঞ্জ: ১ জন
  • • দক্ষিণ সুরমা: ১৮ জন
  • • ওসমানীনগর: ২০ জন

বিদেশে যাওয়া ও নিয়োগের জটিলতা

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অনেক শিক্ষক কোনো পদত্যাগপত্র না দিয়েই বিদেশে কাজ বা ভ্রমণ ভিসায় চলে গেছেন। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসব পদ আনুষ্ঠানিকভাবে শূন্য ঘোষণা না হওয়ায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি শূন্যপদ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত শিক্ষকদের শাস্তির নির্দেশ

শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যাখ্যা

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, “কোনো শিক্ষক অনুমতি ছাড়া টানা ৬০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে জেলায় ৭৮৮টি প্রধান শিক্ষক ও ৭৫০টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষায় জনবল সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

শিক্ষার মানে মারাত্মক প্রভাব

দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অভাব, অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরও অবনতির দিকে যাবে। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞানভিত্তিক বিকাশে বড় বাধা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষায় বৈষম্য বাড়তে পারে।

 

#সিলেট_শিক্ষক_সংকট #প্রাথমিক_শিক্ষা #বিনা_অনুমতিতে_অনুপস্থিতি #শিক্ষা_অফিস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ১৬৩ শিক্ষক শাস্তির মুখে

১২:৫৪:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

সিলেট জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৩ জন শিক্ষক অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছেন। এই অনিয়মের কারণে জেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও প্রভাব

সিলেট জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অস্বাভাবিক অনুপস্থিতি শুধু শিক্ষার মানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: কোন সময়ে নেওয়া হয়েছে

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।

উপজেলাভিত্তিক অনুপস্থিতির চিত্র

সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত শিক্ষক পাওয়া গেছে বিশ্বনাথ উপজেলায়—২৪ জন।

No photo description available.

এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় অনুপস্থিতির সংখ্যা হলো:

  • • বিয়ানীবাজার: ২০ জন
  • • সিলেট সদর: ১৬ জন
  • • বালাগঞ্জ: ১১ জন
  • • ফেঞ্চুগঞ্জ: ৪ জন
  • • গোলাপগঞ্জ: ১২ জন
  • • জকিগঞ্জ: ১৬ জন
  • • কানাইঘাট: ৭ জন
  • • জৈন্তাপুর: ৪ জন
  • • গোয়াইনঘাট: ১০ জন
  • • কোম্পানীগঞ্জ: ১ জন
  • • দক্ষিণ সুরমা: ১৮ জন
  • • ওসমানীনগর: ২০ জন

বিদেশে যাওয়া ও নিয়োগের জটিলতা

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অনেক শিক্ষক কোনো পদত্যাগপত্র না দিয়েই বিদেশে কাজ বা ভ্রমণ ভিসায় চলে গেছেন। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসব পদ আনুষ্ঠানিকভাবে শূন্য ঘোষণা না হওয়ায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি শূন্যপদ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত শিক্ষকদের শাস্তির নির্দেশ

শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যাখ্যা

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, “কোনো শিক্ষক অনুমতি ছাড়া টানা ৬০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে জেলায় ৭৮৮টি প্রধান শিক্ষক ও ৭৫০টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষায় জনবল সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

শিক্ষার মানে মারাত্মক প্রভাব

দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অভাব, অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরও অবনতির দিকে যাবে। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞানভিত্তিক বিকাশে বড় বাধা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষায় বৈষম্য বাড়তে পারে।

 

#সিলেট_শিক্ষক_সংকট #প্রাথমিক_শিক্ষা #বিনা_অনুমতিতে_অনুপস্থিতি #শিক্ষা_অফিস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট