জাতীয় পর্যায়ের রক্তচাপ পরীক্ষা অভিযানের চমকপ্রদ ফলাফল
সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিচালিত এক দেশব্যাপী উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণ অভিযানে দেখা গেছে, দেশের প্রতি পাঁচজন নাগরিকের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই জানেন না যে তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বাইরে।
স্বাস্থ্য ও প্রতিরোধ মন্ত্রণালয় (MoHAP) পরিচালিত এই অভিযানে ১ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে পরীক্ষা করা হয়, যা মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫৭ শতাংশ বেশি। অভিযানের তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ড. নাদা হাসান আল মারজুকি, অ-সংক্রামক রোগ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. বুথাইনা বিন বেলাইলা, এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিনিধি।
চিকিৎসাধীনদের মধ্যেও নিয়ন্ত্রণহীন রক্তচাপ
অভিযানের ফলাফলে আরও উঠে এসেছে যে, ইতিমধ্যে চিকিৎসাধীন প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ফলো-আপের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে। ড. নাদা আল মারজুকি বলেন, “এই জাতীয় অভিযান চিকিৎসাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা থেকে প্রতিরোধভিত্তিক পদ্ধতির দিকে রূপান্তরের এক বাস্তব উদাহরণ।”
তার মতে, এই কর্মসূচি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অ-সংক্রামক রোগে অকালমৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
জনস্বাস্থ্য: সম্মিলিত দায়িত্ব
ড. মারজুকি বলেন, “জনস্বাস্থ্য একটি সম্মিলিত জাতীয় অঙ্গীকার—এতে ফেডারেল, স্থানীয়, বেসরকারি ও সামাজিক সব পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “মাঠপর্যায়ের তথ্যকে কৌশলগত সূচকে রূপান্তর করার মাধ্যমে আমরা প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে পারি—যা বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করে।”
মূল পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ
ড. বুথাইনা বিন বেলাইলা জানান, স্ক্রিনিংয়ে অংশ নেওয়া ২১ শতাংশ ব্যক্তির রক্তচাপ স্বাভাবিক সীমার বাইরে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, চিকিৎসাধীন ২৯ শতাংশ রোগীর রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এটি প্রমাণ করে যে, নিয়মিত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণই রোগ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
পুষ্টি ও জীবনধারা নির্দেশনা
অভিযানটি শুধুমাত্র রক্তচাপ পরীক্ষা নয়, বরং উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের জন্য পুষ্টি, ব্যায়াম ও জীবনধারা সংশোধনের পরামর্শও দিয়েছে। এ কাজে অংশ নেয় আবুধাবি স্বাস্থ্য বিভাগ, এমিরেটস হেলথ সার্ভিসেস, দুবাই হেলথ অথরিটি, শারজাহ হেলথ অথরিটি, ড. সুলাইমান আল হাবিব মেডিকেল গ্রুপ, মেডিক্লিনিক গ্রুপ, অ্যাস্টার ডিএম হেলথকেয়ার, আমেরিকান হাসপাতাল, ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার এবং এনএমসি হেলথকেয়ার।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ধারাবাহিকতা
ড. বেলাইলা আরও জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক “মে মেজারমেন্ট মান্থ (MMM)” অভিযানে অংশ নিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক হাইপারটেনশন সোসাইটি পরিচালনা করে। এই উদ্যোগ এখন জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধের একটি মঞ্চে পরিণত হয়েছে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধি, চিকিৎসা নির্দেশিকা হালনাগাদ এবং বিশেষায়িত অ-সংক্রামক রোগ ক্লিনিক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বৈশ্বিক নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত
বছরের পর বছর ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় ইউএই এখন বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ দেশ, যেখানে বার্ষিক রক্তচাপ পরীক্ষার সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। অভিযানের শেষাংশে আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা ভবিষ্যতের টেকসই স্বাস্থ্য উদ্যোগের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
অভিযান শেষে প্রদর্শিত এক প্রামাণ্যচিত্রে দেশজুড়ে পরিচালিত সচেতনতা কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। পরিশেষে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সনদ ও সম্মাননা প্রদান করা হয়—যা জাতীয় ঐক্য ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতীক হিসেবে দেখা