চীন বৃহস্পতিবার বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। দেশটি জানিয়েছে, এই নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে, যা বৈশ্বিক শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার উদ্দেশ্যে। একই সঙ্গে চীন জানিয়েছে, বৈধ বাণিজ্য নির্বিঘ্ন রাখতে রপ্তানি অনুমোদনের প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুত করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী চীনের অবস্থান
চীনের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে চীন বৈধ পণ্যের প্রবাহ বজায় রাখতে সচেষ্ট, যা বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে এবং একতরফা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা সমস্যার সমাধানকে আরও জটিল করছে।
মার্কিন মন্তব্যের জবাবে চীনের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট (Scott Bessent) বিরল খনিজ রপ্তানির নিয়ন্ত্রণকে “চীন বনাম বিশ্ব” বলে উল্লেখ করে মিত্র দেশগুলোকে সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে চীনকে বাদ দিতে আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, চীন আগেও বলেছে, বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক প্রথার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সহায়ক।
চীনা বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ হে ওয়েইওয়েন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। চীনের নেওয়া পদক্ষেপ আইনসম্মত ও নিয়মভিত্তিক; এগুলো কোনোভাবেই ইচ্ছেমতো নয়।
সামরিক ব্যবহার প্রতিরোধ ও বৈধ বাণিজ্যের সুযোগ
হে ওয়েইওয়েন আরও বলেন, বিরল খনিজের সামরিক ব্যবহার ঠেকানো জরুরি, যাতে এগুলো কোনোভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে না যায়। তবে এর মানে এই নয় যে বেসামরিক ব্যবহারের জন্য রপ্তানি বন্ধ—বরং চীন বৈধ বাণিজ্যের জন্য প্রক্রিয়া সহজ করছে।
ইউরোপীয় কোম্পানির উদ্বেগ ও চীনের উত্তর
কিছু ইউরোপীয় কোম্পানির উৎপাদন বিলম্ব নিয়ে প্রশ্নে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (MOFCOM) মুখপাত্র হে ইয়ংচিয়ান বলেন, বিরল খনিজের দ্বৈত ব্যবহারিক (ডুয়াল ইউজ) প্রকৃতি রয়েছে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আইন অনুযায়ী রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা যৌক্তিক।
তিনি বলেন, নতুন নীতিগুলো কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের বিরুদ্ধে নয়। বৈধ ও বেসামরিক ব্যবহারের জন্য আবেদন করা হলে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ‘গ্রিন চ্যানেল’ পরিকল্পনা
হে ইয়ংচিয়ান জানান, চীন রপ্তানি অনুমোদনের প্রক্রিয়া আরও সহজ করছে, যাচাইয়ের সময় কমাচ্ছে এবং ‘জেনারেল লাইসেন্স’ সুবিধা চালুর মতো পদক্ষেপ বিবেচনা করছে। এতে বৈধ বাণিজ্য আরও দ্রুত সম্পন্ন হবে।
সমান আলোচনায় আগ্রহী চীন
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সচিব জানিয়েছেন, তিনি এশিয়া সফরের সময় চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেংএর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে হে ইয়ংচিয়ান বলেন, চীন সবসময় পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সমান আলোচনায় আগ্রহী।
চীনা বিশেষজ্ঞ হে ওয়েইওয়েন বলেন, ‘চীন দেখিয়েছে যে তারা আলোচনায় আন্তরিক। তবে এই আলোচনা হতে হবে সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে।’

বেইজিংয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা অধ্যয়ন কেন্দ্রের উপ-সভাপতি হু জিয়ানগুও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় ফিরতে হবে এবং আন্তরিকতা দেখাতে হবে। উভয় দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘প্রতারণামূলক কৌশল বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বন্ধ করতে হবে। বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতি একসঙ্গে কাজ না করলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আসবে না।’
চীন বলেছে, তাদের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়; বরং এটি আন্তর্জাতিক আইন, নিরাপত্তা ও অঙ্গীকার রক্ষার অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে উল্লেখ করে চীন জানিয়েছে, বৈধ বেসামরিক বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে এবং রপ্তানির প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হচ্ছে।
# চীন, বিরল_খনিজ, রপ্তানি_নিয়ন্ত্রণ, যুক্তরাষ্ট্র, বাণিজ্য_নীতিমালা, আন্তর্জাতিক_সম্পর্ক, গ্লোবাল_টাইমস, সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















