০৪:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
মিষ্টি না অতিমিষ্টি? মার্কিন শরতের এই জনপ্রিয় পানীয় ইউরোপে বিভাজন সৃষ্টি করেছে প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৯) দিল্লিতে তিন বছরে সবচেয়ে শীতল ও বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর, দূষণের ঘন কুয়াশায় শীতের শুরুতেই চিন্তা অন্ধকার থেকে আলোয়: স্যার অ্যান্থনি হপকিন্সের আত্মজয়ের গল্প ইনসাইড আউট ২’: ইতিহাসের শীর্ষে পিক্সার, ফিরে পেল আস্থা ‘দ্য লাইন অব বিউটি’–তে আশির দশকের রাজনীতি, সমকামী সংস্কৃতি ও শ্রেণি-অহমিকার মুখোমুখি লন্ডন মঞ্চ মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬১) সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ রণক্ষেত্রে (পর্ব-১১৬) পাকিস্তানে প্রথম চীনা নির্মিত সাবমেরিন- ২০২৬ সালে উদ্বোধন

ভ্যাটিকান মন্ত্রীর কক্সবাজার সফর: রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সংহতির বার্তা

মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে কার্ডিনাল মাইকেল ফেলিক্স চেরনি

ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্রের ‘ডিকাস্টারি ফর প্রমোটিং ইন্টিগ্রাল হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট’-এর প্রধান কার্ডিনাল মাইকেল ফেলিক্স চেরনি, এস. জে., কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। তিনি সেখানে চলমান মানবিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

তার সঙ্গে ছিলেন ফাদার জোসেফ সাভারিমাথু (কার্ডিনালের সচিব), ফ্রানচেসকা ডোনা (এশিয়া মূলভূখণ্ডের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী), আর্চবিশপ কেভিন স্টুয়ার্ট র‍্যান্ডাল (বাংলাদেশে অ্যাপোস্টলিক নানসিও), আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাউলাডার (চট্টগ্রামের আর্চবিশপ), বিশপ গেরভাস রোজারিও (এপিস্কোপাল কমিশন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিসের চেয়ারম্যান), এবং ফাদার লিটন গোমেস (কমিশনের সচিব)। তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও জরুরি সহায়তা কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মি. দাউদ জিবন দাস এবং ইআরপি-র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ

কার্ডিনাল চেরনি ও তার প্রতিনিধি দল কারিতাস বাংলাদেশের বাস্তবায়িত মানবিক কার্যক্রম সরেজমিনে দেখেন এবং রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। তারা ক্যাম্প ৪ ও ক্যাম্প ৪ এক্সটেনশনের প্রোটেকশন প্রোগ্রামের এমসিএসি সেন্টার পরিদর্শন করেন, যেখানে শিশুদের পাঠ ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।

এরপর তারা ক্যাম্প ৪-এর ওয়্যারহাউস-কাম-ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারে ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) কার্যক্রমের প্রদর্শনী ও কমিউনিটি পরামর্শ সভায় অংশ নেন। ক্যাম্প ১৯-এ গিয়ে আশ্রয় উন্নয়ন সামগ্রী (Shelter Upgradation Materials) বিতরণ করেন এবং রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য প্রার্থনা করেন। এছাড়া তারা বিএমজেড সেন্টারে গিয়ে নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে যুক্ত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।


শিশুদের উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা

এমসিএসি সেন্টারে শিশুদের আনন্দঘন অভ্যর্থনা কার্ডিনালকে মুগ্ধ করে। শিশুরা গান ও ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। তারা বলেন, “আপনি আমাদের দেখতে এসেছেন, এতে আমরা খুশি। আমাদের খেলাধুলা ও শেখার উপকরণে সাহায্য করুন, যাতে আমরা আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারি।”

কার্ডিনাল চেরনি শিশুদের প্রতি মমতা প্রকাশ করে বলেন, “তোমাদের হাসি ও সৃজনশীলতা আমাদের সকলের জন্য আশা ও জীবনের প্রতীক। এটি আমাদের সহানুভূতির সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।”

রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

ইআরপি ওয়্যারহাউসে আয়োজিত কমিউনিটি পরামর্শ সভায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা কারিতাস বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, “কারিতাস আমাদের পাশে আছে—ভালোবাসা, সেবা ও যত্নের মাধ্যমে। প্রতিদিন তারা আমাদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে সাহায্য করছে—পরিষ্কার পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন, আশ্রয় ও শিশুদের খেলার নিরাপদ স্থান দিয়ে। তারা কেবল বেঁচে থাকার জন্য নয়, আমাদের শক্তি ও আশার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন দুনিয়ার মনোযোগ হারিয়ে যায়, কারিতাস তখনও আমাদের পাশে থাকে।”


কার্ডিনালের মন্তব্য: ‘এটি কেবল সেবা নয়, এক সম্প্রদায়ের যত্ন’

কার্ডিনাল চেরনি বলেন, “ওয়াশ কার্যক্রমের সুফল আজীবন স্থায়ী। এখানে যা দেখছি তা কেবল মানবিক সেবা নয়, বরং এক ‘কমিউনিটি অব কেয়ার’—যেখানে মানুষ পরস্পরকে সাহায্য করে, যা কিছু আছে ভাগাভাগি করে এবং সহমর্মিতায় জীবনযাপন করে। এখানে যে আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে—স্বাস্থ্যবিধি, পারস্পরিক সম্মান ও পরিবেশের যত্ন—তা ভবিষ্যতের আশা। একদিন যখন তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে, এই মূল্যবোধই হবে শান্তি ও সুস্থতার ভিত্তি।”

পুনর্বাসনের আশায় মানবিক আহ্বান

কার্ডিনাল চেরনি বলেন, “শিবিরে প্রতিদিন মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তাদের প্রত্যাবর্তনের গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কারিতাসের কার্যক্রম তাদের শুধু সহায়তা দিচ্ছে না, বরং আশাবাদী ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে।”

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর উদ্দেশে আহ্বান জানান—“অর্থের ঘাটতি ও বিশ্বজোড়া উদাসীনতার সময়েও একে অপরের প্রতি সংহতি আরও বাড়ানো দরকার। সব সংগঠনকে—খ্রিষ্টান বা অন্য—মানুষের প্রকৃত প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং কষ্টে থাকা মানুষদের পাশে থাকতে হবে। আমরা সাহায্য করছি এবং এটি চালিয়ে যেতে হবে।”

শেষবার্তায় আশার প্রার্থনা

শেষে কার্ডিনাল চেরনি বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শক্তি ও সহনশীলতা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি প্রার্থনা করি, একদিন তারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শান্তি ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।”

মিষ্টি না অতিমিষ্টি? মার্কিন শরতের এই জনপ্রিয় পানীয় ইউরোপে বিভাজন সৃষ্টি করেছে

ভ্যাটিকান মন্ত্রীর কক্সবাজার সফর: রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সংহতির বার্তা

০৮:২১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে কার্ডিনাল মাইকেল ফেলিক্স চেরনি

ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্রের ‘ডিকাস্টারি ফর প্রমোটিং ইন্টিগ্রাল হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট’-এর প্রধান কার্ডিনাল মাইকেল ফেলিক্স চেরনি, এস. জে., কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। তিনি সেখানে চলমান মানবিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

তার সঙ্গে ছিলেন ফাদার জোসেফ সাভারিমাথু (কার্ডিনালের সচিব), ফ্রানচেসকা ডোনা (এশিয়া মূলভূখণ্ডের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী), আর্চবিশপ কেভিন স্টুয়ার্ট র‍্যান্ডাল (বাংলাদেশে অ্যাপোস্টলিক নানসিও), আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাউলাডার (চট্টগ্রামের আর্চবিশপ), বিশপ গেরভাস রোজারিও (এপিস্কোপাল কমিশন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিসের চেয়ারম্যান), এবং ফাদার লিটন গোমেস (কমিশনের সচিব)। তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও জরুরি সহায়তা কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মি. দাউদ জিবন দাস এবং ইআরপি-র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ

কার্ডিনাল চেরনি ও তার প্রতিনিধি দল কারিতাস বাংলাদেশের বাস্তবায়িত মানবিক কার্যক্রম সরেজমিনে দেখেন এবং রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। তারা ক্যাম্প ৪ ও ক্যাম্প ৪ এক্সটেনশনের প্রোটেকশন প্রোগ্রামের এমসিএসি সেন্টার পরিদর্শন করেন, যেখানে শিশুদের পাঠ ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।

এরপর তারা ক্যাম্প ৪-এর ওয়্যারহাউস-কাম-ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারে ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) কার্যক্রমের প্রদর্শনী ও কমিউনিটি পরামর্শ সভায় অংশ নেন। ক্যাম্প ১৯-এ গিয়ে আশ্রয় উন্নয়ন সামগ্রী (Shelter Upgradation Materials) বিতরণ করেন এবং রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য প্রার্থনা করেন। এছাড়া তারা বিএমজেড সেন্টারে গিয়ে নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে যুক্ত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।


শিশুদের উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা

এমসিএসি সেন্টারে শিশুদের আনন্দঘন অভ্যর্থনা কার্ডিনালকে মুগ্ধ করে। শিশুরা গান ও ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। তারা বলেন, “আপনি আমাদের দেখতে এসেছেন, এতে আমরা খুশি। আমাদের খেলাধুলা ও শেখার উপকরণে সাহায্য করুন, যাতে আমরা আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারি।”

কার্ডিনাল চেরনি শিশুদের প্রতি মমতা প্রকাশ করে বলেন, “তোমাদের হাসি ও সৃজনশীলতা আমাদের সকলের জন্য আশা ও জীবনের প্রতীক। এটি আমাদের সহানুভূতির সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।”

রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

ইআরপি ওয়্যারহাউসে আয়োজিত কমিউনিটি পরামর্শ সভায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা কারিতাস বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, “কারিতাস আমাদের পাশে আছে—ভালোবাসা, সেবা ও যত্নের মাধ্যমে। প্রতিদিন তারা আমাদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে সাহায্য করছে—পরিষ্কার পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন, আশ্রয় ও শিশুদের খেলার নিরাপদ স্থান দিয়ে। তারা কেবল বেঁচে থাকার জন্য নয়, আমাদের শক্তি ও আশার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন দুনিয়ার মনোযোগ হারিয়ে যায়, কারিতাস তখনও আমাদের পাশে থাকে।”


কার্ডিনালের মন্তব্য: ‘এটি কেবল সেবা নয়, এক সম্প্রদায়ের যত্ন’

কার্ডিনাল চেরনি বলেন, “ওয়াশ কার্যক্রমের সুফল আজীবন স্থায়ী। এখানে যা দেখছি তা কেবল মানবিক সেবা নয়, বরং এক ‘কমিউনিটি অব কেয়ার’—যেখানে মানুষ পরস্পরকে সাহায্য করে, যা কিছু আছে ভাগাভাগি করে এবং সহমর্মিতায় জীবনযাপন করে। এখানে যে আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে—স্বাস্থ্যবিধি, পারস্পরিক সম্মান ও পরিবেশের যত্ন—তা ভবিষ্যতের আশা। একদিন যখন তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে, এই মূল্যবোধই হবে শান্তি ও সুস্থতার ভিত্তি।”

পুনর্বাসনের আশায় মানবিক আহ্বান

কার্ডিনাল চেরনি বলেন, “শিবিরে প্রতিদিন মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তাদের প্রত্যাবর্তনের গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কারিতাসের কার্যক্রম তাদের শুধু সহায়তা দিচ্ছে না, বরং আশাবাদী ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে।”

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর উদ্দেশে আহ্বান জানান—“অর্থের ঘাটতি ও বিশ্বজোড়া উদাসীনতার সময়েও একে অপরের প্রতি সংহতি আরও বাড়ানো দরকার। সব সংগঠনকে—খ্রিষ্টান বা অন্য—মানুষের প্রকৃত প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং কষ্টে থাকা মানুষদের পাশে থাকতে হবে। আমরা সাহায্য করছি এবং এটি চালিয়ে যেতে হবে।”

শেষবার্তায় আশার প্রার্থনা

শেষে কার্ডিনাল চেরনি বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শক্তি ও সহনশীলতা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি প্রার্থনা করি, একদিন তারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শান্তি ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।”