গোপন সফরে বেইজিংয়ে এফবিআই প্রধান
গত সপ্তাহে মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর পরিচালক কাশ প্যাটেল চীন সফর করেছেন, যেখানে ফেন্টানিল নামক প্রাণঘাতী মাদক এবং আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। বিষয়টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্ররা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নেতাদের সাম্প্রতিক বৈঠকের পর এই সফরটি হয়, যেখানে উভয় দেশই ফেন্টানিল সংকট মোকাবিলায় “সমঝোতা”-র কথা জানিয়েছিল।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্যাটেল গত শুক্রবার বেইজিং পৌঁছান এবং প্রায় একদিন অবস্থান করেন। শনিবার তিনি চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরটি কোনো দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি, তবে প্রথমবারের মতো এই খবরটি প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানান, তিনি প্যাটেলের সফর সম্পর্কে অবগত নন। এদিকে চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এবং বেইজিংয়ে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
ফেন্টানিলের রাসায়নিক উপাদানে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোমবার ঘোষণা করেছে যে দেশটি মাদক-সম্পর্কিত রাসায়নিক উপাদানের তালিকায় পরিবর্তন আনবে এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে এসব রাসায়নিক রপ্তানিতে নতুন লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করবে।
নতুন নীতিমালায় মাদক তৈরির রাসায়নিক উপাদানের উৎপাদন ও রপ্তানির ওপর নজরদারি আরও কড়াকড়ি করা হবে, যাতে এগুলো অবৈধ পথে না যায়। চীন সতর্ক করেছে যে “উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে” এসব রাসায়নিক পাঠালে রপ্তানিকারকদের ফৌজদারি ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান ও নতুন সমঝোতা
গত মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক অর্ধেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেন। তিনি জানান, শি “ফেন্টানিলের প্রবাহ বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।” ফেন্টানিল হলো একটি কৃত্রিম মাদক, যা যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনের ফলে মৃত্যুর প্রধান কারণ।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, এই নতুন সমঝোতার বিস্তারিত বিষয়গুলো একটি দ্বিপাক্ষিক কার্যকরী গ্রুপের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তবে প্যাটেলের বেইজিং সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

চীনের অবস্থান ও সম্পর্কের পরিবর্তন
এই চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এক ধরনের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে তারা জোর দিয়েছিল যে, চীন ফেন্টানিল সরবরাহ শৃঙ্খল কঠোরভাবে দমন না করা পর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
চীনের কর্মকর্তারা অবশ্য নিজেদের অবস্থান রক্ষা করে বলেন, তারা ইতোমধ্যে ফেন্টানিল তৈরির উপাদান নিয়ন্ত্রণে বিস্তৃত পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের দাবি, ওয়াশিংটন এই ইস্যুটি “চাপ সৃষ্টি ও কূটনৈতিক ব্ল্যাকমেইল”-এর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
শি-ট্রাম্প বৈঠকের পর ফেন্টানিল ছাড়াও চীন আবারও মার্কিন সয়াবিন কেনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। অপরদিকে বেইজিং অক্টোবর মাসে বিরল মাটির খনিজ (rare earth elements) রপ্তানিতে যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল, সেটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
কাশ প্যাটেলের এই গোপন সফর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে জটিল সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও উভয় দেশ ফেন্টানিল সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে, তবু বাস্তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো সময়ই বলে দেবে।
#চীন #যুক্তরাষ্ট্র #ফেন্টানিল #কাশ_প্যাটেল #ট্রাম্প #শি_জিনপিং #মাদক_নিয়ন্ত্রণ #আন্তর্জাতিক_সম্পর্ক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















