যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন শিগগিরই শেষ হতে পারে— এমন আশার ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত জাপানি ইয়েনের মান কমেছে এবং প্রবৃদ্ধিনির্ভর অস্ট্রেলীয় ডলারের মান বেড়েছে। একইসঙ্গে ইউরোপীয় মুদ্রাগুলোর মান তেমন পরিবর্তিত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অগ্রগতি ও বাজার প্রতিক্রিয়া
রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম পুনরায় চালু করার পদক্ষেপে অগ্রসর হয়েছে। যদিও এটি ছিল একটি প্রাথমিক ভোট, তবুও কিছু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটর সমঝোতায় পৌঁছেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন: “মনে হচ্ছে আমরা শাটডাউন শেষের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।”
বাজার প্ল্যাটফর্ম পলিমার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ নভেম্বরের আগেই শাটডাউন শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে।
ডলার ইয়েনের বিপরীতে ০.৫ শতাংশ বেড়ে ১৫৪.২২ ইয়েনে পৌঁছেছে, যা চলতি মাসের শুরুর দিকে দেখা নয় মাসের উচ্চতার কাছাকাছি।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলীয় ডলার ০.৫৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৬৫৩২ ডলারে এবং ইয়েনের বিপরীতে ১ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রেলীয় ডলার ও ইয়েনের এই জুটি সাধারণত বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রতি বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের সূচক হিসেবে বিবেচিত হয় এবং শেয়ারবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওঠানামা করে।
সোসিয়েতে জেনারেলের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা কৌশলবিদ কিট জুকস বলেন, “বর্তমানে সবচেয়ে প্রচলিত ঝুঁকি-নির্ভর লেনদেন হচ্ছে অস্ট্রেলীয় ডলার ও জাপানি ইয়েনের জুটি।”
অর্থনৈতিক তথ্য ও ফেড নীতি
যদি যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউন তুলে নেওয়া হয়, তবে বাজারের দৃষ্টি পড়বে অর্থনৈতিক তথ্যের দিকে— বিশেষ করে ‘নন-ফার্ম পেরোলস’ ডেটার দিকে, যা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশ হয়নি।
বর্তমানে বাজারে ডিসেম্বর মাসে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা প্রায় ৬০ শতাংশ হিসেবে প্রতিফলিত হচ্ছে। তবে নতুন তথ্য এলে এই সম্ভাবনা দ্রুত বদলে যেতে পারে।
জুকস বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি, প্রাথমিকভাবে আমরা যখন ডেটা পাব, তখন তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য কিছুটা হতাশাজনক হতে পারে।”
ইউরোপীয় মুদ্রার স্থিতিশীলতা
ইউরোপীয় মুদ্রাগুলোর ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। ইউরো ১.১৫৫৮ ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং ১.৩১৬৩ ডলার এবং সুইস ফ্রাঁ ০.৮০৬২ ডলার প্রতি ইউনিটে স্থিতিশীল ছিল।
জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার দেশীয় প্রভাব
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি সোমবার ঘোষণা করেন, তিনি কয়েক বছরের জন্য একটি নতুন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবেন যাতে সরকারি ব্যয় আরও নমনীয় করা যায়। এর ফলে জাপানের রাজস্ব শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতি কিছুটা শিথিল হবে।
একই দিনে ব্যাংক অব জাপান জানায়, জুলাইয়ের তুলনায় এখন দেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে। এটি ডিসেম্বর মাসে সুদের বৃদ্ধির পথ খুলে দিতে পারে, যা ইয়েনকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হতে পারে।
সোসিয়েতে জেনারেলের সালমান আহমেদ বলেন, “এতে অতিরিক্ত উত্তেজনার কিছু নেই; তবে আমরা ব্যাংক অব জাপানের কাছ থেকে আরেকটি সুদবৃদ্ধি আশা করছি।”
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর অ্যান্ড্রু হাউসার সোমবার বলেন, “দেশের আর্থিক অবস্থা এখন নিরপেক্ষ সুদের হার পর্যায়ে— যা অর্থনীতিকে না উদ্দীপিত করছে, না টান দিচ্ছে।”
ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংকের বিশ্লেষকদের মতে, “হাউসারের বক্তব্য কিছুটা কড়া বা ‘হকিশ’ মনে হয়েছে, যা অস্ট্রেলীয় ডলারকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করেছে।”
নরওয়ের মুদ্রা শক্তিশালী
ইউরোপে একটি বিরল পরিবর্তন দেখা যায় নরওয়ের মুদ্রায়। অক্টোবর মাসে দেশের মূল মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সুদ কমানোর সুযোগ সীমিত করেছে। ফলে নরওয়েজীয় ক্রোনের মান বেড়েছে।
ডলার ক্রোনের বিপরীতে ০.৪৪ শতাংশ কমে ১০.১১ ক্রোনে নেমে এসেছে এবং ইউরোও সমপরিমাণ কমে ১১.৭ ক্রোনে পৌঁছেছে।
#tags: #ডলার #অস্ট্রেলিয়া #জাপান #ফেডারেল_শাটডাউন #বৈদেশিক_মুদ্রা #অর্থনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















