দক্ষিণ লন্ডনের নামী ডালউইচ কলেজের এক চার দশক পুরোনো স্মৃতি আবারও ব্রিটিশ রাজনীতির কেন্দ্রে টেনে আনল রিফর্ম ইউকের নেতা Nigel Farageকে। এক সময়ের শিক্ষক চলোয়ে ডিকিনের লেখা ব্যক্তিগত চিঠি ও সাম্প্রতিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মিলিয়ে ফ্যারাজের কিশোর বয়সের আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বর্ণবাদী ও ইহুদিবিদ্বেষী হয়রানির ধারাবাহিকতা, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নীরবতা ভাঙছেন ভুক্তভোগীরা।
শিক্ষকের আপত্তি ও উপেক্ষিত সতর্কতা
উনিশশো একাশি সালের জুনে ডালউইচ কলেজের তৎকালীন শিক্ষক চলোয়ে ডিকিন অধ্যক্ষ ডেভিড এমসকে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে তিনি কিশোর ফ্যারাজকে প্রিফেক্ট করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাঁর ভাষায়, ফ্যারাজের আচরণ অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ হতে পারে না। সহকর্মীদের কাছ থেকে শোনা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি মনে করেছিলেন, এমন একজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা ঠিক হবে না। তবু সেই আপত্তি উপেক্ষা করেই নিয়োগ কার্যকর হয়।
বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ
ডিকিনের স্মৃতিচারণে উঠে আসে আরও গুরুতর বিষয়। তাঁর দাবি, সে সময় ফ্যারাজের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী মন্তব্য, চরম ডানপন্থী আচরণ ও সহপাঠীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ শোনা যেত। নব্য নাৎসি ভঙ্গিতে গান গাওয়া বা কুচকাওয়াজ নকল করার কথাও উঠে আসে তাঁর বর্ণনায়। সাম্প্রতিক সময়ে বহু প্রাক্তন শিক্ষার্থী একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে এনেছেন, যেখানে বলা হয়েছে ইহুদি ও কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে হয়রানি করা হতো।

ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ ও বিতর্ক
এখন মধ্যবয়সী হয়ে ওঠা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেই অভিজ্ঞতার ক্ষত আজও বহন করতে হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্যকে ফ্যারাজ ও তাঁর দলের পক্ষ থেকে রসিকতা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ডিকিনের মতে, এ ধরনের আচরণকে রসিকতা বলা যায় না। লক্ষ্যভিত্তিক অপমান কখনোই নিরীহ হতে পারে না।
ক্ষমা না চাওয়ার প্রশ্ন
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা মানুষজন এবং প্রাক্তন সহপাঠীদের একটি অংশ ফ্যারাজের কাছে প্রকাশ্য ক্ষমা প্রত্যাশা করেছেন। কিন্তু এখনও তেমন অনুশোচনা বা অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলেনি। ডিকিন মনে করেন, অতীতের এই বিষয়গুলো বর্তমান রাজনীতির জন্য অপ্রাসঙ্গিক নয়। কৈশোরের বৈষম্যমূলক মানসিকতা পরবর্তী জীবনের রাজনীতিতেও ছাপ ফেলতে পারে।
নেতৃত্ব ও নৈতিকতার পরীক্ষা
রিফর্ম ইউকের সম্ভাব্য উত্থানের প্রেক্ষাপটে ফ্যারাজের নেতৃত্বগুণ ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। জনজীবনে থাকা একজন নেতার জন্য সততা, দায়বদ্ধতা ও মানবিকতার প্রশ্ন এড়ানো সম্ভব নয়। অতীতের অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট জবাব ও আত্মসমালোচনাই পারে আস্থা ফেরাতে।
এই প্রতিবেদনটি দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত চিঠি ও বর্ণনার আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















