তৃতীয় অধ্যায়
উনিশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ রাজধানী কলকাতা ও অন্যান্য জেলা শহরগুলিতে পাকা বাড়ি তৈরির প্রবণতা বাড়তে থাকায় চুনের চাহিদা দেখা গেল। সে সময় সুন্দরবনের সমুদ্রতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকাতে অনেক মানুষ চুন তৈরির জন্য নদীতে শামুক সংগ্রহ করত। এক ধরনের শামুক যা জোংড়া শামুক নামে পরিচিত, তা পুড়িয়ে সে যুগে চুন তৈরি করা হত।
সে যুগে খুলনা ডায়মন্ডহারবার এর বিভিন্ন এলাকাতে চুন তৈরির জন্য ব্যাপারীরা ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলেছিল। অনেক মানুষ নদীতে নৌকা নিয়ে নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে এই শামুক সংগ্রহ করত এবং তা নৌকা হিসাবে চুন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করা হত। বিদ্যাধারী মাতলা নদীতে প্রচুর জোংড়া পাওয়া যেত-অনেকে নদীতে নৌকা নিয়ে জোংড়া এবং মৃত পশুর হাড় সংগ্রহ করত। ভাঙড়ের নিকটবর্তী শাঁকশহরের শামুক ও শঙ্খের ব্যবসা সে যুগে শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে।
ফোর্ট উইলিয়ামের বেঞ্জামিন ল্যাকম ১৭৭০ খ্রীষ্টাব্দে কোম্পানির প্রয়োজনীয় চুন সরবরাহ করার জন্য কনট্রাক্ট পেয়েছিলেন। ডায়মন্ডহারবার এলাকা থেকে চুন তৈরি করে কোম্পানিকে সরবরাহ করতেন। ১ম মহাযুদ্ধ পরবর্তীকালে আমাদের দেশে চামড়ার চাহিদা বাড়ে। আমাদের দেশে গ্রামে গল্পে বেশ কিছু এলাকার মানুষ গবাদি পশুর চামড়া দেশীয় পদ্ধতিতে পাকা করতে জানত।
কিন্তু গ্রামে গঞ্জে জুতা পরার প্রচলন ছিল না-মানুষ খালি পায়ে থাকত-বাড়িতে খড়মের ব্যবহার ছিল। ১ম মহাযুদ্ধ পরবর্তী কালে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষরা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ায় চামড়া শিল্পের কিছুটা অগ্রগতি দেখা যায়। মধ্যবিত্তরা সে যুগে পাশ্চাত্য শিক্ষার দৌলতে পায়ে চামড়ার জুতা পরতে শুরু করেছে। কলকাতার আড়তদাররা ছোট ছোট ব্যাপারীদের সাহায্য নিয়ে সুদূরতম গ্রাম থেকে চামড়া হাড় সংগ্রহ করে কলকাতায় নিয়ে আসত।
চামড়া পাকা করার ব্যাপারে আধুনিক উন্নত পদ্ধতি বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে চালু হয়। স্বদেশি আন্দোলন -পূর্ব যুগে ছোট ছোট শহরগুলিতে বিলাতি কোম্পানির জুতা পাওয়া যেত কিন্তু তার ব্যবহার খুবই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে দেশীয় কারিগরদের হাতে তৈরী জুতার তার প্রচলন বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ করা যাচ্ছিল।
Sarakhon Report 



















