শ্রী নিখিলনাথ রায়
মীর জাফর সেই পত্র সত্য বলিয়া প্রমাণ করিতে চেষ্টা পান এবং নন্দকুমারের সহিত ক্লাইবের বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ জানিয়া, তাঁহাকে এইরূপ ভাবে পত্র লেখেন যে, যদি ঐ পত্র সত্য বলিয়া ইংরেজদিগের বিশ্বাস জন্মাইতে পার, তাহা হইলে, আমি তোমাকে উপাধি ও জায়গীর প্রদান করিব। ইহা কিন্তু ইংরেজ ঐতিহাসিকের কথা।
নন্দকুমার উক্ত পত্র ক্লাইবের হস্তে প্রদান করেন। উক্ত পত্র নবাব মীর জাফর খাঁর স্বহস্তলিখিত। নন্দকুমার রাজা দুর্লভরামের অত্যন্ত হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন বলিয়া, তাঁহার বিরুদ্ধে নবাবের কদভিপ্রায়পূরণের সহায়তা করেন নাই। এই জন্য নবাব মীর জাফর আলি খাঁ তাঁহার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া উঠেন।
নন্দকুমার যৎকালে ইয়ারবেগ খাঁর সময়ে হুগলীর দেওয়ানী কার্য্য করিয়াছিলেন, সেই সময়ে উক্ত খাঁর নিকট তাঁহার অনেক টাকা প্রাপ্য ছিল। এক্ষণে তিনি ইয়ারবেগের নিকট সেই অর্থের দাবী করিলেন। ইয়ার বেগ নন্দকুমারের প্রভূত ক্ষমতা জানিয়া তাঁহাকে ১৪ হাজার টাকা প্রদান করিয়া, তাঁহার দাবী হইতে নিষ্কৃতিলাভ করিতে সমর্থ হন। পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, নবাব মীর জাফর খাঁ নন্দকুমারের প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। হুগলীতে অবস্থান কালে, নন্দকুমার, ফৌজদার আমীর- বেগ খাঁকে সময়ে সময়ে অনেক বিষয়ে উপদেশ দিতেন। নবাব তজ্জন্য আমীরবেগের উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হওয়ায়, আমীরবেগ হুগলীর ফৌজদারী পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন।
নন্দকুমারও নবাবের ক্রোধের পাত্র হওয়ায়, হুগলী পরিত্যাগ করিয়া কলিকাতায় গমন করেন। রাজা দুর্লভরাম পূর্ব্ব হইতেই কলিকাতায় অবস্থিতি করিতেছিলেন এবং নবাবের প্রধান হরকরা রাজারাম সিংহও সেই সময়ে কলিকাতায় আসিয়া বাস করেন। অবশেষে নন্দকুমারও তথায় উপস্থিত হইলেন। সকলেই নবাবের অযথা ক্রোধের ও অত্যাচারের জন্য আপন আপন কার্য্য পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। এক্ষণে তাঁহারা দিল্লীতে বাদশাহের নিকট উকীল পাঠাইয়া পুনর্ব্বার সরকারী পদের প্রার্থী হইলেন। দুর্লভরাম বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার। দেওয়ানী, নন্দকুমার নায়েব দেওয়ানী ও রাজারাম সিংহ আপনার ‘পূর্ব্ব পদের প্রার্থনা করেন।