নন্দকুমার বর্দ্ধমানরাজের নিকট খাজনা চাহিয়া পাঠাইলে, তিনি মুর্শিদাবাদে সংবাদ প্রেরণ করেন। তৎকালে হেষ্টিংস সাহেব মুর্শি- দাবাদে রেসিডেন্টের পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বর্তমানরাজের পত্র পাইয়া নন্দকুমারের উপর বিরক্ত হন। এই সময়ে নন্দ- কুমারও হেষ্টিংসকে তাঁহার নিয়োগ ও খেলাতপ্রাপ্তির কথা লিখিয়া পাঠান। হেষ্টিংসের নিজের হস্ত দিয়া সে টাকা কলিকাতায় প্রেরিত না হওয়ায়, তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া উঠেন।
তাঁহার হস্ত দিয়া কোম্পানীর টাকা প্রেরিত হইলে, তাঁহার যে অনেকরূপ সুবিধা হয়, ইহা বোধ করি আর স্পষ্ট করিয়া উল্লেখ করিতে হইবে না; এবং নন্দ- কুমারকে সেই সুবিধার অন্তরায় হইতে দেখিয়া নন্দকুমারের প্রতি হেষ্টিংসের অসন্তোষের বীজ রোপিত হয়; সেই বীজ ক্রমে বন্ধিত হইয়া মহান্ বৃক্ষে পরিণত হইয়াছিল। হেষ্টিংস বর্দ্ধমানরাজের ও নন্দকুমারের পত্র পাইয়া ক্লাইবকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, পূর্ব্বে বর্দ্ধমান ও নদীয়ার রাজস্ব মুর্শিদাবাদে পাঠাইবার কথা হয়; এক্ষণে হুগলীতে পাঠাইবার জন্য নন্দকুমার বর্তমানরাজের নিকট অন্যায়পূর্ব্বক পিয়াদা পাঠাইতেছে এবং তাহার পত্রে অবগত হইলাম যে, বর্দ্ধমান ও নদীয়ার রাজস্ব আদায়ের জন্য আপনি তাহাকে খেলাত প্রদান করিয়াছেন।
ক্লাইব তাহার প্রত্যুত্তরে লিখিয়া পাঠান যে, নন্দকুমারকে নদীয়া ও বর্দ্ধমানের রাজস্ব- সংগ্রহের জন্য কাউন্সিলের সভ্যগণ নিযুক্ত করিয়াছেন এবং তাঁহারাই তাহাকে প্রকাশ্যভাবে খেলাত দিয়াছেন। বর্দ্ধমান ও নদীয়ার রাজস্ব হুগলীতে পাঠাইবার জন্য স্থির করা হইয়াছে। বর্দ্ধমান ও নদীয়া হইতে যে আমরা এত টাকা পাইয়া থাকি, তাহা নবাবকে জানিতে না দেওয়াই মুর্শিদাবাদে টাকা না প্রেরণ করার উদ্দেশ্য। সেই জন্য হুগলীতে প্রেরণ করাই স্থির হয়।
আপনি বর্দ্ধমানরাজকে নন্দকুমারের আদেশ প্রতি- পালন করিতে ও তাঁহাকে কলিকাতায় আসিতে লিখিয়া পাঠাই- বেন। হেষ্টিংস ক্লাইবকে পুনর্ব্বার লিখিয়া পাঠাইলেন যে, নন্দকুমার মহিষাদলের গোমস্তার হিসাব তলব করিয়াছে। আমার বিশ্বাস, এ সমস্ত আপনাদের বিনা অনুমতিতেই হইতেছে। বোধ করি, আপনাদের এরূপ বিবেচনা হইবে না যে, যতদিন নন্দকুমার নিজের অবসরক্রমে আমার হস্ত হইতে সমস্ত কার্য্যের ভার গ্রহণ না করিবে, ততদিন পর্যন্ত আমাকে তাহার কার্য্যের জন্য মোরাদবাগে অবস্থিতি করিতে হইবে। ক্লাইব ইহার কি উত্তর দেন, তাহা আমরা জ্ঞাত নহি।