সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলার পরিকল্পনা নিয়ে একটি গোপন গ্রুপ চ্যাট তৈরি করেন
- জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (NSC) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং কীভাবে ভুলবশত গোল্ডবার্গ গ্রুপে যুক্ত হলেন
- এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং গোপন তথ্য সুরক্ষার অভাবকে তুলে ধরেছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলার পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি একটি অনিরাপদ গ্রুপ চ্যাটে ভুলবশত ‘দ্য অ্যাটলান্টিক‘-এর প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নীতিমালার বেশ কয়েকটি লঙ্ঘন ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘বোমা পড়তে শুরু করার আগেই জানতাম‘ — গোল্ডবার্গের অভিজ্ঞতা
গোল্ডবার্গ নিজেই দ্য অ্যাটলান্টিকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখেছেন, “আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না, কিন্তু তখনই বোমা পড়তে শুরু করলো। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আমাকে এমন এক চ্যাটে যোগ করেছেন, যেখানে ইয়েমেনের ওপর আসন্ন হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।”
এই গ্রুপ চ্যাটটি ছিল ‘সিগনাল’ নামের একটি প্রাইভেসি-নির্ভর ওপেন সোর্স মেসেজিং অ্যাপে। গোল্ডবার্গ জানান, তাকে ওই গ্রুপে যুক্ত করে এক ব্যক্তি, যে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল।
সামরিক পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতে পেরেছিলেন সাংবাদিক
গোল্ডবার্গের দাবি অনুযায়ী, গ্রুপ চ্যাটে ইয়েমেনের ওপর আসন্ন হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা আলোচনা হচ্ছিল—লক্ষ্যবস্তু, ব্যবহৃত অস্ত্র, হামলার ধাপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেখানে যুক্ত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথসহ আরও অনেক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, সরকারি সূত্রে হামলার ঘোষণা আসার দুই ঘণ্টা আগেই তিনি এই তথ্য পেয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই তথ্য যদি যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কোনো শক্তির হাতে পড়তো, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা সদস্যদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতো।”
ইরান সমর্থিত হুথিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা
চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালায়। এই বিদ্রোহীরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে কয়েক দিনের ব্যবধানে ৩০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর এই বিষয়ে মন্তব্য না করে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (NSC) দায়িত্বে ছেড়ে দেয়। NSC-এর মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ এক বিবৃতিতে স্বীকার করেন, “প্রকাশিত মেসেজ থ্রেডটি আসল বলে মনে হচ্ছে। আমরা খতিয়ে দেখছি কীভাবে একটি ভুল নম্বর এই গ্রুপে যুক্ত হলো।”
তিনি আরও বলেন, এই চ্যাটটি সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর এবং চিন্তাশীল নীতিগত সমন্বয়ের একটি উদাহরণ। তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদস্যদের বা জাতীয় নিরাপত্তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
যে নিয়মগুলো লঙ্ঘন হয়েছে
গোল্ডবার্গকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এই গোপন চ্যাটে যুক্ত করার ফলে গোপন সামরিক তথ্য, সংবেদনশীল অপারেশন সংক্রান্ত আলোচনা এবং সরকারি নথি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে।
গোল্ডবার্গ আরও লেখেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ইউরোপীয় মিত্রদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হতাশা জানান। চ্যাটে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে, “আমরা এখন পর্যন্ত নিরাপদ আছি” — যদিও তারা সরকারি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার না করে একজন সাংবাদিককে অজান্তেই আলোচনায় যুক্ত করেছিলেন।
জেফরি গোল্ডবার্গ কে?
জেফরি গোল্ডবার্গ সাংবাদিকতা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দ্য অ্যাটলান্টিকে যোগদানের আগে তিনি নিউ ইয়র্কারের মধ্যপ্রাচ্য এবং ওয়াশিংটন প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে ১৫টি কাভার স্টোরি প্রকাশ করেছেন।
গোল্ডবার্গের লেখা Prisoners: A Story of Friendship and Terror বইটি আন্তর্জাতিক সংঘাত, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে তার গভীর আগ্রহের প্রমাণ বহন করে। তিনি আমেরিকান অ্যাকাডেমি ইন বার্লিনে ফেলো ছিলেন এবং ওভারসিজ প্রেস ক্লাব অ্যাওয়ার্ড, ড্যানিয়েল পার্ল অ্যাওয়ার্ড এবং জাতীয় ম্যাগাজিন অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।