সারাক্ষণ রিপোর্ট
সংঘর্ষ এড়িয়েই সমাধান সম্ভব: জয়শঙ্করের বার্তা
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, ভবিষ্যতে চীন-ভারতের মধ্যে সমস্যা থাকলেও তা সংঘর্ষে না গিয়েই সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের মতো পথ ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য নয়।
এশিয়া সোসাইটিকে দেওয়া বক্তব্যে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা জানি কিছু জটিলতা থাকবে, তবে এর মোকাবেলায় আরও উপযুক্ত উপায় আছে। ২০২০ সালের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে, কীভাবে না চলা উচিত।”
সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের ইতিবাচক পদক্ষেপ
চীনা থিংক ট্যাংক ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউট’-এর গবেষণা পরিচালক কিয়ান ফেং বলেন, ভারতের সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।
তার মতে, ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি বিবেচনায় কূটনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করতে চাইছে।
ভারতের অর্থনীতিও এই পরিবর্তনে প্রভাব রাখছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য জোরদার করা, সরবরাহ চেইন বজায় রাখা, মার্কিন শুল্কের চাপে সামাল দেওয়া এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ভারতকে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে উৎসাহিত করছে।
৭৫তম বার্ষিকীতে সম্পর্ক জোরদারে নতুন সুযোগ
২০২৫ সালে চীন ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক উপলক্ষকে সামনে রেখে দুই দেশই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
বিশ্লেষকদের মতে, গালওয়ান সংঘর্ষের পর যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
বেইজিংয়ে সীমান্ত ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
২৫ মার্চ বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় চীন-ভারতের ৩৩তম সীমান্ত বৈঠক। এতে অংশ নেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্তবিষয়ক মহাপরিচালক হং লিয়াং এবং ভারতের পূর্ব এশিয়া বিভাগের জয়েন্ট সেক্রেটারি গৌরাঙ্গলাল দাস।
বৈঠকে সীমান্ত নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় দেশ সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার এবং ২৪তম বিশেষ প্রতিনিধিদের বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়।
বহুপাক্ষিক বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা
চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হং লেই-এর সঙ্গে দাসের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক মহাপরিচালক লিউ জিনসঙ-এর সঙ্গে আরেক বৈঠকেও উভয় পক্ষ বাস্তবভিত্তিক ও গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নেয়।
মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ
চীন ও ভারত সরাসরি ফ্লাইট চালু, গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ এবং ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার পরিকল্পনা নিচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালকে কেন্দ্র করে ধাপে ধাপে সংলাপ কাঠামো পুনরায় চালু করা হবে এবং দুই দেশের অগ্রাধিকার ও উদ্বেগের বিষয়গুলোর সমাধান খোঁজা হবে।
চীন-ভারত সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনার দিকনির্দেশনা
বিশেষজ্ঞ কিয়ান ফেং মনে করেন, ২০২৫ সালের বার্ষিকীকে ঘিরে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদারের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ও স্বাস্থ্যকর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। এটি দুই দেশের সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।