সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভূমিকম্পের পর জরুরি বিভাগে আহতদের ঢল
শুক্রবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর ১,০০০ শয্যার হাসপাতালের বাইরে সার দিয়ে শুয়ে ছিলেন বহু আহত মানুষ। কারো হাতে পিকআপে করে আনা হয়েছে, কেউ বা স্ট্রেচারে করে, আর কারও রক্তমাখা শরীর ধূলায় মাখা ছিল। এদের কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন, কেউবা নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে ছিলেন।
হাসপাতাল খুবলে গেছে, গাড়ি চাপা পড়েছে
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেটিও প্রচণ্ড কম্পনের ধাক্কা সামলাতে পারেনি। ভবনের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে জরুরি বিভাগের সামনে রাখা একটি গাড়িকে চাপা দেয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রোগীদের সামলানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এক চিকিৎসক বলেন, “এত আহত মানুষ আমি আগে দেখিনি। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
মিন অং হ্লাইং –এর সফর ও হতাহতদের পরিস্থিতি
মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং হাসপাতালে গিয়ে আহতদের দেখেন। কেউ যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন, কেউ আবার স্বজনদের সান্ত্বনায় চুপচাপ হয়ে ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কম্পনের কেন্দ্রবিন্দু ও আফটারশক
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উত্তরে সাগাইং শহরের কাছে ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৭ এবং এর কিছু পরেই ৬.৪ মাত্রার আরেকটি আফটারশক আঘাত হানে।তখন মাটি প্রায় অর্ধমিনিট ধরে তীব্রভাবে কেঁপে ওঠে, রাস্তা ও পিচ ঢালাই ফেটে যায় এবং বহু ভবনে ফাটল ধরে।
কম্পনের সময় স্থানীয় অভিজ্ঞতা
নেপিদোর ন্যাশনাল মিউজিয়ামে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, ভূমিকম্পের সময় সিলিংয়ের অংশ ভেঙে পড়ে এবং দেয়ালে ফাটল ধরে। নেপিদোর সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলোর একটিতে যেতে যাওয়া রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে কান পাতা যায় না। অনেকে জরুরি বিভাগের দিকে ছুটে যান চিকিৎসা নেওয়ার জন্য।
চীন ও থাইল্যান্ডে তীব্র কম্পন
ভূমিকম্পের জেরে প্রতিবেশী চীন ও থাইল্যান্ডেও কম্পন অনুভূত হয়। ব্যাংককে উচ্চ ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানা যায়, একটি ৩০ তলা নির্মাণাধীন ভবন আংশিক ধসে পড়ে। অনেকে বলছেন, ভবনের ভেতর থেকে “আমাকে বাঁচাও” বলে আর্তচিৎকার শুনেছেন। আহতদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
আতঙ্কে শহরবাসী
ব্যাংককে অনেকেই এমন কম্পন অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গায় ছুটে যান। একজন ক্রেতা জানান, “আমি শপিং করতে গিয়েছিলাম। দেখি সাইনবোর্ডগুলো দুলছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই বাইরের খোলা জায়গায় চলে যাই।” স্বাভাবিক সময়ে রাজধানী হিসেবে ব্যাংককের মানুষ মাঝেমধ্যেই সামান্য কম্পন অনুভব করেন, তবে এত শক্তিশালী কম্পন তাদের কাছে বিরল।
সারমর্ম
মিয়ানমারে এই শক্তিশালী ভূমিকম্প ও পরবর্তী আফটারশক ব্যাপক ভৌত ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি করেছে। হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যবস্থার ওপর প্রবল চাপ পড়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও কম্পন অনুভূত হওয়ায় আন্তঃসীমান্ত সতর্কতা বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য সূত্র ( কয়েকটি নিউজ এজেন্সি ও মিয়ানমারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারীদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ)