সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারসংক্ষেপ
- ছয় মাসের হাইকোর্ট জামিন—বিকেলে স্থগিত,রাতে উঠিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি রবিবার
• ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহবাগে অনুসারীদের বিক্ষোভ; ২২ নভেম্বর রংপুরে ৮ দফা দাবির মহাসমাবেশ
• রংপুরে সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময়ের অভিযোগ: ‘আমাকে হোটেল ছাড়তে বলা হয়েছে, তবু আন্দোলন চলবে’
• সংখ্যালঘু চাকরিজীবীদের পদত্যাগে বাধ্য করা, বাজার ইজারায় চাঁদাবাজির নতুন অভিযোগ
• ভারতের উদ্বেগ অব্যাহত; ঢাকা ‘অযাচিত মন্তব্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে
জামিন-স্থগিত ও প্রত্যাহারের সময়রেখা
৩০ এপ্রিল দুপুরে হাইকোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ ও জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলায় চিন্ময়ের ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করে; বিকেলে চেম্বার আদালত তা স্থগিত করে, রাতেই বিচারপতি মো. রেজাউল হক স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেন এবং ৪ মে পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ দেন।
ঢাকায় শাহবাগের প্রতিবাদ সমাবেশ
চিন্ময়ের গ্রেপ্তারের পরে ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৩০-এ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সনাতনী জাগরণ মঞ্চের শতাধিক সমর্থক। পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে পড়ায় এক ঘণ্টার মধ্যে অবরোধ ওঠে; পরে বিক্ষোভকারীরা রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ‘চিন্ময়কে মুক্তি দাও’ স্লোগান দেয়।
রংপুরের ৮ দফা মহাসমাবেশ
২২ নভেম্বর রংপুরের মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে সনাতনী জাগরণ জোটের ‘সংখ্যালঘু অধিকার ও নিরাপত্তা সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে আসা হাজারো অংশগ্রহণকারী সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-সহ ৮ দফা দাবিতে স্লোগান তোলে। সভায় সভাপতিত্ব করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
রংপুরের সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময়ের বক্তব্য
সমাবেশের আগের রাত ২১ নভেম্বর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময় অভিযোগ করেন, “রংপুরের একটি হোটেল থেকে আমাকে রাতেই বেরিয়ে যেতে আদেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ঘর ছাড়তে পারি, আন্দোলন ছাড়ব না—সংখ্যালঘুরা এখানেই থাকবে।” তিনি হুঁশিয়ার করেন, ৮ দফা মানা না হলে ‘দীর্ঘ পদযাত্রা’ শুরু হবে।
সংখ্যালঘুদের ওপর চালু চাঁদাবাজি ও নিপীড়ন
আগস্ট ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে ১০–১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরে সংখ্যালঘু কর্মীদের জোর করে পদত্যাগ করানো এবং ‘দেশ ছাড়া’য়ের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা বেড়েছে।
একই সঙ্গে ২১ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ জানান, “আগের চাঁদাবাজ চক্র ভেঙে গেলেও নতুন গ্রুপ গজাচ্ছে; বাজার লিজধারীদের হয়রানি বন্ধ হয়নি।”
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সরকারের অবস্থান
গ্রেপ্তারের পরদিনই ভারত ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে ভিসা সীমিত করে; ঢাকা তা ‘অযাচিত ও তথ্য-বিকৃত’ মন্তব্য বলে প্রত্যাখ্যান করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিচার-প্রক্রিয়া স্বাধীন, সরকার হস্তক্ষেপ করছে না, তবে সহিংসতার তদন্তে বিশেষ টাস্কফোর্স কাজ করছে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বিক্ষোভ ও রংপুরের মহাসমাবেশ দেখায়, চিন্ময়ের আন্দোলন রাজধানী-মাঠ পেরিয়ে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ছড়িয়েছে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা-আইন নিয়ে চাপ বাড়লে সরকারকে একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা ও কূটনৈতিক ভারসাম্য সামলাতে হবে। চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত দমন না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে, যা আদালতের রায় ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে।
পরবর্তী ধাপ
- ৪ মে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ শুনানি;জামিন স্থায়ী না হলে চিন্ময় ফের কারাগারে যেতে পারেন
• তদন্ত কমিটি ২১ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিলে অভিযোগপত্র দ্রুত গঠনের সম্ভাবনা
• ১ মে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ‘ধন্যবাদ সভা’—পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা মোতায়েন
• সংখ্যালঘু সুরক্ষা-আইন ও চাঁদাবাজি দমনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে
চিন্ময় দাসকে ঘিরে আইনি-রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ঢাকা-রংপুরের জনমত-চাপ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্ন—সব মিলিয়ে প্রশাসন, কূটনীতি ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপ এখন জরুরি।