লন্ডনে সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের বৈঠক নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ১০ জুন লন্ডনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “আমাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী হয়তো এখন কানাডায় আছেন।” অথচ ডাউনিং স্ট্রিটের সর্বশেষ কর্মসূচি বলছে, স্টারমার সে দিন লন্ডনেই ছিলেন এবং ১৩ জুন শুক্রবারের আগে তাঁর কানাডা যাত্রা নেই।
স্টারমারের বর্তমান কর্মসূচি
১০ জুন দুপুরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে নিহত শিশু বেবে কিং, এলসি ডট স্ট্যানকম্ব ও অ্যালিস আগুয়ারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। আগামী ১৩ জুন তিনি কানাডার পথে রওনা হবেন এবং ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে নিরাপত্তা-বাণিজ্য অংশীদারত্ব নিয়ে বৈঠক করবেন।
ইউনূসের সফর ও সম্ভাব্য বৈঠক
৯ জুন চার দিনের সরকারি সফরে ইউনূস লন্ডনে পৌঁছানোর পর থেকে ব্রিটিশ সরকারপক্ষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আশা প্রকাশ করা হচ্ছিল। তবে ১০ জুন হাইকমিশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “সময় ও শিডিউল মিললে বৈঠক হতে পারে।” এ বিষয়ে হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন প্রথম আলোকে ‘না’ জানিয়েছেন—অর্থাৎ কোনো আনুষ্ঠানিক সূচি এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বিভ্রান্তির উৎস কোথায়?
প্রেস সচিবের বক্তব্যে স্টারমারের ‘কানাডা সফর’ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলেও সরকারি নথি ও মূলধারা সংবাদমাধ্যমের তথ্য একে সমর্থন করে না। ধারণা করা হচ্ছে, একটি অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিং বা পার্লামেন্ট সদস্যের অসম্পূর্ণ তথ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ফলে ইউনূসপক্ষকে হাইকমিশনের মাধ্যমে নতুন করে সময় চেয়ে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।
লন্ডনে ইউনূসকে ঘিরে প্রতিবাদ ও আইনি চ্যালেঞ্জ
এদিকে ইউনূসের সফরকে কেন্দ্র করে লন্ডনের হোটেল প্রাঙ্গণে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বিক্ষোভ দেখা যায়। অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা করার প্রস্তুতির কথাও প্রকাশ্যে এসেছে।
সম্ভাব্য বৈঠক না-হলে কূটনৈতিক বার্তা
একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন নেতা দেখা না-করলে বার্তাটি হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক শীতলতা, বিশেষ করে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে। অন্যদিকে, স্টারমারের কানাডা সফর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতির ‘আটলান্টিক-প্যাসিফিক’ অগ্রাধিকারকে তুলে ধরে, যেখানে মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট আলোচনায় বাংলাদেশ আপাতত সামনে আসছেন না।
কিয়ার স্টারমার এখনো লন্ডনে রয়েছেন—এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ায় স্পষ্ট হলো, ইউনূসপক্ষের আগে প্রদান করা বক্তব্য ছিল অসম্পূর্ণ। বৈঠক শেষ পর্যন্ত আদৌ হবে কি না, তা নির্ভর করছে দু’পক্ষের সূচি-মেলানোর সক্ষমতার ওপর। আর বৈঠক না-হলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সমর্থন জোগাড়ে এ সফর বড় ধরনের ধাক্কা।