অস্বাস্থ্যকর জীবন থেকে পরিবর্তনের শুরু
২০২১ সালে আশান্তি নান্দিকা নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন তার বয়স ছিল ৩৩ বছর এবং তিনি একটি খাদ্য ও পানীয় চেইনের ব্যবসা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। তার উচ্চতা ছিল ১.৬৫ মিটার (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি) এবং ওজন ৯৫ কেজি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের হিসাবে এটি ছিল স্থূলতার পর্যায়ে।
তিনি কিটোজেনিক ডায়েট, কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েটসহ নানা ধরণের জনপ্রিয় ডায়েট চেষ্টা করেন এবং নিয়মিত ব্যায়ামও করতেন। তিনজন আলাদা প্রশিক্ষকের সঙ্গে কাজ করা এবং স্থানীয় একটি বুটক্যাম্পে যোগ দেওয়ার পরও ফলাফল ছিল অল্প সময়ের জন্য। শুরুতে কিছুটা ওজন কমলেও কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবার আগের মতো বেড়ে যেত।
নান্দিকা বলেন, “আমার শ্রীলঙ্কান সাংস্কৃতিক পটভূমিতে ভাত আমাদের প্রধান খাবার। কিন্তু অনেক ডায়েটে ভাত খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। আমি সপ্তাহে কয়েকদিন বাইরে খেতেও পছন্দ করি। এসব কারণে এসব ডায়েট মেনে চলা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।”

স্বামী-স্ত্রীর জন্য স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা
পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয় যখন তার স্বামী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাদের দুজনকেই সতর্ক করেন যে, তারা যদি ওজন কমিয়ে খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামে গুরুত্ব না দেন তবে ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
নান্দিকা বলেন, “আমাদের আট বছরের মেয়ে আর্যা আছে। তার জন্যই আমরা সুস্থ হতে চেয়েছিলাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একটি জাগরণের মুহূর্ত।”
এরপর তারা অনলাইনে তথ্য খুঁজতে থাকেন। কিন্তু ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সার, বিভিন্ন আর্টিকেল এবং ভিডিওর ভিড়ে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।

অনলাইন কোচের সঙ্গে যাত্রা শুরু
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নান্দিকা তার এক বন্ধুর মাধ্যমে ভারতের অনলাইন ফিটনেস ট্রেনার শেখ নাদির সিদ্দিকীর কথা জানতে পারেন। তিনি সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানিয়ে দেন যে তার প্রধান লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করা।
সিদ্দিকী বলেন, “নান্দিকা যখন আমার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করেন তখন তার ওজন ছিল প্রায় ৮৫ কেজি। তিনি স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন এবং শক্তি বাড়াতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে ক্যালরি হিসাব করা, পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন, এবং নিয়মিত ব্যায়াম সম্পর্কে নির্দেশনা দিই।”
তিনি নির্দিষ্ট কোনো ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ দেননি। বরং এমন একটি খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে বলেন যা তার জীবনধারার সঙ্গে মানানসই।
সিদ্দিকীর মতে, প্রতিটি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন, ফলমূল, শাকসবজি এবং সঠিক পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকা জরুরি।
নতুন রুটিনে সফলতা
নান্দিকা প্রথমে ক্যালরি গোনা এবং সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে কিছুটা সমস্যায় পড়লেও সিদ্দিকীর সাপ্তাহিক ফিডব্যাকের মাধ্যমে ধীরে ধীরে উন্নতি করেন।
নান্দিকা বলেন, “কোনো খাবার একেবারে নিষিদ্ধ ছিল না। তবে পরিমাণের দিকে নজর রাখতে হতো। আমি নিশ্চিত করতাম যে প্রতিটি খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং আঁশ সঠিক মাত্রায় আছে।”
প্রথমে সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম করলেও পরে তিন দিনের রুটিনে চলে আসেন। নিয়মিত ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টাই তার সফলতার মূল চাবিকাঠি ছিল।

৩০ কেজি ওজন কমানো এবং নতুন লক্ষ্য
নান্দিকা ধীরে ধীরে ওজন কমাতে শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দৃশ্যমান হয়। মোট ৩০ কেজি ওজন কমিয়ে বর্তমানে তার ওজন ৫৫ কেজি, যা তিনি গত চার মাস ধরে ধরে রেখেছেন।
এখন তার লক্ষ্য হলো আরও শক্তিশালী হওয়া এবং শরীরে পেশী বৃদ্ধি করা। এমনকি তিনি ফিটনেস প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এবং ভবিষ্যতে নিজেই ফিটনেস কোচ হওয়ার কথা ভাবছেন।
পরিবারের সক্রিয় জীবনধারা
নান্দিকা তার স্বামী ও মেয়েকে নিয়েও সক্রিয় জীবনযাপন শুরু করেছেন। পরিবার হিসেবে তারা হংকং-এর বিভিন্ন হাইকিং ট্রেইলে হাঁটাহাঁটি ও ট্রেকিং করেন।
মেয়ে আর্যা নিয়মিত ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে এবং সম্প্রতি একটি জিমন্যাস্টিকস ক্লাসে ভর্তি হয়েছে।
নান্দিকা বলেন, “আর্যা আমাদের সঙ্গে শীতকালে হাঁটতে এবং হাইকিংয়ে যোগ দেয়। ওকে এত অল্প বয়সে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হতে দেখে খুবই আনন্দিত লাগে।”
স্বাস্থ্যকর জীবনের শিক্ষা
নান্দিকা এখন বুঝতে পেরেছেন যে সুস্থ শরীর মানে কষ্টকর ডায়েট বা শরীরকে সীমার শেষ প্রান্তে ঠেলে দেওয়া নয়।
তার মতে, “সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র হলো বেসিক জিনিসগুলোতে ফিরে যাওয়া—স্মার্ট খাবার নির্বাচন, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং সক্রিয় জীবনযাপন। শর্টকাট কোনো সমাধান নয়।”
নান্দিকার এই পরিবর্তন কেবল তার নিজের জীবনকেই বদলে দেয়নি, বরং তার পরিবারকেও অনুপ্রাণিত করেছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পথে হাঁটতে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















