ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে
রবিবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে লেবানন সরকার জানিয়েছে। তবে নিহতদের মধ্যে মার্কিন নাগরিক থাকার দাবি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, দক্ষিণ লেবাননের বিন্ত জবেইল শহরে তারা হিজবুল্লাহর এক কর্মীকে লক্ষ্য করে অভিযান চালায়। হামলায় আরও কিছু নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে বলেও তারা স্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আইডিএফ নিরীহ মানুষকে ক্ষতি করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে এবং এমন ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়। ঘটনাটি তদন্তাধীন।”
মার্কিন নাগরিক দাবিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব
লেবাননের সংসদ স্পিকার নাবিহ বেরি দাবি করেন, নিহতদের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিক বাবা ও তার তিন সন্তান ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ রাজি জানান, পরিবারের মা আহত হয়েছেন এবং তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র এ দাবি নাকচ করেন। তারা জানান, “পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল, তবে এখন পর্যন্ত প্রমাণ বলছে যে নিহত পাঁচজন মার্কিন নাগরিক নন।”
হামলার বিস্তারিত
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, একটি ড্রোন একটি মোটরসাইকেল ও একটি মার্সিডিজ গাড়িতে দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। গাড়িতে থাকা বাবা ও তার তিন সন্তান নিহত হন। মোটরসাইকেল আরোহী, যিনি হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনিও নিহত হন।
লেবাননের প্রতিক্রিয়া
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম ঘটনাটিকে “নাগরিকদের ওপর গণহত্যা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এ হামলা “দক্ষিণের গ্রামে ফেরা মানুষদের ভয় দেখানোর একটি বার্তা।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান ইসরায়েলের পুনরাবৃত্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকে তীব্রভাবে নিন্দা জানাতে।
রাষ্ট্রপতি জোসেফ আউন, যিনি বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিউ ইয়র্কে আছেন, বলেন যে ইসরায়েল “আন্তর্জাতিক প্রস্তাব, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি, অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করছে।” তিনি যোগ করেন, “আমাদের শিশুদের রক্তের বিনিময়ে কোনো শান্তি হতে পারে না।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, “দক্ষিণ লেবাননে একই পরিবারের তিন শিশুকে হত্যা করায় আমরা স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ।” সংস্থাটি এক পোস্টে লিখেছে, “শিশুদের ওপর হামলা অকল্পনীয়। কোনো শিশুর জীবন যুদ্ধের মূল্য হতে পারে না। সংঘাত বন্ধ করে প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
পটভূমি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
গত বছরের নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের “বিজয়” সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে।