১১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের খাইবার উপত্যকায় বিমান হামলা: অন্তত ৩০ জন নিহত, তিরাহে বিক্ষোভ

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের তিরাহ উপত্যকার মাতরে দারা গ্রামে রাত ২টার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। স্থানীয় সময় বিকেলে নিকটবর্তী শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষ এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। ঘটনাস্থলের ভিডিওতে আহত শিশুদের অস্থায়ী খাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সরকারি কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।

ঘটনা কোথায়, কখন, কীভাবে ঘটেছে

• সময়: সোমবার গভীর রাত প্রায় ২টা
• স্থান: মাতরে দারা, আপার তিরাহ (আকাখেল), খাইবার উপত্যকা, খাইবার পাখতুনখাওয়া
• কীভাবে: পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেট বিমান থেকে অন্তত ৮টি এলএস–৬ (LS-6) বোমা নিক্ষেপ করা হয়—এ তথ্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

লক্ষ্যবস্তু কারা ছিল

স্থানীয় পুলিশ জানায়, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)–সংশ্লিষ্ট যোদ্ধারা একটি কমপাউন্ডে বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ মজুত রেখেছিল। হামলার সময় ওই মজুত বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ বাড়ে। পুলিশ কর্মকর্তা জাফর খান দাবি করেন, টিটিপির স্থানীয় দুই কমান্ডার—আমান গুল ও মাসুদ খান—সেখানে আড্ডা গেঁড়েছিলেন এবং বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কিছু এলাকায় মসজিদেও অস্ত্র মজুতের চেষ্টা হয়েছিল।

ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত

• মৃত: অন্তত ৩০ জন (নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত)
• আহত: বহু; সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে
• ক্ষতি: চারটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে বলে তিরাহের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান। বহু বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ জটিল হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী দেখা গেছে

স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে আহত শিশুদের অস্থায়ী শয্যায় চিকিৎসা নিতে দেখা যায়, আশপাশে আতঙ্কিত স্বজনদের ভিড়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবী ও গ্রামবাসীদের।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–এর নেতারা হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারকে নিজেদের নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগে skব্যক্ত করেছেন। খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আবদুল গনি আফ্রিদি এক্স–এ লিখেছেন, আপার তিরাহ আকাখেলে শিশু, যুবক ও নারীদের হত্যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ; তিনি ঘটনাটিকে “রাষ্ট্রীয় বর্বরতা” আখ্যা দিয়ে জবাবদিহি ও বিচারের দাবি জানান। তাঁর কথায়, “যে উপত্যকায় একসময় শিশুদের হাসির শব্দ ছিল, এখন সেখানে ছোট ছোট লাশ পড়ে আছে—এ এক কালো কলঙ্ক।”

সরকারি অবস্থান

এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বিমান হামলা সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। এএফপি–কে তিরাহের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যোদ্ধা বিমান চারটি বাড়ি লক্ষ্যবস্তু করেছিল; তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) জানায়, মৃত্যুর খবর শুনে তারা গভীরভাবে মর্মাহত। সংস্থাটি দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে।

বিক্ষোভ

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাশের এক শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। নিহতদের ন্যায্যতা ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।

প্রেক্ষাপট: টিটিপি হামলা ও সীমান্তভিত্তিক নিরাপত্তা

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বেড়েছে; এর বড় অংশের দায় স্বীকার করেছে টিটিপি। আফগান তালেবান ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর টিটিপি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে বলে বিশ্লেষকদের মত। টিটিপি আলাদা সংগঠন হলেও আফগান তালেবানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; বহু নেতা ও যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

আমরা যা জানি—সংক্ষেপে

• খাইবার উপত্যকার মাতরে দারা গ্রামে রাত ২টার দিকে বিমান হামলা
• অন্তত ৮টি এলএস–৬ বোমা ব্যবহার; ধ্বংসস্তূপে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা
• নিহত অন্তত ৩০; নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত
• লক্ষ্যবস্তু: টিটিপি–সংশ্লিষ্ট কমপাউন্ড; ভিতরে বিস্ফোরক মজুত ছিল বলে পুলিশের দাবি
• চারটি বাড়ি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত; বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
• পিটিআই নেতাদের নিন্দা; “রাষ্ট্রীয় বর্বরতা” অভিযোগ
• এইচআরসিপি–র নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি
• সরকারিভাবে এখনো কোনো বক্তব্য নেই
• বিকেলে কাছাকাছি শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষের বিক্ষোভ

পাকিস্তানের খাইবার উপত্যকায় বিমান হামলা: অন্তত ৩০ জন নিহত, তিরাহে বিক্ষোভ

০৮:২৬:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের তিরাহ উপত্যকার মাতরে দারা গ্রামে রাত ২টার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। স্থানীয় সময় বিকেলে নিকটবর্তী শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষ এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। ঘটনাস্থলের ভিডিওতে আহত শিশুদের অস্থায়ী খাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সরকারি কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।

ঘটনা কোথায়, কখন, কীভাবে ঘটেছে

• সময়: সোমবার গভীর রাত প্রায় ২টা
• স্থান: মাতরে দারা, আপার তিরাহ (আকাখেল), খাইবার উপত্যকা, খাইবার পাখতুনখাওয়া
• কীভাবে: পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেট বিমান থেকে অন্তত ৮টি এলএস–৬ (LS-6) বোমা নিক্ষেপ করা হয়—এ তথ্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

লক্ষ্যবস্তু কারা ছিল

স্থানীয় পুলিশ জানায়, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)–সংশ্লিষ্ট যোদ্ধারা একটি কমপাউন্ডে বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ মজুত রেখেছিল। হামলার সময় ওই মজুত বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ বাড়ে। পুলিশ কর্মকর্তা জাফর খান দাবি করেন, টিটিপির স্থানীয় দুই কমান্ডার—আমান গুল ও মাসুদ খান—সেখানে আড্ডা গেঁড়েছিলেন এবং বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কিছু এলাকায় মসজিদেও অস্ত্র মজুতের চেষ্টা হয়েছিল।

ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত

• মৃত: অন্তত ৩০ জন (নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত)
• আহত: বহু; সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে
• ক্ষতি: চারটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে বলে তিরাহের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান। বহু বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ জটিল হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী দেখা গেছে

স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে আহত শিশুদের অস্থায়ী শয্যায় চিকিৎসা নিতে দেখা যায়, আশপাশে আতঙ্কিত স্বজনদের ভিড়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবী ও গ্রামবাসীদের।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–এর নেতারা হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারকে নিজেদের নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগে skব্যক্ত করেছেন। খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আবদুল গনি আফ্রিদি এক্স–এ লিখেছেন, আপার তিরাহ আকাখেলে শিশু, যুবক ও নারীদের হত্যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ; তিনি ঘটনাটিকে “রাষ্ট্রীয় বর্বরতা” আখ্যা দিয়ে জবাবদিহি ও বিচারের দাবি জানান। তাঁর কথায়, “যে উপত্যকায় একসময় শিশুদের হাসির শব্দ ছিল, এখন সেখানে ছোট ছোট লাশ পড়ে আছে—এ এক কালো কলঙ্ক।”

সরকারি অবস্থান

এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বিমান হামলা সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। এএফপি–কে তিরাহের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যোদ্ধা বিমান চারটি বাড়ি লক্ষ্যবস্তু করেছিল; তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) জানায়, মৃত্যুর খবর শুনে তারা গভীরভাবে মর্মাহত। সংস্থাটি দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে।

বিক্ষোভ

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাশের এক শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। নিহতদের ন্যায্যতা ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।

প্রেক্ষাপট: টিটিপি হামলা ও সীমান্তভিত্তিক নিরাপত্তা

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বেড়েছে; এর বড় অংশের দায় স্বীকার করেছে টিটিপি। আফগান তালেবান ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর টিটিপি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে বলে বিশ্লেষকদের মত। টিটিপি আলাদা সংগঠন হলেও আফগান তালেবানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; বহু নেতা ও যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

আমরা যা জানি—সংক্ষেপে

• খাইবার উপত্যকার মাতরে দারা গ্রামে রাত ২টার দিকে বিমান হামলা
• অন্তত ৮টি এলএস–৬ বোমা ব্যবহার; ধ্বংসস্তূপে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা
• নিহত অন্তত ৩০; নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত
• লক্ষ্যবস্তু: টিটিপি–সংশ্লিষ্ট কমপাউন্ড; ভিতরে বিস্ফোরক মজুত ছিল বলে পুলিশের দাবি
• চারটি বাড়ি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত; বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
• পিটিআই নেতাদের নিন্দা; “রাষ্ট্রীয় বর্বরতা” অভিযোগ
• এইচআরসিপি–র নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি
• সরকারিভাবে এখনো কোনো বক্তব্য নেই
• বিকেলে কাছাকাছি শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষের বিক্ষোভ