রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার প্রস্তাব করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রও রাজি হলে রাশিয়া ২০১০ সালের নিউ স্টার্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের সীমা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির পরেও আরও এক বছরের জন্য মেনে চলবে।২ সেপ্টেম্বর —
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, পুতিনের প্রস্তাবটি ‘খুবই ভালো শোনাচ্ছে’, তবে এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই মন্তব্য করবেন।
চুক্তির গুরুত্ব
নিউ স্টার্ট হলো যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে শেষ কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি। এটি উভয় দেশের জন্য সর্বোচ্চ ১,৫৫০টি মোতায়েনকৃত কৌশলগত ওয়ারহেড এবং ৭০০টি মিসাইল, সাবমেরিন ও বোম্বার রাখার সীমা নির্ধারণ করেছে। ২০২১ সালে পুতিন ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করেছিলেন।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দুই দেশ নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তে পারে।
পুতিনের ঘোষণা
পুতিন নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে বলেন,
“রাশিয়া ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর এক বছরের জন্য নিউ স্টার্টের মূল সীমাবদ্ধতাগুলো মানতে প্রস্তুত। এরপর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব এই স্বেচ্ছাআরোপিত সীমাবদ্ধতা বজায় রাখব কি না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পদক্ষেপ তখনই কার্যকর হবে, যদি যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে আচরণ করে এবং ভারসাম্য নষ্ট করার মতো কোনো পদক্ষেপ না নেয়।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে পুতিনের ওপর চাপ দিচ্ছেন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য। মস্কো বলছে, ইউক্রেন ইস্যু পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনাকে ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত রাশিয়া বলছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন কোনো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনায় বসা সম্ভব নয় যতক্ষণ না সম্পর্ক উন্নত হয়। কিন্তু পুতিনের সর্বশেষ প্রস্তাবকে অনেকেই একতরফা নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।
নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনার অভাব
ইউক্রেন ইস্যুতে বিরোধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এখনো কোনো নতুন আলোচনার সূচনা হয়নি। ট্রাম্প অবশ্য চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করে নতুন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করার কথা বলেছেন, তবে বেইজিং তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল বলেছেন, পুতিনের প্রস্তাব “ইতিবাচক ও স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ”। তিনি ওয়াশিংটনকেও সমানভাবে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে বিশ্ব সবচেয়ে তাৎক্ষণিক অস্তিত্বগত নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে পারে।
সতর্ক বার্তা
পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন বা সামরিক ভারসাম্য নষ্ট করার মতো পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়, তবে রাশিয়া তার যথাযথ জবাব দেবে।
রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ সিনেটর কনস্টান্টিন কসাচেভ বলেন, পুতিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, তিনি নতুন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ওয়াশিংটন এই সংকেত সঠিকভাবে বুঝবে।