শক্তিশালী ঝড়ের আঘাত
২০২৫ সালের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে চিহ্নিত সুপার টাইফুন রাগাসা ফিলিপাইনে আঘাত হেনেছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঝড়টি কিছুটা দুর্বল হলেও এখনো প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস ও ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) রাগাসা উত্তর কাগায়ান প্রদেশের বাবুয়ান দ্বীপপুঞ্জের পাঙ্গুইতান দ্বীপে আছড়ে পড়ে। এতে ঘণ্টায় ২৮৫ কিলোমিটার গতির ঝোড়ো হাওয়া বইছে। ঝড়টি পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ চীনের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধস, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
দেশজুড়ে অনেক এলাকায় স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এর মধ্যে রাজধানী ম্যানিলাও রয়েছে।
বাবুয়ান ও বাতানেস দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে, যাদের অনেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটান। কালায়ান দ্বীপের তথ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঝড়ে একটি স্কুলের ছাদ উড়ে গিয়ে পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে পড়েছে, এতে একজন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “সামনে যে নারিকেল গাছগুলো দুলছে, আগে সেখানে আটটি ছিল। এখন মাত্র চারটি দাঁড়িয়ে আছে। এটিই প্রমাণ করে টাইফুন কতটা শক্তিশালী।”
তাইওয়ান ও আশপাশের প্রভাব
ফিলিপাইনের আঘাতের পর ঝড়টি তাইওয়ানের কাছ দিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরাসরি তাইওয়ানে আঘাত হানার সম্ভাবনা না থাকলেও দ্বীপটির পূর্ব উপকূলে ভারী বৃষ্টি হবে। প্রায় ৩০০ জনকে হুয়ালিয়ান কাউন্টি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ ও পূর্ব তাইওয়ানের বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক পথ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং কিছু ফেরি চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।
চীনে প্রস্তুতি
চীনের গুয়াংডং প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝড়টি বিপর্যয়কর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। মঙ্গলবার থেকেই ভারী বৃষ্টি ও তীব্র বাতাস শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
শেনঝেন শহরে ৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সময় শহরের সুপারমার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ভিড় বেড়ে গেছে। অনেক দোকানে সোমবার দুপুরেই রুটি শেষ হয়ে যায়।
হংকং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হবে। স্কুল বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। হংকং থেকে ক্যাথে প্যাসিফিক ৫০০টি ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং হংকং এয়ারলাইন্স সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
ফিলিপাইনের সংকট ও ক্ষোভ
ফিলিপাইনে রাগাসাকে স্থানীয়ভাবে ‘নান্দো’ বলা হচ্ছে। দেশটি ইতিমধ্যেই কয়েক সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ মৌসুমি বন্যার ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
রবিবার দেশজুড়ে হাজারো মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। তাদের অভিযোগ, সরকারের দুর্নীতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণের অবকাঠামো মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সুপার টাইফুন রাগাসা ফিলিপাইনে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে এবং এর প্রভাব তাইওয়ান, হংকং ও দক্ষিণ চীনে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিধস ও অবকাঠামো ধ্বংসের ঝুঁকি সামনে রেখে ব্যাপক সরিয়ে নেওয়া কার্যক্রম চলছে।