০৩:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

মৃত্যু পথযাত্রী সাবেক মন্ত্রীর হাতে হাতকড়া নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক এমপি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৫)। মৃত্যুর আগে তার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে হাতে হাতকড়া পরা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

বিতর্কের সূত্রপাত

ছবিতে দেখা যায়, শ্বাসকষ্টে কাতর এক বৃদ্ধ মন্ত্রী হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন, আর তার হাত শক্ত করে আটকানো লোহার হাতকড়ায় বাঁধা। এই দৃশ্য প্রকাশের পর মানবাধিকারকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত অনেকেই বিষয়টিকে অমানবিক বলে সমালোচনা করেছেন।

মৃত্যু ও অসুস্থতা

হাসপাতাল সূত্র জানায়, তিনি ‘আনকন্ট্রোলড বাওয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ রোগে ভুগছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি মারা যান।

প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—প্রায় অচেতন, মৃত্যুপথযাত্রী একজন বৃদ্ধকে হাতকড়া পরানোর প্রয়োজন কেন? মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এটি শুধু নূরুল মজিদের পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য বেদনাদায়ক। রাষ্ট্রের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।

কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

কারা অধিদফতরের এআইজি (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ দাবি করেন, ছড়ানো ছবিটি পুরোনো। তিনি বলেন, “হুমায়ূন সাহেব সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন, সেখানে হ্যান্ডকাফ থাকার সুযোগই ছিল না। পুরোনো ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে।”

অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্র জানায়, ছবিটি তোলা হয়েছিল ২৭ সেপ্টেম্বর, যখন তাকে মেডিসিন ইউনিটের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি এক রাত ছিলেন, এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

রাজনৈতিক পটভূমি

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। দীর্ঘ এক বছরের কারাবাসের মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মানবাধিকার কর্মীদের অবস্থান

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে হাতকড়া পরানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর আগে এমন দৃশ্য বহুবার দেখা গেছে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী। প্রায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধকে নিরাপত্তার নামে শিকল পরানো সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যেন একই অবস্থায় আটকে আছে। এত ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।”

সমালোচনা ও দাবি

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, আইনের নামে যে প্রথা অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকেও অমানবিক আচরণের শিকার করে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো বন্দিদের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃত্যু পথযাত্রী সাবেক মন্ত্রীর হাতে হাতকড়া নিয়ে বিতর্ক

১২:০৫:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক এমপি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৫)। মৃত্যুর আগে তার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে হাতে হাতকড়া পরা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

বিতর্কের সূত্রপাত

ছবিতে দেখা যায়, শ্বাসকষ্টে কাতর এক বৃদ্ধ মন্ত্রী হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন, আর তার হাত শক্ত করে আটকানো লোহার হাতকড়ায় বাঁধা। এই দৃশ্য প্রকাশের পর মানবাধিকারকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত অনেকেই বিষয়টিকে অমানবিক বলে সমালোচনা করেছেন।

মৃত্যু ও অসুস্থতা

হাসপাতাল সূত্র জানায়, তিনি ‘আনকন্ট্রোলড বাওয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ রোগে ভুগছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি মারা যান।

প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—প্রায় অচেতন, মৃত্যুপথযাত্রী একজন বৃদ্ধকে হাতকড়া পরানোর প্রয়োজন কেন? মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এটি শুধু নূরুল মজিদের পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য বেদনাদায়ক। রাষ্ট্রের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।

কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

কারা অধিদফতরের এআইজি (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ দাবি করেন, ছড়ানো ছবিটি পুরোনো। তিনি বলেন, “হুমায়ূন সাহেব সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন, সেখানে হ্যান্ডকাফ থাকার সুযোগই ছিল না। পুরোনো ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে।”

অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্র জানায়, ছবিটি তোলা হয়েছিল ২৭ সেপ্টেম্বর, যখন তাকে মেডিসিন ইউনিটের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি এক রাত ছিলেন, এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

রাজনৈতিক পটভূমি

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। দীর্ঘ এক বছরের কারাবাসের মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মানবাধিকার কর্মীদের অবস্থান

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে হাতকড়া পরানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর আগে এমন দৃশ্য বহুবার দেখা গেছে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী। প্রায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধকে নিরাপত্তার নামে শিকল পরানো সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যেন একই অবস্থায় আটকে আছে। এত ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।”

সমালোচনা ও দাবি

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, আইনের নামে যে প্রথা অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকেও অমানবিক আচরণের শিকার করে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো বন্দিদের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা।