১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
সাগর পাবলিশার্স, পাকিস্তানী চরিত্র ও “আওয়ামী লীগ আঁচাচ্ছে” সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব বেতনা নদী: সাতক্ষীরার প্রাণ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৪) মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন সাংবিধানিক সংশোধনী বিল নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোট, বিরোধীদের ওয়াকআউট ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,১৩৯ জন এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকির সতর্কতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ আমদানি সুবিধা: রমজানের ১০ পণ্য সহজে আমদানির নির্দেশনা নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়: ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান

বেতনা নদী: সাতক্ষীরার প্রাণ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলের গর্ব, ইতিহাস এবং জীবিকার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বেতনা নদী। এই নদী শুধু একটি জলসম্পদ নয়, এটি স্থানীয় মানুষের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং জীবনের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, যুগের পর যুগে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার কারণে বেতনা নদী এখন সংকটের মুখোমুখি। নদীর পলি জমা, নাব্যতা হ্রাস এবং দূষণ সমস্যার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনও এর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই ফিচারটিতে বেতনা নদী, তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং পরিবেশগত সংকটগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

বেতনা নদীর অবস্থান ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য

বেতনা নদী বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূলত সুন্দরবন বনাঞ্চলের কাছে অবস্থিত, যা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত। নদীটি গড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর শাখা-প্রশাখাগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় জলসম্পদে অবদান রাখে।

বেতনা নদী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন এবং মিঠা পানির স্তরের ওঠানামায় অত্যন্ত প্রভাবিত। এটি পূর্বদিকে তিরল্যান্ড নদীকে সংযুক্ত করে এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়ে যায়।

নদীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব

বেতনা নদী প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। প্রাচীন বাংলাদেশে নদীগুলোর ভূমিকাই ছিল বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম। বেতনা নদীও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সময় এই নদীকে দিয়ে স্থানীয় মানুষ মৎস্য শিকার, কৃষি ও বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতো। খুলনা ও সাতক্ষীরার কৃষিকাজের জন্য নদীটির পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বেতনা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আন্তঃসীমান্ত নদী - রোদ্দুরে

বেতনার সঙ্গে সাতক্ষীরা ও খুলনার সম্পর্ক

সাতক্ষীরা ও খুলনার মানুষের জীবনে বেতনা নদী একটি অমূল্য সম্পদ। নদীটি এখানকার কৃষি ও মৎস্য শিল্পে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সাতক্ষীরার মানুষ মূলত জলাভূমি, মাছ চাষ এবং ছোট-বড় জলাশয়ে নির্ভরশীল। নদীটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য জীবিকা উপার্জন, কৃষিকাজ এবং মৎস্য শিকারের উৎস। তবে, বর্তমানে নদীটির অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় এখানকার জীবিকা সংগ্রহের উপায়ও হুমকির মুখে পড়েছে।

নদীর জীবনধারা ও স্থানীয় জনগণের উপর প্রভাব

বেতনা নদী স্থানীয় মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীটি জীবিকার জন্য মাছ ধরা, কৃষিকাজের জন্য সেচ ব্যবস্থা, পানির যোগান এবং পরিবহন সুবিধা প্রদান করতো। তবে, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও দূষণের কারণে স্থানীয় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। মাছের প্রাচুর্য কমে যাওয়ায় মাছ শিকারীরা তাদের পুরনো পেশা থেকে সরে যাচ্ছে এবং কৃষকরা সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না।

মৎস্য ও কৃষি নির্ভর অর্থনীতি

বেতনা নদী, সাতক্ষীরা এবং খুলনার অর্থনীতির একটি প্রধান উৎস। এখানকার মৎস্য শিল্পের সঙ্গে নদীটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ মূলত নদী থেকে মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে, নদীটির পলি জমা এবং জলপ্রবাহের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মাছ ধরার পদ্ধতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। একইভাবে, কৃষিকাজের জন্য সেচের পানি পাওয়ার জন্য এই নদীটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বর্তমানে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও নদী সংকট

জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীজুড়ে নদী ও জলাশয়ের অবস্থার উপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। বেতনা নদীও এর ব্যতিক্রম নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন নদীটির নাব্যতায় হ্রাস এবং বন্যার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে। নদীটি আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রবাহে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, নদী অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর দুর্ভোগ বাড়ছে।

সাতক্ষীরার শত মানুষের জীবিকার মাধ্যম এখন বেতনা নদী

পলি জমা, নাব্যতা হ্রাস ও ভাঙন সমস্যা

বেতনা নদীতে পলি জমা এবং নাব্যতা হ্রাস এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং জলপ্রবাহের সঠিক প্রবাহ না থাকার কারণে নদীটির গভীরতা কমে যাচ্ছে এবং জলাধারের স্থানীয় অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা, কারণ নাব্যতা হ্রাসের কারণে নৌকা চলাচলে সমস্যা হচ্ছে এবং মৎস্য শিকার বা কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

নদী দূষণ ও মানবিক অব্যবস্থাপনা

বেতনা নদী বর্তমানে দূষণের শিকার। শিল্পকারখানার বর্জ্য, নগরী থেকে আসা দূষিত পানি, এবং কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের কারণে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে, নদীটি পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণ এখন আগের মতো নদী থেকে নিরাপদ পানি নিতে পারছে না। মাছ ধরার পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকি।

বেতনা পুনরুদ্ধারে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ

বেতনা নদীকে পুনরুদ্ধার করতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নদীটির নাব্যতা বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংস্থা এবং জাতীয় সরকার একযোগভাবে নদীটির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করছে। তবে, এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

বেতনা নদীর নবজন্মে সাতক্ষীরায় জলবদ্ধতা মুক্ত কৃষি বিপ্লব

সংস্কৃতি, সাহিত্য ও লোকজ জীবনে বেতনার প্রভাব

বেতনা নদী স্থানীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যেও গভীরভাবে প্রভাবিত। নদীটির নামের সঙ্গে বিভিন্ন কাব্য, গান, এবং লোকগাথা যুক্ত রয়েছে। স্থানীয় মানুষের জীবনে নদীটি এক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। তাদের সাংস্কৃতিক জীবন, উৎসব এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রম নদীটির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও টেকসই পরিকল্পনা

বেতনা নদীকে পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। নদীর দূষণ, পলি জমা, নাব্যতা হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। এর পাশাপাশি, নদীটির সাথে জড়িত মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করার জন্য স্থানীয় উদ্যোগের সাথে সরকারের পরিকল্পনাও গুরুত্বপূর্ণ।

বেতনা নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হলেও বর্তমানে এটি নানা সংকটের মুখোমুখি। স্থানীয় জনগণের জীবিকা, পরিবেশ এবং সংস্কৃতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে, নানা পরিবেশগত সমস্যা এবং ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে নদীটি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নদীটির সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে একটি টেকসই পরিকল্পনা গঠন করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই নদীর উপকারিতা ভোগ করতে পারে।


#বেতনা_নদী #খুলনা_সাতক্ষীরা #নদী_সংকট

জনপ্রিয় সংবাদ

সাগর পাবলিশার্স, পাকিস্তানী চরিত্র ও “আওয়ামী লীগ আঁচাচ্ছে”

বেতনা নদী: সাতক্ষীরার প্রাণ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি

১০:০০:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলের গর্ব, ইতিহাস এবং জীবিকার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বেতনা নদী। এই নদী শুধু একটি জলসম্পদ নয়, এটি স্থানীয় মানুষের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং জীবনের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, যুগের পর যুগে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার কারণে বেতনা নদী এখন সংকটের মুখোমুখি। নদীর পলি জমা, নাব্যতা হ্রাস এবং দূষণ সমস্যার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনও এর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই ফিচারটিতে বেতনা নদী, তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং পরিবেশগত সংকটগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

বেতনা নদীর অবস্থান ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য

বেতনা নদী বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূলত সুন্দরবন বনাঞ্চলের কাছে অবস্থিত, যা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত। নদীটি গড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর শাখা-প্রশাখাগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় জলসম্পদে অবদান রাখে।

বেতনা নদী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন এবং মিঠা পানির স্তরের ওঠানামায় অত্যন্ত প্রভাবিত। এটি পূর্বদিকে তিরল্যান্ড নদীকে সংযুক্ত করে এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়ে যায়।

নদীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব

বেতনা নদী প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। প্রাচীন বাংলাদেশে নদীগুলোর ভূমিকাই ছিল বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম। বেতনা নদীও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সময় এই নদীকে দিয়ে স্থানীয় মানুষ মৎস্য শিকার, কৃষি ও বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতো। খুলনা ও সাতক্ষীরার কৃষিকাজের জন্য নদীটির পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বেতনা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আন্তঃসীমান্ত নদী - রোদ্দুরে

বেতনার সঙ্গে সাতক্ষীরা ও খুলনার সম্পর্ক

সাতক্ষীরা ও খুলনার মানুষের জীবনে বেতনা নদী একটি অমূল্য সম্পদ। নদীটি এখানকার কৃষি ও মৎস্য শিল্পে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সাতক্ষীরার মানুষ মূলত জলাভূমি, মাছ চাষ এবং ছোট-বড় জলাশয়ে নির্ভরশীল। নদীটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য জীবিকা উপার্জন, কৃষিকাজ এবং মৎস্য শিকারের উৎস। তবে, বর্তমানে নদীটির অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় এখানকার জীবিকা সংগ্রহের উপায়ও হুমকির মুখে পড়েছে।

নদীর জীবনধারা ও স্থানীয় জনগণের উপর প্রভাব

বেতনা নদী স্থানীয় মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীটি জীবিকার জন্য মাছ ধরা, কৃষিকাজের জন্য সেচ ব্যবস্থা, পানির যোগান এবং পরিবহন সুবিধা প্রদান করতো। তবে, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও দূষণের কারণে স্থানীয় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। মাছের প্রাচুর্য কমে যাওয়ায় মাছ শিকারীরা তাদের পুরনো পেশা থেকে সরে যাচ্ছে এবং কৃষকরা সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না।

মৎস্য ও কৃষি নির্ভর অর্থনীতি

বেতনা নদী, সাতক্ষীরা এবং খুলনার অর্থনীতির একটি প্রধান উৎস। এখানকার মৎস্য শিল্পের সঙ্গে নদীটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ মূলত নদী থেকে মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে, নদীটির পলি জমা এবং জলপ্রবাহের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মাছ ধরার পদ্ধতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। একইভাবে, কৃষিকাজের জন্য সেচের পানি পাওয়ার জন্য এই নদীটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বর্তমানে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও নদী সংকট

জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীজুড়ে নদী ও জলাশয়ের অবস্থার উপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। বেতনা নদীও এর ব্যতিক্রম নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন নদীটির নাব্যতায় হ্রাস এবং বন্যার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে। নদীটি আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রবাহে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, নদী অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর দুর্ভোগ বাড়ছে।

সাতক্ষীরার শত মানুষের জীবিকার মাধ্যম এখন বেতনা নদী

পলি জমা, নাব্যতা হ্রাস ও ভাঙন সমস্যা

বেতনা নদীতে পলি জমা এবং নাব্যতা হ্রাস এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং জলপ্রবাহের সঠিক প্রবাহ না থাকার কারণে নদীটির গভীরতা কমে যাচ্ছে এবং জলাধারের স্থানীয় অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা, কারণ নাব্যতা হ্রাসের কারণে নৌকা চলাচলে সমস্যা হচ্ছে এবং মৎস্য শিকার বা কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

নদী দূষণ ও মানবিক অব্যবস্থাপনা

বেতনা নদী বর্তমানে দূষণের শিকার। শিল্পকারখানার বর্জ্য, নগরী থেকে আসা দূষিত পানি, এবং কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের কারণে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে, নদীটি পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণ এখন আগের মতো নদী থেকে নিরাপদ পানি নিতে পারছে না। মাছ ধরার পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকি।

বেতনা পুনরুদ্ধারে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ

বেতনা নদীকে পুনরুদ্ধার করতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নদীটির নাব্যতা বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংস্থা এবং জাতীয় সরকার একযোগভাবে নদীটির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করছে। তবে, এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

বেতনা নদীর নবজন্মে সাতক্ষীরায় জলবদ্ধতা মুক্ত কৃষি বিপ্লব

সংস্কৃতি, সাহিত্য ও লোকজ জীবনে বেতনার প্রভাব

বেতনা নদী স্থানীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যেও গভীরভাবে প্রভাবিত। নদীটির নামের সঙ্গে বিভিন্ন কাব্য, গান, এবং লোকগাথা যুক্ত রয়েছে। স্থানীয় মানুষের জীবনে নদীটি এক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। তাদের সাংস্কৃতিক জীবন, উৎসব এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রম নদীটির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও টেকসই পরিকল্পনা

বেতনা নদীকে পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। নদীর দূষণ, পলি জমা, নাব্যতা হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। এর পাশাপাশি, নদীটির সাথে জড়িত মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করার জন্য স্থানীয় উদ্যোগের সাথে সরকারের পরিকল্পনাও গুরুত্বপূর্ণ।

বেতনা নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হলেও বর্তমানে এটি নানা সংকটের মুখোমুখি। স্থানীয় জনগণের জীবিকা, পরিবেশ এবং সংস্কৃতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে, নানা পরিবেশগত সমস্যা এবং ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে নদীটি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নদীটির সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে একটি টেকসই পরিকল্পনা গঠন করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই নদীর উপকারিতা ভোগ করতে পারে।


#বেতনা_নদী #খুলনা_সাতক্ষীরা #নদী_সংকট