ভারতের পুনে থেকে উঠে আসা এবং বর্তমানে দুবাই–নিবাসী শিল্পী ও লেখক শীতল দূর্বে তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে শুধু সৌন্দর্য নয়, সামাজিক পরিবর্তনের বার্তাও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পিকাসো গ্যালারিতে (৬–১৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত তার একক প্রদর্শনী Grace Rising–এ তিনি তুলে ধরেছেন নানাবর্ণের অনুভূতি, ভাবনা ও মানবিকতার শক্তি।
শৈশব থেকেই শিল্পের সঙ্গে যাত্রা
শীতল ছোটবেলা থেকেই শিল্প, নৃত্য ও সংগীতের পরিবেশে বড় হয়েছেন। সাংস্কৃতিকভাবে জড়িত তার বাবা–মায়ের সঙ্গে নিয়মিত প্রদর্শনী, কনসার্ট ও পারফরম্যান্স দেখতে যাওয়া তার শৈল্পিক চিন্তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
বিজ্ঞাপন খাতে কর্মজীবন শুরু করলেও, তিনি দ্রুতই বুঝতে পারেন—তার প্রকৃত পরিচয় হবে রঙ–তুলির জগতে। সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন পূর্ণকালীন শিল্পী।
শিল্পে প্রকৃতি, সমাজ ও মানবিকতার ছাপ
শীতলের শিল্প প্রকৃতি থেকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত। জলরং, অ্যাক্রিলিক, তেলরং ও মিশ্র মাধ্যমে তিনি সমান দক্ষতায় কাজ করেন।
প্রকৃতির রঙ, লয় ও ছন্দ তার ক্যানভাসে নানা রূপে প্রকাশ পেলেও, মানবিক দুরবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক সংকট তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। ফলে তার অনেক কাজেই সামাজিক সচেতনতার বার্তা দেখা যায়।
শিল্প দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো
শীতলের কাজ শুধু ক্যানভাসে সীমাবদ্ধ নয়—তিনি শিল্পচর্চাকে মানুষের সেবায় পরিণত করেছেন।
তিনি আলঝেইমার রোগীদের জন্য আর্ট থেরাপি, শোক–সহায়তা গ্রুপ এবং নানা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে শিল্পকর্ম দান করেছেন। দুবাই ও পুনের সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কর্মশালা পরিচালনা করেন।
তার কথায়:
“শিল্প থেরাপির কাজের মাধ্যমে দুবাইয়ের ‘Milestones Center’–এর অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের স্পর্শ করতে পেরেছি। পুনের ‘Wings for Dreams’–এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু শিক্ষায় অবদান রাখতে পেরেছি। হাসপাতাল, স্কুল কিংবা গ্রামে প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে—শিল্প কেবল পেশা নয়, এটি মানুষের সেবা।”
ভবিষ্যত পরিকল্পনা: আলো ছড়ানোর পথ
শীতল শিল্পকে পৌঁছে দিতে চান গ্রামাঞ্চল, অনাথাশ্রম ও সংকট–পীড়িত সম্প্রদায়ের কাছে।
তিনি বিশ্বাস করেন—
“সৃজনশীলতা ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে, অপরিচিতকে সংযুক্ত করতে পারে এবং ন্যায়সংগ্রামের শক্তি দিতে পারে। কিশোর বয়সে এক বস্তির শ্রেণিকক্ষে যে সত্য শিখেছি—অল্প দিয়েও অনেক কিছু করা যায়; সৌন্দর্য ভাগ করলে জীবনে পরিবর্তন আসে—আজও সেই সত্যই আমার পথ দেখায়।”
লেখক ও আন্তর্জাতিক শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি
তিনি শিশুদের জন্য দুটি বই লিখেছেন—Dream Diaries এবং Dream On—যা দুবাইয়ের এমিরেটস লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তার শিল্প প্রদর্শিত হয়েছে বিশ্বের বহু দেশে—
দুবাই, আবুধাবি, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাজ্যসহ আরও বহু দেশে।
সম্মানগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর একজন
- ২০২১ সালে Visionary Women Award
শিল্প তার কাছে পরিবর্তনের মাধ্যম
শীতলের ভাষায়:
“আমি শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়—রূপান্তরের জন্য শিল্প সৃষ্টি করি। শিল্প মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে পারে। আবেগ, সহমর্মিতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধকে রঙের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দিই।”
তিনি বিশ্বাস করেন—
রং শব্দের সীমা ছাড়িয়ে অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিটি রেখা এক একটি কণ্ঠস্বর, প্রতিটি রঙ অদেখা–অশ্রুত গল্পের সাক্ষ্য।
শীতল দূর্বের শিল্প শুধু সৌন্দর্যের খোঁজ নয়—এটি পরিবর্তনের অগ্রদূত।
তার ক্যানভাসে সৌন্দর্য ও উদ্দেশ্য মিলেমিশে মানুষকে ভাবায়, অনুভব করায় এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের আহ্বান জানায়।
তার কথায়—
“অদেখা ও উপেক্ষিত গল্পগুলো শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ পেলে, আশা ও সুস্থতার নতুন ঋতু এসে যায়।”
# শিল্প, #আন্তর্জাতিকশিল্পী,# দুবাই, #শীতলদূর্বে, #আর্টথেরাপি, #সামাজিকপরিবর্তন
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















