১৫ নভেম্বর ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (বিকেএফ)সহ ২২টি সংগঠনের উদ্যোগে ‘জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্ব সংগ্রাম দিবস’ উপলক্ষে একটি সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ও বৈশ্বিক পদক্ষেপের দাবি জানান।
সমাবেশের নেতৃত্ব
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড জায়েদ ইকবাল খান।
অংশগ্রহণকারী সংস্থা ও বক্তারা
সমাবেশে বক্তব্য দেন বিভিন্ন শ্রমিক, কৃষক, নারী ও আদিবাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন—
• ইকবাল ফারুক, নেতা, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ
• এ. এ. এম. ফয়েজ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন
• অমলি কিসকু, সভানেত্রী, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি
• শামীম আরা, সভানেত্রী, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন
• লাভলী ইয়াসমীন, সভাপতি, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন
• নাহিদুল হাসান নয়ন, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন
• মরিয়ম আক্তার, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশন
• জাহানারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ভাসমান নারী শ্রমিক ইউনিয়ন
• আশামণি, প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ কিষাণী সভা
• আল-আমিন, সাধারণ সম্পাদক, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন
• কৃষক নেতা শাহাবুদ্দিন মাতব্বর
• নারী নেত্রী রেহানা বেগম
• রবিউল ইসলাম, ইরেজার
• সুনু রানী দাস, দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থা
• আল-এমরান, কর্মকর্তা, সিপিআরডি
সহ আরও অনেকে।

জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশের ঝুঁকি
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।
• উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলছে
• দক্ষিণের দেশগুলোতে খরা, খাদ্যসংকট ও চরম আবহাওয়া বাড়ছে
• শিল্পদূষণ, নদী ও জলাভূমি দখল, কয়লা-গ্যাসনির্ভর জ্বালানি, কর্পোরেট লোভ—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে
বাংলাদেশে যে সংকটগুলো তীব্রভাবে দেখা দিচ্ছে—
• নদী দূষণ ও নদীভাঙন
• শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ ধ্বংস
• কৃষিজমি দখল ও বন উজাড়
• নিরাপদ পানির সংকট
• ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ
এসবই পরিবেশগত অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিফলন।
বক্তারা জানান, কৃষক, শ্রমিক, নারী, শিশু, জেলে, উপকূলবাসীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জলবায়ু অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনগণ আন্দোলনের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের জাতীয় দাবি
সমাবেশে ছয়টি জাতীয় দাবি তুলে ধরা হয়—
১. ভূমি ও কৃষি সংস্কার
— শিল্প ও রিয়েল এস্টেটের দখল থেকে কৃষিজমি রক্ষা
— ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা বৃদ্ধি
২. জৈবিক কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব
— নদী-জলাভূমি রক্ষা
— নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনকে রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার
৩. ন্যায়সঙ্গত শহর গঠন
— বাসস্থান, পানি, স্যানিটেশন, নিরাপদ পরিবহন ও বিদ্যুৎকে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা
৪. জলবায়ু ন্যায়, সামাজিক সংহতি ও প্রকৃতি রক্ষা
— সুন্দরবন, উপকূল, নদী ও কৃষিজমি ধ্বংসকারী সব প্রকল্প বন্ধ
৫. জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা
— কয়লা, তেল, গ্যাস ও শিল্পদূষণ বন্ধ
— নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তার
৬. দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি
— কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রের পরিবেশগত ও সামাজিক অপরাধের প্রতিকার নিশ্চিত করা

বৈশ্বিক দাবি
সমাবেশে চারটি আন্তর্জাতিক দাবি উপস্থাপন করা হয়—
১. কার্বন ঋণ পরিশোধ ও ক্ষতিপূরণ প্রদান
২. উন্নত দেশের ভোগবাদী উৎপাদন, যুদ্ধ বিনিয়োগ ও সম্পদ লুণ্ঠন বন্ধ
৩. বহুজাতিক কোম্পানির কর ফাঁকি ও মুনাফা পাচার বন্ধ
৪. খাদ্য, পানি ও জ্বালানির সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক ন্যায়নীতি প্রণয়ন
সমাবেশের মূল স্লোগান ও অঙ্গীকার
সমাবেশের মূল স্লোগান ছিল—
“মুনাফা নয়—জনগণ; কর্পোরেশন নয়—প্রকৃতি।”
বক্তারা ঘোষণা করেন,
• নদী, বন, উপকূল ও কৃষিজমি রক্ষার সংগ্রাম
• মানুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার
• পরিবেশ ন্যায়ের দাবিতে সামাজিক সংহতি
এই আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে এবং অব্যাহত থাকবে।
#জলবায়ুন্যায়বিচার #বিশ্বসংগ্রামদিবস #বাংলাদেশ #কৃষকফেডারেশন #পরিবেশসংগ্রাম #প্রান্তিকমানুষ #জলবায়ুকর্মসূচি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















