০৫:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
নির্বাচনের আগে ঢাকা-১০সহ তিন আসনে হঠাৎ বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা? ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত, হামাসের সতর্কতা: ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বিশ্বব্যাপী অস্বাস্থ্যকর আল্ট্রাপ্রসেসড খাবারের বিপুল লাভ এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব উত্তরায় গলা কাটা মরদেহ: অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে কিশোরকে হত্যা অ্যাফ্রিকান গোল্ডেন ক্যাট: একটি বিরল প্রজাতির সুরক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা ঠান্ডা হাত? এটি হতে পারে রেনো’স রোগ সাইনাস যন্ত্রণা কেন বাড়ে—কারণ, লক্ষণ ও সমাধান মুম্বইয়ের উচ্চ সতর্কতা: দিল্লি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত তিনজন আটক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা অনুমোদনকে স্বাগত জানাল জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শারজাহর হোলি কুরআন একাডেমি ও আইসেসকোর সহযোগিতা জোরদারের আলোচনা

জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ রাবির ৩ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পিটুনি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থীকে দেশীয় অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা আল ফারাবীও হামলার শিকার হন। বুধবার রাতে কাজলা ক্যানটিন এলাকায় এ নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে।


হামলার শিকার তিন শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থীর ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে তারা গুরুতর আহত হন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট সংলগ্ন কাজলা ক্যানটিনে খাবার খাওয়ার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজনের হাত কেটে যায়।

আহতরা হলেন—ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আল ফারাবী, ২০২৩-২৪ বর্ষের তামজিদ আহমেদ বখশী এবং নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজ রহমান। আহত বখশী রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে এবং ফারাবী ও মিনহাজ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ ছাড়েন ফারাবী

আল ফারাবী নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।

ক্যানটিনে ঢুকে এলোপাতাড়ি হামলা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে কাজলা ক্যানটিনে কয়েকজন শিক্ষার্থী রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় ১০–১৫ মোটরসাইকেলে করে মুখে কালো কাপড় ও হেলমেট পরিহিত একটি দল সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছবি দেখিয়ে একজনকে খুঁজতে থাকে। এরপর হঠাৎ তারা এলোপাতাড়ি হামলা শুরু করে। তাদের হাতে হাতুড়ি, রড, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল।

সেখান থেকে ফারাবী ও বখশীকে মারধর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় তারা। রাত পৌনে ১২টার দিকে ফারাবীকে বেতার মাঠের পাশে এবং বখশীকে হবিবুর রহমান হলের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ—নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ

হামলার পর রাতেই কিছু শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রাত দেড়টার দিকে কাজলা গেটে ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, জনসম্মুখে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে—নিরাপত্তা কোথায়? অবিলম্বে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে।

বখশীর বর্ণনা: “আসলডারে ধইরা ফালছি”

ভুক্তভোগী তামজিদ আহমেদ বখশী বলেন, ‘আমরা কাজলা ক্যানটিনে বসে খাচ্ছিলাম। এ সময় মুখোশ ও হেলমেট পরা একটি দল মোটরসাইকেলে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে ক্যানটিনের সামনে ফেলে পেটায় এবং রিকশায় তুলে সুইটের মোড়ের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে অন্ধকারে বসিয়ে নানা প্রশ্ন করে। একপর্যায়ে একজন ফোনে বলে, “আসলডারে ধইরা ফালছি, ওরে ছাড়।” পরে আধা ঘণ্টা হাঁটিয়ে আমাকে কাজলা মোল্লা স্কুলের পেছনে ফেলে যায়। তারা বলছিল, “ও ছাত্রলীগ, ওরে ধর।” তাদের কাউকে চিনতে পারিনি, তবে মনে হয়েছে ছাত্রলীগের কাউকে খুঁজতে গিয়ে আমাদের মারধর করেছে।’

“তুই ছাত্রলীগ করতি”—ঘটনার আরও প্রত্যক্ষদর্শী

প্রত্যক্ষদর্শী সিজান বলেন, ‘খাওয়ার সময় কয়েকজন মুখ ঢাকা ও হেলমেট পরা লোক এসে “তুই ছাত্রলীগ করতি” বলেই কলার ধরে ফারাবীকে মারতে শুরু করে। বখশী বাধা দিলে তাকেও মাটিতে ফেলে পেটায়। পরে বাইকে করে দুজনকে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকজন ফারাবীকে কিচেনে নিয়েও মারধর করে এবং কেউ বাধা দিলে গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। দুই ঘণ্টা পর তাদের ফেলে গেলে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

মিনহাজের ওপরও ধারালো অস্ত্রের আঘাত

আহত শিক্ষার্থী মিনহাজ রহমান বলেন, ‘আমি ক্যানটিনে খাবার নিতে এসেছিলাম। তখন কয়েকজন মিলে ফারাবীকে মারতে থাকে। তাকে বাঁচাতে গেলে আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘মুখ ঢেকে এবং কেউ কেউ হেলমেট পরে আমাদের দুজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পরে দুজনকেই উদ্ধার করা হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন।’

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’


জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনের আগে ঢাকা-১০সহ তিন আসনে হঠাৎ বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা?

জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ রাবির ৩ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পিটুনি

০৩:৪৩:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থীকে দেশীয় অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা আল ফারাবীও হামলার শিকার হন। বুধবার রাতে কাজলা ক্যানটিন এলাকায় এ নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে।


হামলার শিকার তিন শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থীর ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে তারা গুরুতর আহত হন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট সংলগ্ন কাজলা ক্যানটিনে খাবার খাওয়ার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজনের হাত কেটে যায়।

আহতরা হলেন—ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আল ফারাবী, ২০২৩-২৪ বর্ষের তামজিদ আহমেদ বখশী এবং নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজ রহমান। আহত বখশী রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে এবং ফারাবী ও মিনহাজ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ ছাড়েন ফারাবী

আল ফারাবী নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।

ক্যানটিনে ঢুকে এলোপাতাড়ি হামলা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে কাজলা ক্যানটিনে কয়েকজন শিক্ষার্থী রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় ১০–১৫ মোটরসাইকেলে করে মুখে কালো কাপড় ও হেলমেট পরিহিত একটি দল সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছবি দেখিয়ে একজনকে খুঁজতে থাকে। এরপর হঠাৎ তারা এলোপাতাড়ি হামলা শুরু করে। তাদের হাতে হাতুড়ি, রড, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল।

সেখান থেকে ফারাবী ও বখশীকে মারধর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় তারা। রাত পৌনে ১২টার দিকে ফারাবীকে বেতার মাঠের পাশে এবং বখশীকে হবিবুর রহমান হলের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ—নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ

হামলার পর রাতেই কিছু শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রাত দেড়টার দিকে কাজলা গেটে ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, জনসম্মুখে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে—নিরাপত্তা কোথায়? অবিলম্বে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে।

বখশীর বর্ণনা: “আসলডারে ধইরা ফালছি”

ভুক্তভোগী তামজিদ আহমেদ বখশী বলেন, ‘আমরা কাজলা ক্যানটিনে বসে খাচ্ছিলাম। এ সময় মুখোশ ও হেলমেট পরা একটি দল মোটরসাইকেলে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে ক্যানটিনের সামনে ফেলে পেটায় এবং রিকশায় তুলে সুইটের মোড়ের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে অন্ধকারে বসিয়ে নানা প্রশ্ন করে। একপর্যায়ে একজন ফোনে বলে, “আসলডারে ধইরা ফালছি, ওরে ছাড়।” পরে আধা ঘণ্টা হাঁটিয়ে আমাকে কাজলা মোল্লা স্কুলের পেছনে ফেলে যায়। তারা বলছিল, “ও ছাত্রলীগ, ওরে ধর।” তাদের কাউকে চিনতে পারিনি, তবে মনে হয়েছে ছাত্রলীগের কাউকে খুঁজতে গিয়ে আমাদের মারধর করেছে।’

“তুই ছাত্রলীগ করতি”—ঘটনার আরও প্রত্যক্ষদর্শী

প্রত্যক্ষদর্শী সিজান বলেন, ‘খাওয়ার সময় কয়েকজন মুখ ঢাকা ও হেলমেট পরা লোক এসে “তুই ছাত্রলীগ করতি” বলেই কলার ধরে ফারাবীকে মারতে শুরু করে। বখশী বাধা দিলে তাকেও মাটিতে ফেলে পেটায়। পরে বাইকে করে দুজনকে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকজন ফারাবীকে কিচেনে নিয়েও মারধর করে এবং কেউ বাধা দিলে গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। দুই ঘণ্টা পর তাদের ফেলে গেলে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

মিনহাজের ওপরও ধারালো অস্ত্রের আঘাত

আহত শিক্ষার্থী মিনহাজ রহমান বলেন, ‘আমি ক্যানটিনে খাবার নিতে এসেছিলাম। তখন কয়েকজন মিলে ফারাবীকে মারতে থাকে। তাকে বাঁচাতে গেলে আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘মুখ ঢেকে এবং কেউ কেউ হেলমেট পরে আমাদের দুজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পরে দুজনকেই উদ্ধার করা হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন।’

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’