শক্তিশালী ভূমিকম্পে সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শুক্রবার সকালে। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এই কম্পনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শিশু ও বয়স্কসহ বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
ভোরের এই ভূমিকম্পে বিভিন্ন ভবন, দেওয়াল ও কর্নিশ ভেঙে পড়ে প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটে। ঢাকার আর্মানিটোলা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ভবনের অংশ ভেঙে পড়ে মানুষ আহত হন। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলাতেও মৃত্যু ও আহতের খবর পাওয়া যায়।
ঢাকায় প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা
আর্মানিটোলার কোষাইটুলি এলাকায় একটি ভবনের রেলিং ভেঙে পড়লে ১৩ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন আব্দুর রহিম (৪৭), তার ছেলে আবdul আজিজ রিমন, এবং মেডিকেল শিক্ষার্থী রফিউল ইসলাম রাফি।
অন্য আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভূমিকম্পের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কমপক্ষে ১৮ জনকে আনা হয়। কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভবনের কর্নিশ, দেওয়াল ও প্লাস্টার খসে গিয়ে আহতের ঘটনা ঘটে।
– আর্মানিটোলার কোষাইটুলি এলাকায় আটতলা ভবনের কর্নিশ ও দেওয়াল খসে পড়ে ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন।
– খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ইট পড়ে এক পথচারী আহত হন।
– বারিধারায় এক বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে; আগুনের কারণ এখনও জানা যায়নি।
– শুত্রাপুরের স্বামীবাগ ও কালাবাগানের আবেদখালী রোডে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পাঠানো হয়, তবে পরে জানা যায় ভবনগুলো অক্ষত ছিল।
নরসিংদীতে দুইজনের মৃত্যু
নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলায় দেওয়াল ধসে দুইজন নিহত হন। নিহতরা হলেন মালিটা গ্রামের কাজম আলী (৭০) এবং সদর উপজেলার গাবতলী এলাকার ১০ বছর বয়সী ওমর ফারুক।
ওমর ফারুকের বাবা উজ্জ্বল হোসেনও আহত হয়ে ঢামেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
পরিবার জানায়, ভূমিকম্পের সময় ঘুমন্ত অবস্থায় কাজম আলীর ওপর দেওয়াল ভেঙে পড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নরসিংদীতে আরও ১০০ জনের বেশি আহত হন, যাদের বেশিরভাগই বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হতে গিয়ে আঘাত পান। তারা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জে এক শিশুর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেওয়াল ধসে এক বছরের শিশু ফাতেমা মারা যায়। তার মা কুলসুম বেগম ও আরেক নারী জেসমিন বেগম আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে কুলসুম বেগম মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন। এ সময় হঠাৎ পাশের একটি দেওয়াল ভেঙে পড়ে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফাতেমার মরদেহ বের করে।

গাজীপুরে শতাধিক শ্রমিক আহত
গাজীপুরের টঙ্গী, সদর ও শ্রীপুর এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানাগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই শক্তিশালী ভূমিকম্পে সারা দেশে আতঙ্কের পাশাপাশি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এখনো রয়ে গেছে কারণ বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলমান।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















