চীনের কূটনৈতিক ক্ষোভের পটভূমি
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানা এ তাকাইচি তাইওয়ান নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা “চমকপ্রদ” এবং “ভুল সিগনাল”। সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তাকাইচি ইঙ্গিত দেন, চীন যদি তাইওয়ানে সামরিক হামলা চালায়, তবে টোকিও প্রতিরক্ষামূলকভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে—এমন বক্তব্যকে বেইজিং লালরেখা অতিক্রম হিসেবে দেখছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই বিরোধ এখন দুই অর্থনৈতিক শক্তির সম্পর্কে নতুন চাপ তৈরি করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে ওয়াং বলেছেন, জাপান আবারও যুদ্ধোত্তর বাস্তবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং এ অবস্থান “সহ্য করা হবে না”।
এই প্রসঙ্গে চীন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের কাছেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠিয়েছে, যেখানে বেইজিং নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। টোকিও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, চীনের অভিযোগ “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” এবং জাপানের শান্তিপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ নীতি অপরিবর্তিত। অন্যদিকে বেইজিংয়ের দাবিকৃত তাইওয়ান সরকার চিঠিটিকে ইতিহাস বিকৃতি এবং জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যেখানে বলপ্রয়োগের হুমকি নিষিদ্ধ। বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা যত বাড়ছে, দ্বিপাক্ষিক বিরোধ এখন দ্রুত বহুপাক্ষিক মঞ্চেও ছড়িয়ে পড়ছে, যা বাণিজ্য ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতাকে জটিল করে তুলতে পারে।
বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সমীকরণ
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনা রাষ্ট্রমাধ্যমে জাপানের নতুন সরকারকে আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে, বিশেষ করে তাইওয়ান ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা নীতি নিয়ে। একাধিক জাপানি শিল্পীর কনসার্ট চীন বাতিল বা স্থগিত করেছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে, টোকিও যদি “ভুল পথ” থেকে সরে না আসে, তবে আরও পদক্ষেপ আসতে পারে। অন্যদিকে জাপানি কূটনীতিকরা বলছেন, তাইওয়ান প্রণালির যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া তাদের জন্য বাস্তবিক প্রয়োজন; কারণ মার্কিন ঘাঁটি ও জাপানি দ্বীপগুলো সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্রের খুব কাছে। টোকিও এখনো বলছে, তারা বর্তমান অবস্থা বজায় রাখার পক্ষে এবং বলপ্রয়োগ করে একতরফা পরিবর্তনের বিপক্ষে।
এ ঘটনার পটভূমিতে চীনের সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া, বিমান ও নৌ টহল আরও ঘন হয়েছে, যা তাইওয়ানকে ঘিরে অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জাপানের কঠোর ভাষা তারই প্রতিফলন যে দেশটি ধীরে ধীরে বেশি আক্রমণ-প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জনের পথে এগোচ্ছে। তবে কেউ কেউ সতর্ক করছেন, অতিরিক্ত কড়া বক্তব্য উল্টো বেইজিংকে জনমত উস্কে দেওয়ার সুযোগ দিতে পারে এবং অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের যুক্তি তৈরি করে। আপাতত দুই পক্ষই সরাসরি ভাঙনের দিকে না গিয়ে বার্তা বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওয়াং ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে “দৃঢ় জবাব” দেওয়া হবে—যা চীনে জাপানি কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রক চাপ বাড়ানো থেকে শুরু করে নতুন নিরাপত্তা-ভিত্তিক বিধিনিষেধ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। আগামী দিনে এই টানাপোড়েনে কতটা কূটনৈতিক সংযম বজায় থাকে, তা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















