১০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
আমেরিকান বিপ্লব: ইতিহাসকে চিনি মাখানো নয়, সত্যের মুখোমুখি শেখ হাসিনার রায়: ধানমন্ডি ৩২–এ উত্তেজনা, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি শেখ হাসিনার সরকার: হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড ঐতিহাসিক রায় শহর ভবনের শূন্যতা: নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের সঙ্গে একটি দিন কলকাতার পিচে ধাক্কা খাওয়ার পর ভারতের ব্যাটিং দুর্বলতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভায় ভয়াবহ ভূমিধস: অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু, বহু মানুষ নিখোঁজ একটি জাজমেন্ট ও কিছু সমস্যা মুহুরী নদী: একটি আন্তঃসীমান্ত নদীর গল্প — উৎস, জীবন ও চিরস্থায়ী সংকট মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য চুক্তির পর দেশে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা স্যামসাং ও হিউন্দাইয়ের

একটি জাজমেন্ট ও কিছু সমস্যা

যে সব দেশে আইনের শাসন আছে। যেখানে রুল অফ ল একটি ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করে, বিচারকের ব্যক্তিত্ব কেবল “এ রোজ ইজ এ রোজ” এই লাইনটির সঙ্গে তুলনা করা যায়—সে সব দেশের অনেক জাজমেন্ট সাময়িকভাবে ছোট মনে হলেও তার গুরুত্ব সভ্যতার জন্যে অনেক বেশি। যে সব দেশে রুল অফ ল-এর ধারাবাহিকতা নেই; আবার নির্বাহী বিভাগ, রাজনৈতিক স্বার্থ ও ব্যক্তি স্বার্থ যেখানে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে—সেখানকার অনেক জাজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ বললেও সভ্যতার ইতিহাসে তার কোনো গুরুত্ব নেই। বরং পৃথিবীতে সাময়িক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে হলেও—কিছু জাজমেন্ট সভ্যতার জন্যে প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে বর্তমানে একটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি নির্ভর এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে উদার জাজমেন্ট কতটা সহায়ক বা বাধা হচ্ছে।

যে সব দেশে রুল অফ ল ঐভাবে মাটিতে পা রাখতে পারেনি সেখানে অবশ্য এই রায়গুলো নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। বরং যে রায়গুলো প্রকৃত বিচার বিভাগ দিতে পারে না, যা সভ্য দেশের বিচার বিভাগের কাছে অবৈধ—সেগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। এমনকি যে সব দেশে রুল অফ ল প্রতিষ্ঠিত হয়নি—সেই সব দেশের সরকার যে আইন প্রণয়ন করে তা নিয়েও বেশি আলোচনা হয় তৃতীয় বিশ্বের বিচারহীনতায় বা গোষ্ঠী রক্ষিত বিচার বিভাগের দেশে।

যেমন সম্প্রতি পাকিস্তান তাদের সংবিধানে ২৭তম সংশোধনী এনে শুধু তাদের দেশের সেনাপ্রধানকে আমৃত্যু ইনডেমনিটি দেননি—ইমরান খানের সমর্থকদের জন্যে এখন সশস্ত্র পথ বা অন্য কোনো ভিন্ন ধরনের আন্দোলনের পথ ছাড়া আর কিছু খোলা রাখেনি। আর এ সবই হয়েছে এক ব্যক্তির ইচ্ছেমতো।

এই সব ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থ যখন আইন দিয়ে, বিচার বিভাগ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়—সেগুলো রুল অফ ল-হীন দেশে অনেক বেশি আলোচিত হয়।

যেমন ভারতের মাদ্রাজ কোর্ট ২০০৪-এর দিকে এক রায় দিয়েছিল—বিচার বিভাগ যখন নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে যায় সে সময় বিচার বিভাগের আর “কনটেম্পট অফ কোর্ট” রুল জারি করার ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।

ন্যায়বিচারের নারী | The Daily Star Bangla

কারণ রাষ্ট্রের সব বিভাগ কারো না কারো নজরে থাকা উচিত। তা না হলে সেখানে শুধু স্বেচ্ছাচারিতা শুরু নয়, সেটা দানব হয়ে ওঠে।

তাই যখন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে যাবে তখনই মিডিয়া বা সাধারণ মানুষ যাতে বিচার বিভাগের ওয়াচডগ হয়, তারা যাতে সমালোচনা করতে পারে—তার নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত।

এ রায়টি বাস্তবে যুগান্তকারী। এই রায় ছাড়া আসলে স্বাধীন বিচার বিভাগসহ প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারণ “বিচারাধীন বিষয়” নিয়ে কথা বলা যাবে না—এটা এক ধরনের ইনডেমনিটি বিচার বিভাগের জন্যে। প্রকৃত আধুনিক সভ্যতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রকৃত ন্যায়বিচারের সঙ্গে এই ধারণা যায় না। এমনটিই ছিলো ওই জাজমেন্টের মূল বক্তব্য। কিন্তু ওই দেশে আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি বা সেটাকে সর্বোচ্চ হিসেবে গৃহীত হয়নি।

অন্যদিকে—আজ নিউজিল্যান্ডের বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তা সে দেশের ই-সার্ভিসের জন্য একটা জটিলতাই সৃষ্টি করবে।

ভবিষ্যতের পৃথিবী এখন ই-কমার্স, ই-সার্ভিস, এমনকি ই-প্রোডাকশনেও চলে গেছে।

এই সময়ে লেবার ইউনিয়নের সমর্থনে নিউজিল্যান্ডের উবার চালকরা আদালতে গিয়েছিল এ দাবিতে যে উবার চালকদেরকে যেন উবার কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর কর্মচারী হলে তো তারা কোম্পানির সকল বেনিফিট পাবে।

আদিয়ালা কারাগারে যেসব সুবিধা পাচ্ছেন ইমরান খান

নিউজিল্যান্ডের নিম্ন আদালত উবার চালকদের আবেদনের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের ওই রায় বাতিল করে দিয়েছিলো। উচ্চ আদালত তাদেরকে কন্ট্রাকটর হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে বলেছিলো। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট উবার চালকরা কোম্পানির কন্ট্রাকটর—নয় তারা কোম্পানির কর্মচারী এটাই রায় দিয়েছে। বাতিল করেছে হাইকোর্টের রায়। অর্থাৎ ব্রিটেনের আদলে রায় দিয়েছে।

বাস্তবে ই-কমার্স, ই-সার্ভিস, ই-প্রোডাকশন—সবকিছুর মূল লক্ষ্য পণ্য ও সেবার বিস্তৃতি ঘটানো। আর বাণিজ্যকে সহজ, দ্রুতগতি সম্পন্ন—সর্বোপরি কস্ট-ইফেক্টিভ করা। এই কস্ট ম্যানেজমেন্টটি এ মুহূর্তে সব দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে বেশি প্রয়োজন।

মানুষের জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয়তা—যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার কারণে অনেক বেড়ে গেছে। আর এ প্রয়োজনীয় সেবাগুলো এমনকি পণ্যগুলো যদি সহজলভ্য না হয়—তাহলে প্রযুক্তির এ যুগও যেমন মুখ থুবড়ে পড়বে, তেমনি মানুষের জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে যাবে।

এ কারণে ই-সার্ভিস কোম্পানির সেবা আনলিমিটেড কন্ট্রাকটরের হাতে থাকার ফলে এটা সব সময়ই সহজলভ্য থাকবে, যা আধুনিক জীবনযাত্রাকে চলমান রাখতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতের জন্যেও আরও নতুন নতুন পথ খোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

নিউজিল্যান্ডের কোম্পানির মালিকরা বলছেন, এই রায়ের ফলে আনলিমিটেড কন্ট্রাকটরের দ্বারা যে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো—তা হবে না।

বাস্তবে বর্তমানের এই টেকনোলজির যুগে—টেকনোলজি যে গতিতে পণ্য উৎপাদন ও সেবায় এগুচ্ছে—প্রশাসন ও বিচার বিভাগ সবখানে সেভাবে এগুতে পারছে কিনা—তা একটা বড় প্রশ্ন।

টেকনোলজি এতটা সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সেখানে পুরোনো ধ্যান ধারণায় পড়ে থাকলে—বা কোনো গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল, এমনকি অতীতের চিন্তা-চেতনার ধারক বাহক হলে—সমস্যাই তৈরি করবে। যে কারণে পৃথিবীর বহু দেশের নির্বাহী ও বিচার বিভাগ প্রযুক্তির দৌড় ও তার সঙ্গে জড়িত শিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে তাল মেলাতে পারছে না।

নিউজিল্যান্ডের এই রায়ও মূলত বর্তমানের প্রযুক্তি নির্ভর সার্ভিস সেক্টরের জন্য খুব ভালো উদাহরণ নয়। বরং ভবিষ্যত-মুখী সার্ভিস সেক্টরের জন্যে একটি বাধা—যা ব্রিটেনের মতো তাদেরও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আধুনিক অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মোটেই সহজ বিষয় নয়।

গত দশকের কোনো চিন্তা দিয়ে এটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ব্রিটেন থেকে নিউজিল্যান্ড সবাই এখন পিছিয়ে পড়ছে সিঙ্গাপুর বা চীনের উন্নয়নের গতির তুলনায়।

অন্যদিকে পাকিস্তানের মতো যে দেশের আইনগুলো এখনও ব্যক্তি-স্বার্থে বা পুরানো ধারায় পড়ে আছে—সেখানে মানুষ থেকে শুরু করে শিল্প, বাণিজ্য—কোনো কিছুই প্রকৃত জাজমেন্ট বিচার বিভাগের কাছ থেকে পাবে না—যা দেশ ও জাতি সর্বোপরি মানুষকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বরং এই আধুনিকতাহীন দেশগুলো অনেক সময় বিচার ও প্রশাসনের মাধ্যমে দেশকে আরও বেশি পিছিয়ে—গ্রাম্য-মোড়লের যুগে নিয়ে যায়।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ, The Present World.

জনপ্রিয় সংবাদ

আমেরিকান বিপ্লব: ইতিহাসকে চিনি মাখানো নয়, সত্যের মুখোমুখি

একটি জাজমেন্ট ও কিছু সমস্যা

০৭:১৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

যে সব দেশে আইনের শাসন আছে। যেখানে রুল অফ ল একটি ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করে, বিচারকের ব্যক্তিত্ব কেবল “এ রোজ ইজ এ রোজ” এই লাইনটির সঙ্গে তুলনা করা যায়—সে সব দেশের অনেক জাজমেন্ট সাময়িকভাবে ছোট মনে হলেও তার গুরুত্ব সভ্যতার জন্যে অনেক বেশি। যে সব দেশে রুল অফ ল-এর ধারাবাহিকতা নেই; আবার নির্বাহী বিভাগ, রাজনৈতিক স্বার্থ ও ব্যক্তি স্বার্থ যেখানে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে—সেখানকার অনেক জাজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ বললেও সভ্যতার ইতিহাসে তার কোনো গুরুত্ব নেই। বরং পৃথিবীতে সাময়িক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে হলেও—কিছু জাজমেন্ট সভ্যতার জন্যে প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে বর্তমানে একটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি নির্ভর এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে উদার জাজমেন্ট কতটা সহায়ক বা বাধা হচ্ছে।

যে সব দেশে রুল অফ ল ঐভাবে মাটিতে পা রাখতে পারেনি সেখানে অবশ্য এই রায়গুলো নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। বরং যে রায়গুলো প্রকৃত বিচার বিভাগ দিতে পারে না, যা সভ্য দেশের বিচার বিভাগের কাছে অবৈধ—সেগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। এমনকি যে সব দেশে রুল অফ ল প্রতিষ্ঠিত হয়নি—সেই সব দেশের সরকার যে আইন প্রণয়ন করে তা নিয়েও বেশি আলোচনা হয় তৃতীয় বিশ্বের বিচারহীনতায় বা গোষ্ঠী রক্ষিত বিচার বিভাগের দেশে।

যেমন সম্প্রতি পাকিস্তান তাদের সংবিধানে ২৭তম সংশোধনী এনে শুধু তাদের দেশের সেনাপ্রধানকে আমৃত্যু ইনডেমনিটি দেননি—ইমরান খানের সমর্থকদের জন্যে এখন সশস্ত্র পথ বা অন্য কোনো ভিন্ন ধরনের আন্দোলনের পথ ছাড়া আর কিছু খোলা রাখেনি। আর এ সবই হয়েছে এক ব্যক্তির ইচ্ছেমতো।

এই সব ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থ যখন আইন দিয়ে, বিচার বিভাগ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়—সেগুলো রুল অফ ল-হীন দেশে অনেক বেশি আলোচিত হয়।

যেমন ভারতের মাদ্রাজ কোর্ট ২০০৪-এর দিকে এক রায় দিয়েছিল—বিচার বিভাগ যখন নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে যায় সে সময় বিচার বিভাগের আর “কনটেম্পট অফ কোর্ট” রুল জারি করার ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।

ন্যায়বিচারের নারী | The Daily Star Bangla

কারণ রাষ্ট্রের সব বিভাগ কারো না কারো নজরে থাকা উচিত। তা না হলে সেখানে শুধু স্বেচ্ছাচারিতা শুরু নয়, সেটা দানব হয়ে ওঠে।

তাই যখন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে যাবে তখনই মিডিয়া বা সাধারণ মানুষ যাতে বিচার বিভাগের ওয়াচডগ হয়, তারা যাতে সমালোচনা করতে পারে—তার নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত।

এ রায়টি বাস্তবে যুগান্তকারী। এই রায় ছাড়া আসলে স্বাধীন বিচার বিভাগসহ প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারণ “বিচারাধীন বিষয়” নিয়ে কথা বলা যাবে না—এটা এক ধরনের ইনডেমনিটি বিচার বিভাগের জন্যে। প্রকৃত আধুনিক সভ্যতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রকৃত ন্যায়বিচারের সঙ্গে এই ধারণা যায় না। এমনটিই ছিলো ওই জাজমেন্টের মূল বক্তব্য। কিন্তু ওই দেশে আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি বা সেটাকে সর্বোচ্চ হিসেবে গৃহীত হয়নি।

অন্যদিকে—আজ নিউজিল্যান্ডের বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তা সে দেশের ই-সার্ভিসের জন্য একটা জটিলতাই সৃষ্টি করবে।

ভবিষ্যতের পৃথিবী এখন ই-কমার্স, ই-সার্ভিস, এমনকি ই-প্রোডাকশনেও চলে গেছে।

এই সময়ে লেবার ইউনিয়নের সমর্থনে নিউজিল্যান্ডের উবার চালকরা আদালতে গিয়েছিল এ দাবিতে যে উবার চালকদেরকে যেন উবার কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর কর্মচারী হলে তো তারা কোম্পানির সকল বেনিফিট পাবে।

আদিয়ালা কারাগারে যেসব সুবিধা পাচ্ছেন ইমরান খান

নিউজিল্যান্ডের নিম্ন আদালত উবার চালকদের আবেদনের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের ওই রায় বাতিল করে দিয়েছিলো। উচ্চ আদালত তাদেরকে কন্ট্রাকটর হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে বলেছিলো। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট উবার চালকরা কোম্পানির কন্ট্রাকটর—নয় তারা কোম্পানির কর্মচারী এটাই রায় দিয়েছে। বাতিল করেছে হাইকোর্টের রায়। অর্থাৎ ব্রিটেনের আদলে রায় দিয়েছে।

বাস্তবে ই-কমার্স, ই-সার্ভিস, ই-প্রোডাকশন—সবকিছুর মূল লক্ষ্য পণ্য ও সেবার বিস্তৃতি ঘটানো। আর বাণিজ্যকে সহজ, দ্রুতগতি সম্পন্ন—সর্বোপরি কস্ট-ইফেক্টিভ করা। এই কস্ট ম্যানেজমেন্টটি এ মুহূর্তে সব দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে বেশি প্রয়োজন।

মানুষের জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয়তা—যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার কারণে অনেক বেড়ে গেছে। আর এ প্রয়োজনীয় সেবাগুলো এমনকি পণ্যগুলো যদি সহজলভ্য না হয়—তাহলে প্রযুক্তির এ যুগও যেমন মুখ থুবড়ে পড়বে, তেমনি মানুষের জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে যাবে।

এ কারণে ই-সার্ভিস কোম্পানির সেবা আনলিমিটেড কন্ট্রাকটরের হাতে থাকার ফলে এটা সব সময়ই সহজলভ্য থাকবে, যা আধুনিক জীবনযাত্রাকে চলমান রাখতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতের জন্যেও আরও নতুন নতুন পথ খোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

নিউজিল্যান্ডের কোম্পানির মালিকরা বলছেন, এই রায়ের ফলে আনলিমিটেড কন্ট্রাকটরের দ্বারা যে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো—তা হবে না।

বাস্তবে বর্তমানের এই টেকনোলজির যুগে—টেকনোলজি যে গতিতে পণ্য উৎপাদন ও সেবায় এগুচ্ছে—প্রশাসন ও বিচার বিভাগ সবখানে সেভাবে এগুতে পারছে কিনা—তা একটা বড় প্রশ্ন।

টেকনোলজি এতটা সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সেখানে পুরোনো ধ্যান ধারণায় পড়ে থাকলে—বা কোনো গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল, এমনকি অতীতের চিন্তা-চেতনার ধারক বাহক হলে—সমস্যাই তৈরি করবে। যে কারণে পৃথিবীর বহু দেশের নির্বাহী ও বিচার বিভাগ প্রযুক্তির দৌড় ও তার সঙ্গে জড়িত শিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে তাল মেলাতে পারছে না।

নিউজিল্যান্ডের এই রায়ও মূলত বর্তমানের প্রযুক্তি নির্ভর সার্ভিস সেক্টরের জন্য খুব ভালো উদাহরণ নয়। বরং ভবিষ্যত-মুখী সার্ভিস সেক্টরের জন্যে একটি বাধা—যা ব্রিটেনের মতো তাদেরও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আধুনিক অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মোটেই সহজ বিষয় নয়।

গত দশকের কোনো চিন্তা দিয়ে এটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ব্রিটেন থেকে নিউজিল্যান্ড সবাই এখন পিছিয়ে পড়ছে সিঙ্গাপুর বা চীনের উন্নয়নের গতির তুলনায়।

অন্যদিকে পাকিস্তানের মতো যে দেশের আইনগুলো এখনও ব্যক্তি-স্বার্থে বা পুরানো ধারায় পড়ে আছে—সেখানে মানুষ থেকে শুরু করে শিল্প, বাণিজ্য—কোনো কিছুই প্রকৃত জাজমেন্ট বিচার বিভাগের কাছ থেকে পাবে না—যা দেশ ও জাতি সর্বোপরি মানুষকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বরং এই আধুনিকতাহীন দেশগুলো অনেক সময় বিচার ও প্রশাসনের মাধ্যমে দেশকে আরও বেশি পিছিয়ে—গ্রাম্য-মোড়লের যুগে নিয়ে যায়।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ, The Present World.