এটি নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামসের শেষ দিনগুলোর একটি গভীর চিত্র—এক সময় ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতীক হলেও মেয়াদের শেষে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বিতর্ক, ক্ষোভ, বিচ্ছিন্নতা এবং ভেঙে যাওয়া উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাঝে।
সকালবেলার শুরু: স্মুদি আর ভেঙে পড়া ভবিষ্যৎ
গ্রেসি ম্যানশনের রান্নাঘরে স্মুদি বানাতে বানাতে অ্যাডামস নিজের পতনের “ষড়যন্ত্র” ব্যাখ্যার প্রস্তুতি নেন।
একসময় তিনি ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যপন্থী কৃষ্ণাঙ্গ ভিত্তির উদীয়মান শক্তি—প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথাও শোনা যেত।
চার বছর পর চিত্র বদলে যায়—দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে জনপ্রিয়তা নেমে আসে ২০ শতাংশে। নির্বাচনে তিনি হয়ে ওঠেন উপেক্ষিত ও ব্যঙ্গ–বিদ্রূপের লক্ষ্য।
“আমার ভুল ছিল, কিন্তু আমাকে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে,”—অ্যাডামসের দাবি। তাঁর মতে, সত্য বলার অপরাধেই তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকের চোখে অ্যাডামস
১৯৯০-এর দশক থেকে পরিচিত ফক্স নিউজ বিশ্লেষক জুয়ান উইলিয়ামস বলেন—
“সম্ভাবনা ছিল অনেক, কিন্তু তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আত্মস্বার্থ তাঁকে ডুবিয়েছে।”
অতীতের স্মৃতি
অ্যাডামস স্মরণ করেন তাঁর প্রয়াত মায়ের সংগ্রাম—তিনটি কাজ করে ছয় সন্তান মানুষ করা সেই দৃঢ়তা তাঁকে আজও ভেঙে পড়তে দেয় না।
ব্যস্ত দিনের সূচি
সাবওয়ে, পুলিশ প্রিসিঙ্ক্ট, গালা—তিন বরোতে ১০টি অনুষ্ঠান।
পথে তিনি আবারও অভিযোগগুলোকে “মিথ্যা” বলে দাবি করেন।
পুলিশ জীবন থেকে রাজনীতি
কিশোর বয়সে গ্রেফতার হয়ে পুলিশি নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তাঁকে পুলিশ হতে উদ্বুদ্ধ করে।
২২ বছরের চাকরিজীবনে সমালোচক হলেও ছিলেন দুর্নীতিবিরোধী কণ্ঠ।
২০০৬ সালে সিনেটর, পরে ২০১৩ সালে ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট, এবং ২০২১ সালে মেয়র।
অ্যাডামসের দাবি: অপরাধ কমেছে, উন্নয়ন বেড়েছে
তাঁর মেয়াদে সহিংস অপরাধ ও সম্পত্তি-সংক্রান্ত অপরাধ উভয়ই কমেছে—শুটিং ৫৪% এবং হত্যা ৩৬% কমে।
অর্থনীতি বেড়েছে, নতুন বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছে, “ট্র্যাশ রেভলিউশন”–এ রাস্তাঘাট পরিষ্কার হয়েছে।
তবুও সিবিএস সমীক্ষায় ৬১% মানুষ বলেন—“শহর খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
অভিবাসী সংকট: সবচেয়ে বড় পরীক্ষা
২০২২ সালে টেক্সাস গভর্নর বহু অভিবাসী নিউইয়র্কে পাঠানো শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
শুরুতে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিলেও ব্যয়ের ভার বাড়তেই বাইডেন প্রশাসনকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন—এতে ওয়াশিংটনের অপছন্দে পড়েন।
এফবিআই তদন্ত: বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু
২০২৩ সালের নভেম্বর—তাঁর প্রধান অর্থসংগ্রাহকের বাড়িতে এফবিআই অভিযান।
চার দিন পর তাঁর ফোন–আইপ্যাড জব্দ।
অ্যাডামস বলেন—“আমি বাইডেনকে সমালোচনা করেছি বলে আমাকে টার্গেট করা হয়েছে।”
ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁকে আরও বিতর্কিত করে তোলে।
২০২৪ সালে ট্রাম্পের বিচার নিয়ে তাঁর সন্দেহ “ডিপ স্টেট” ধারণাকে আরও জোরদার করে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর তাঁর বিচার মন্ত্রণালয় অ্যাডামসের মামলা খারিজ করে—যা সমালোচকদের মতে “রাজনৈতিক লেনদেন”।
টাইমস স্কোয়ারে সাংবাদিক সম্মেলনের নাটকীয়তা
সাবওয়ের অপরাধ হ্রাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি মিডিয়াকে আক্রমণ করেন।
এক প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন—“তুমি অসুস্থ মানসিকতার মানুষ।”
হাততালি আর প্রতিবাদের মাঝেই নাটকীয় ভঙ্গিতে তিনি স্টেজ ছাড়েন।
তুরস্ককে ঘিরে অভিযোগ
অভিযোগ—২০১৬–২০২১ পর্যন্ত তুরস্কের পক্ষ থেকে বিলাসবহুল ফ্লাইট আপগ্রেড নিয়েছেন এবং তুর্কি কনস্যুলেটের ভবন অনুমোদন দ্রুত করাতে প্রভাব খাটিয়েছেন।
অ্যাডামস বলেন—“বিধিসম্মত সরকারি কাজে আপগ্রেড নেওয়া বৈধ।”
আইন বিশেষজ্ঞদেরও মত—অভিযোগ দুর্বল।
ট্রাম্প-পরবর্তী নিউইয়র্কের প্রতিক্রিয়া
“শহর আমাকে ঘৃণা করল, কারণ তারা ট্রাম্পকে ঘৃণা করে,”—অ্যাডামসের অভিযোগ।
অভিযোগ, ক্রোনিজম ও বিশৃঙ্খলা
সমালোচকদের মতে অ্যাডামস ছিলেন মেশিন রাজনীতিবিদ—যিনি অসতর্কভাবে ভুল লোকদের দায়িত্ব দিয়েছেন।
ডজন ডজন কর্মকর্তা বরখাস্ত বা পদত্যাগ করায় সিটি হলকে বলা হচ্ছিল “দুর্নীতি–ডোমিনো”।
এনওয়াইপিডি ক্যাডেটদের সামনে শেষ দিকের বক্তব্য
“এই কাজ আপনাকে মানুষের সবচেয়ে খারাপ দিক দেখাবে। তবুও আপনাকে অটল থাকতে হবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তিনি বলেন—বই লিখবেন, বিদেশ ভ্রমণ করবেন, পিএইচডি করবেন।
তবে স্বীকার করেন—রাজনীতিতে তাঁর স্থান অনেকটাই সঙ্কুচিত।
নির্বাচন ও নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী
জোহরান মামদানিকে বিপদের কারণ মনে করেন তিনি।
অবশেষে অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন করেন—যদিও তাকেও পুরো ভরসা করেন না।
শেষ দৃশ্য: একা দাঁড়ানো একজন মানুষ
গালা, ক্লাব, ডিনার শেষে তিনি ফিরে আসেন গ্রেসি ম্যানশনে।
রাজনৈতিক পরামর্শক হ্যাঙ্ক শেইনকপফ বলেন—
“এরিক অ্যাডামসের মতো মানুষ আর দেখা যাবে না। তিনি হার্ভার্ড–ইয়েল নন—তিনি এসেছেন রাস্তাঘাটের বাস্তবতা থেকে।”
“আমি ছিলাম শ্রমজীবী মানুষের জন্য সেরা মেয়র। কিন্তু শহর আমাকে ছেড়ে দিল।
জীবন কখনো ন্যায্য হওয়ার কথা নয়।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 





















