সৌদি আরবের সফর: সফলতা ও চ্যালেঞ্জ
১৮ নভেম্বর, ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে এক শক্তিশালী সংবর্ধনা প্রদান করেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি আরবের প্রতি সমর্থনের নতুন চেহারা তুলে ধরে। এই সফরে বিন সালমান এবং ট্রাম্প একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মধ্যে বিনিয়োগ, অস্ত্র বিক্রয় এবং পারমাণবিক সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ট্রাম্প সৌদি আরবকে একটি “প্রধান অ-নেটো মিত্র” ঘোষণা করেন। তবে, এর ফলে আমেরিকান-সৌদি সম্পর্ক দৃঢ় হওয়ার লক্ষণ পাওয়া গেলেও, কিছু বড় প্রশ্ন রয়ে যায়।
পারমাণবিক চুক্তি ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ
সৌদি আরব পারমাণবিক রিয়্যাক্টর চায়, যা তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। আমেরিকা চাইছে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো এই রিয়্যাক্টরগুলি তৈরি করুক। যদিও এই আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, সৌদি আরব এখনও একটি “১২৩ চুক্তি” স্বাক্ষর করতে পারেনি, যা আমেরিকার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী প্রয়োজন। এই চুক্তি কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা এই চুক্তির জন্য একটি বড় বাধা।

F-35 যুদ্ধবিমান বিক্রয়: একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া
সৌদি আরব F-35 যুদ্ধবিমান কিনতে চাচ্ছে, যা আমেরিকার সর্বাধুনিক অস্ত্র। তবে, এই চুক্তি কংগ্রেসের অনুমোদনের পর এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সম্ভাব্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেস সদস্যরা ইসরায়েলের সামরিক অগ্রাধিকার নিয়ে চিন্তিত। এমনকি যদি চুক্তি অনুমোদিত হয়, বিমানগুলি ২০৩০ সালের আগে সৌদি আরবের হাতে আসবে না।
বিনিয়োগ চুক্তি: ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি
ট্রাম্প জানান, সৌদি আরব আমেরিকায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা তাদের পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক বড়। সৌদি আরবের অর্থনীতি বর্তমানে জ্বালানি খাতের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু তারা এর বৈচিত্র্য আনতে চাইছে। তবে, এই বিশাল বিনিয়োগের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, কারণ সৌদি আরবের হাতে অতিরিক্ত অর্থ নেই।
সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ: এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
২০১৮ সালে যুবরাজ মোহাম্মদ যখন প্রথমবার হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন, তখন সৌদি আরব ও আমেরিকার সম্পর্ক ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। তবে, সৌদি আরব এখন একটি বাস্তবমুখী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে তারা আমেরিকার শিল্পকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহের মাধ্যমে চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে। এর ফলে, আমেরিকান কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, এবং সৌদি আরবের প্রতি সমর্থন দৃঢ় হয়েছে।

ইসরায়েল সংক্রান্ত বিতর্ক: শান্তির পথ অনুসন্ধান
সৌদি যুবরাজের জন্য ইসরায়েল সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি এখনও এক উত্তপ্ত ইস্যু। ট্রাম্প চাইছেন সৌদি আরব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিক, এবং এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আরো দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত হবে। তবে যুবরাজ মোহাম্মদ এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী নন, যতক্ষণ না ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষা
তবে, সৌদি আরবের জন্য বিষয়টি সহজ নয়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে সৌদি যুবরাজের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন, যেমন F-35 বিমান বিক্রির সঙ্গে সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে। যদিও, সৌদি আরব এখনও এই বিষয়ে তাড়াহুড়া করছে না, কারণ তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখন আর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়।
#সৌদি_আরব #মোহাম্মদ_বিন_সালমান #ডোনাল্ড_ট্রাম্প #পারমাণবিক_চুক্তি #F35 #বিনিয়োগ #ইসরায়েল #মধ্যপ্রাচ্য #ওয়াশিংটন
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















