১০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
এশিয়ার কনটেন্ট হাব হতে ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের নতুন ফিল্ম–টিভি তহবিল ঘোষণা সিঙ্গাপুরের ১০ জানুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলনের হুমকি সচিবালয় কর্মচারীদের জেডআই খান পান্নার নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে ৩৯১ জামায়াতের জন্য উপযুক্ত দল ছিল আওয়ামী লীগ: মির্জা আব্বাস বিদ্যুৎ লাইনে কাপড় পড়ে ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে ঢাকার মেট্রোরেল খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ খালেদা জিয়া প্রাসাদে নয়, রাজপথে রাজনীতি করেছেন: মঈন খান প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সক্ষমতা বিকাশে সকলের যৌথ দায়িত্ব ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া ও ভারত–শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক: পারস্পরিক কূটনীতির নতুন পাঠ

ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল: নুনাভুটের আকাশছোঁয়া দীর্ঘ পথ, ভূমি ও স্মৃতির সেতু

দিগন্তভরা পাথুরে উপত্যকা, বরফগলা নদী আর ঝুপঝুপে টুন্দ্রা পেরিয়ে চলে গেছে এক অদৃশ্য রেখা। নাম তার ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল—ইনুকটিট ভাষায় অর্থ, “ভূমির ওপর দিয়ে”। কোনো সাইনবোর্ড নেই, নেই গাছের সারি ধরে তৈরি হাঁটার পথ। আছে শুধু নদী, পাহাড়, জলাভূমি আর মাঝে–মাঝে ছড়িয়ে থাকা নয়টি জরুরি কেবিন, যেখানে ক্লান্ত পথিক আশ্রয় নিতে পারে।

দক্ষিণ ব্যাফিন দ্বীপের ইনুইটদের জন্য এ পথ তাদের আঙিনা। শীতে এখানেই বরফের ওপর লম্বা নকশা কেটে চলে স্নোমোবাইলের সারি, জুড়ে দেয় ইকালুইট আর কিমিরুটকে। আর বসন্ত–গ্রীষ্মে এ পথ হয়ে ওঠে আর্কটিক চার মাছ ধরার, বেরি কুড়োনোর, রাজহাঁস আর অন্য পাখি শিকার করার ভূমি। একসময় এখানে শত শত ক্যারিবু দেখা যেত।

শুধু পথ নয়, ইনুইট জীবনের অনিবার্য অংশ

নুনাভুট পার্কস অ্যান্ড স্পেশাল প্লেসেস–এর কর্মকর্তা এমি ব্রাউন বলেন, কিমিরুট আর ইকালুইটে যাদের পরিবার আছে, তাদের জীবনের বড় অংশ জুড়েই এই ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল। এখন আবার দক্ষিণ কানাডা থেকে আসা ট্রেকার–অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরাও এ পথ ব্যবহার করছে। নুনাভুটের মানুষ যা স্বাভাবিক ভাবে দেখে, সেটাই এখন কানাডার “দ্য গ্রেট ট্রেইল” নেটওয়ার্কের অনন্য অংশ।

মেটা ইনকগনিটা উপদ্বীপজুড়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই ট্রেইল নুনাভুটের একমাত্র অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে গ্রেট ট্রেইলে। শুরুর পথ মোটেও সহজ নয়—ইকালুইট থেকে ফ্রোবিশার বে পেরিয়ে পথ যখন ভেতরের দিকে উঠে যায়, সমুদ্র সমতল থেকে এক ঝাঁক পাথুরে চূড়া টেনে নেয় আপনাকে প্রায় ৬৭০ মিটার উচ্চতায়। মাত্র ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ভেসে ওঠে এক অনন্ত মালভূমি।

দুই বিলিয়ন বছর আগে এখানে গঠিত হয়েছিল হিমালয়ের সমান উচ্চতার পাহাড়। সময় আর হিমবাহ সেই পর্বতকে নূড়ি–কঙ্করের স্তরে নামিয়ে এনেছে। এখন চোখে পড়ে গুঁড়ো হতে থাকা মার্বেল পাহাড়, কোয়ার্টজাইটের বিশাল শিলা, লালচে মরচেধরা ক্লিফ। দক্ষিণ কানাডার পাথুরে ভূতলের সঙ্গে এদের মিল আছে, পার্থক্য শুধু সময়ের—ব্যাফিন দ্বীপের বরফ অনেক পরে সরে গেছে, তাই পাথরের ওপরে এখনো গড়ে ওঠেনি ঘন মাটি, ওঠেনি বন।

ট্রেইলের মাঝামাঝি মাউন্ট জয়—ইনুকটিট নাম কিনাউজাক—এ এসে ভূদৃশ্য বদলে যায়। উন্মুক্ত মালভূমি গড়িয়ে হঠাৎ নেমে আসে বালুময়–দোআঁশ নদী উপত্যকায়, যেখানে উইলো, তুলা–ঘাস আর নানান টুন্দ্রা উদ্ভিদে সবুজ ভরাট। কিমিরুটের আশপাশের এলাকা ব্যাফিন দ্বীপজুড়ে বেরির জন্য বিখ্যাত। গ্রীষ্মের শেষে এখানে ব্লুবেরি আর ক্রো–বেরি এতটাই পাকে যে ইনুইটদের আঙুল নীল–বেগুনি দাগে ভরে যায়।

এই সময়ে সোপার নদীর দক্ষিণ অংশ পাহারা দেন কনজারভেশন অফিসার শন নোবেল–নাউডলুক। নৌকায় নদী ধরে এগিয়ে গেলে ওপরে আকাশ ভরে যায় রাজহাঁসে। উপত্যকাটি হলো কানাডা গিজের বিশাল প্রজননভূমি—হাজার হাজার পাখির ডাক একসঙ্গে ওঠে।

নদী–উপত্যকায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা অগণিত শিং আর হাড় মনে করিয়ে দেয় সেই ক্যারিবু–পালের কথা, যারা একসময় এ ভূমি ভরিয়ে রাখত। এখন পুরো ব্যাফিন দ্বীপে ক্যারিবুর সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও কম, যেখানে নব্বই দশকের শুরুর দিকে ছিল দুই লক্ষের বেশি।

বদলে যাওয়া ঋতু, বদলে যাওয়া ট্রেইলের মুখ

ইতিহাসে এই ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল–এর গল্পও বদলের। অর্থ “ভূমির ওপর দিয়ে”—এটা ইনুইটদের জন্য ব্যতিক্রম, কারণ ঐতিহ্যগতভাবে তারা সমুদ্রতীর ঘেঁষেই জীবন গড়েছে। ১৯৪২ সালে আমেরিকান সেনাবাহিনী ফ্রোবিশার বেতে ঘাঁটি গড়ে তোলার পর, উপদ্বীপের দু’প্রান্তে বসতি বড় হয়। তখন থেকেই শীতকালে কুকুর–স্লেজে ভেতরের এ পথ ধরে চলাফেরা শুরু।

কিমিরুটের প্রবীণ ইনুইট স্যান্ডি আকাভাক জন্মেছিলেন উপকূলের এক ছোট দ্বীপে তাঁবুর ভেতর। পরে তাঁর বাবা আরসিএমপি–র বিশেষ কনস্টেবল হিসেবে কাজ করতে শুরু করলে পরিবার চলে আসে লেক হারবারে—বর্তমান কিমিরুট। তাঁর বাবাই প্রথম কুকুর–স্লেজে ফ্রোবিশার বেতে পাড়ি দেওয়া শুরু করেন; ডাক আর সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে–দিতেই আঁকা হয় আজকের ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল–এর বেশিরভাগ পথ।

আকাভাক হাসতে হাসতে বলেন, কখনও–কখনও পুরো রাস্তা কেবল একটা চিঠি পৌঁছে দিতে পাড়ি দিতে হতো। আজ তিনি দেখেন—সেই পুরোনো পথেই এখন গ্রীষ্মে হাইকার, শীতে স্নোমোবাইল; আর তাঁর জন্য সেটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।

নুনাভুটের অনেকেরই মনে হয়, কানাডার বাকি অংশ থেকে তারা অনেক দূরে। এমি ব্রাউন মনে করেন, গ্রেট ট্রেইলের অংশ হওয়ার মাধ্যমে ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল এক ধরনের মানসিক সেতু তৈরি করছে—উত্তরের বিচ্ছিন্ন উড়াল–বন্দি শহরগুলো আর দক্ষিণের জনবহুল কানাডার মাঝে।

কাটানিলিক টেরিটোরিয়াল পার্ক রেঞ্জার অ্যান্ড্রু বয়ডের চোখে এই ট্রেইলের তিন ঋতু—“স্নো, মাড আর বাগ”। শীতে একদিনেই স্নোমোবাইলে পার হওয়া যায়; বসন্তে গলা বরফ আর ফুলে ওঠা নদী পথকে করে প্রায় অচল; গ্রীষ্মে টুন্দ্রার গন্ধের সঙ্গে ভেসে বেড়ায় হাজার–হাজার পোকা; শরতে বরফ পড়ার আগে নিস্তব্ধ নীরবতায় জমে ওঠে ভূমি।

বয়ডের ভাষায়, এ পথের সৌন্দর্য এই–ই—কোনো নির্দিষ্ট রেখা নেই, যা হুবহু অনুসরণ করতে হবে। প্রাণীরা যেভাবে অদৃশ্য পথে ঘুরে বেড়ায়, তেমনি পথিককেও শিখতে হয় ঘুরে–ফিরে এগোনো। প্রতিবার যাত্রা নতুন, প্রতিবারই ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল নিজেকে আবার নতুন করে দেখায়—বেরি–রঙা আঙুল, রাজহাঁস–ভরা আকাশ আর বরফঢাকা নীরব মালভূমিতে।

#Nunavut #Inuit #ItijjagiaqTrail #Canada #Arcti  #Travel #Hiking

জনপ্রিয় সংবাদ

এশিয়ার কনটেন্ট হাব হতে ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের নতুন ফিল্ম–টিভি তহবিল ঘোষণা সিঙ্গাপুরের

ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল: নুনাভুটের আকাশছোঁয়া দীর্ঘ পথ, ভূমি ও স্মৃতির সেতু

০৪:৪৩:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

দিগন্তভরা পাথুরে উপত্যকা, বরফগলা নদী আর ঝুপঝুপে টুন্দ্রা পেরিয়ে চলে গেছে এক অদৃশ্য রেখা। নাম তার ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল—ইনুকটিট ভাষায় অর্থ, “ভূমির ওপর দিয়ে”। কোনো সাইনবোর্ড নেই, নেই গাছের সারি ধরে তৈরি হাঁটার পথ। আছে শুধু নদী, পাহাড়, জলাভূমি আর মাঝে–মাঝে ছড়িয়ে থাকা নয়টি জরুরি কেবিন, যেখানে ক্লান্ত পথিক আশ্রয় নিতে পারে।

দক্ষিণ ব্যাফিন দ্বীপের ইনুইটদের জন্য এ পথ তাদের আঙিনা। শীতে এখানেই বরফের ওপর লম্বা নকশা কেটে চলে স্নোমোবাইলের সারি, জুড়ে দেয় ইকালুইট আর কিমিরুটকে। আর বসন্ত–গ্রীষ্মে এ পথ হয়ে ওঠে আর্কটিক চার মাছ ধরার, বেরি কুড়োনোর, রাজহাঁস আর অন্য পাখি শিকার করার ভূমি। একসময় এখানে শত শত ক্যারিবু দেখা যেত।

শুধু পথ নয়, ইনুইট জীবনের অনিবার্য অংশ

নুনাভুট পার্কস অ্যান্ড স্পেশাল প্লেসেস–এর কর্মকর্তা এমি ব্রাউন বলেন, কিমিরুট আর ইকালুইটে যাদের পরিবার আছে, তাদের জীবনের বড় অংশ জুড়েই এই ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল। এখন আবার দক্ষিণ কানাডা থেকে আসা ট্রেকার–অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরাও এ পথ ব্যবহার করছে। নুনাভুটের মানুষ যা স্বাভাবিক ভাবে দেখে, সেটাই এখন কানাডার “দ্য গ্রেট ট্রেইল” নেটওয়ার্কের অনন্য অংশ।

মেটা ইনকগনিটা উপদ্বীপজুড়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই ট্রেইল নুনাভুটের একমাত্র অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে গ্রেট ট্রেইলে। শুরুর পথ মোটেও সহজ নয়—ইকালুইট থেকে ফ্রোবিশার বে পেরিয়ে পথ যখন ভেতরের দিকে উঠে যায়, সমুদ্র সমতল থেকে এক ঝাঁক পাথুরে চূড়া টেনে নেয় আপনাকে প্রায় ৬৭০ মিটার উচ্চতায়। মাত্র ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ভেসে ওঠে এক অনন্ত মালভূমি।

দুই বিলিয়ন বছর আগে এখানে গঠিত হয়েছিল হিমালয়ের সমান উচ্চতার পাহাড়। সময় আর হিমবাহ সেই পর্বতকে নূড়ি–কঙ্করের স্তরে নামিয়ে এনেছে। এখন চোখে পড়ে গুঁড়ো হতে থাকা মার্বেল পাহাড়, কোয়ার্টজাইটের বিশাল শিলা, লালচে মরচেধরা ক্লিফ। দক্ষিণ কানাডার পাথুরে ভূতলের সঙ্গে এদের মিল আছে, পার্থক্য শুধু সময়ের—ব্যাফিন দ্বীপের বরফ অনেক পরে সরে গেছে, তাই পাথরের ওপরে এখনো গড়ে ওঠেনি ঘন মাটি, ওঠেনি বন।

ট্রেইলের মাঝামাঝি মাউন্ট জয়—ইনুকটিট নাম কিনাউজাক—এ এসে ভূদৃশ্য বদলে যায়। উন্মুক্ত মালভূমি গড়িয়ে হঠাৎ নেমে আসে বালুময়–দোআঁশ নদী উপত্যকায়, যেখানে উইলো, তুলা–ঘাস আর নানান টুন্দ্রা উদ্ভিদে সবুজ ভরাট। কিমিরুটের আশপাশের এলাকা ব্যাফিন দ্বীপজুড়ে বেরির জন্য বিখ্যাত। গ্রীষ্মের শেষে এখানে ব্লুবেরি আর ক্রো–বেরি এতটাই পাকে যে ইনুইটদের আঙুল নীল–বেগুনি দাগে ভরে যায়।

এই সময়ে সোপার নদীর দক্ষিণ অংশ পাহারা দেন কনজারভেশন অফিসার শন নোবেল–নাউডলুক। নৌকায় নদী ধরে এগিয়ে গেলে ওপরে আকাশ ভরে যায় রাজহাঁসে। উপত্যকাটি হলো কানাডা গিজের বিশাল প্রজননভূমি—হাজার হাজার পাখির ডাক একসঙ্গে ওঠে।

নদী–উপত্যকায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা অগণিত শিং আর হাড় মনে করিয়ে দেয় সেই ক্যারিবু–পালের কথা, যারা একসময় এ ভূমি ভরিয়ে রাখত। এখন পুরো ব্যাফিন দ্বীপে ক্যারিবুর সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও কম, যেখানে নব্বই দশকের শুরুর দিকে ছিল দুই লক্ষের বেশি।

বদলে যাওয়া ঋতু, বদলে যাওয়া ট্রেইলের মুখ

ইতিহাসে এই ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল–এর গল্পও বদলের। অর্থ “ভূমির ওপর দিয়ে”—এটা ইনুইটদের জন্য ব্যতিক্রম, কারণ ঐতিহ্যগতভাবে তারা সমুদ্রতীর ঘেঁষেই জীবন গড়েছে। ১৯৪২ সালে আমেরিকান সেনাবাহিনী ফ্রোবিশার বেতে ঘাঁটি গড়ে তোলার পর, উপদ্বীপের দু’প্রান্তে বসতি বড় হয়। তখন থেকেই শীতকালে কুকুর–স্লেজে ভেতরের এ পথ ধরে চলাফেরা শুরু।

কিমিরুটের প্রবীণ ইনুইট স্যান্ডি আকাভাক জন্মেছিলেন উপকূলের এক ছোট দ্বীপে তাঁবুর ভেতর। পরে তাঁর বাবা আরসিএমপি–র বিশেষ কনস্টেবল হিসেবে কাজ করতে শুরু করলে পরিবার চলে আসে লেক হারবারে—বর্তমান কিমিরুট। তাঁর বাবাই প্রথম কুকুর–স্লেজে ফ্রোবিশার বেতে পাড়ি দেওয়া শুরু করেন; ডাক আর সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে–দিতেই আঁকা হয় আজকের ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল–এর বেশিরভাগ পথ।

আকাভাক হাসতে হাসতে বলেন, কখনও–কখনও পুরো রাস্তা কেবল একটা চিঠি পৌঁছে দিতে পাড়ি দিতে হতো। আজ তিনি দেখেন—সেই পুরোনো পথেই এখন গ্রীষ্মে হাইকার, শীতে স্নোমোবাইল; আর তাঁর জন্য সেটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।

নুনাভুটের অনেকেরই মনে হয়, কানাডার বাকি অংশ থেকে তারা অনেক দূরে। এমি ব্রাউন মনে করেন, গ্রেট ট্রেইলের অংশ হওয়ার মাধ্যমে ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল এক ধরনের মানসিক সেতু তৈরি করছে—উত্তরের বিচ্ছিন্ন উড়াল–বন্দি শহরগুলো আর দক্ষিণের জনবহুল কানাডার মাঝে।

কাটানিলিক টেরিটোরিয়াল পার্ক রেঞ্জার অ্যান্ড্রু বয়ডের চোখে এই ট্রেইলের তিন ঋতু—“স্নো, মাড আর বাগ”। শীতে একদিনেই স্নোমোবাইলে পার হওয়া যায়; বসন্তে গলা বরফ আর ফুলে ওঠা নদী পথকে করে প্রায় অচল; গ্রীষ্মে টুন্দ্রার গন্ধের সঙ্গে ভেসে বেড়ায় হাজার–হাজার পোকা; শরতে বরফ পড়ার আগে নিস্তব্ধ নীরবতায় জমে ওঠে ভূমি।

বয়ডের ভাষায়, এ পথের সৌন্দর্য এই–ই—কোনো নির্দিষ্ট রেখা নেই, যা হুবহু অনুসরণ করতে হবে। প্রাণীরা যেভাবে অদৃশ্য পথে ঘুরে বেড়ায়, তেমনি পথিককেও শিখতে হয় ঘুরে–ফিরে এগোনো। প্রতিবার যাত্রা নতুন, প্রতিবারই ইতিজ্জাগিয়াক ট্রেইল নিজেকে আবার নতুন করে দেখায়—বেরি–রঙা আঙুল, রাজহাঁস–ভরা আকাশ আর বরফঢাকা নীরব মালভূমিতে।

#Nunavut #Inuit #ItijjagiaqTrail #Canada #Arcti  #Travel #Hiking