বিজ্ঞান জগৎ কখনও শুধু আবিষ্কার দিয়ে মনে রাখা হয় না। মানুষটিও স্মৃতির অংশ হয়ে থাকে—তার আলো যেমন, তেমনি তার ছায়াও। নোবেলজয়ী জেমস ওয়াটসন ছিলেন ঠিক এমনই এক চরিত্র; চমকপ্রদ অর্জনের পাশে রয়ে গেছে অস্বস্তিকর মন্তব্যের দীর্ঘ ইতিহাস।
বিজয়ের ভেতরে অসম্পূর্ণতার গল্প
১৯৬২ সালে জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিনস ডিএনএ–র ডাবল হেলিক্স গঠন আবিষ্কারের জন্য নোবেল পান। এই সাফল্য তখন বিশ্বকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু সময়ের সাথে ঘন হতে থাকে বিতর্কের মেঘ।
ওয়াটসন নানা উপলক্ষে বর্ণ, বুদ্ধি ও পরিচয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন—যা বৈজ্ঞানিক সততা ও মানবিকতা দুইয়ের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক।

তিনি ২০০৭ সালে বলেন, আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি ‘স্বভাবগতভাবে নিরাশ’, এমন এক দাবি যা কোনো গবেষণাগত ভিত্তি বহন করে না। তিনি মন্তব্য করেন, ‘কিছু ইহুদি-বিরোধিতা নাকি যৌক্তিক হতে পারে।’ ২০০৩ সালে বলেন, ‘যদি কেউ সত্যিই নির্বোধ হয়, তবে সেটাকে রোগ বলা যায়। আমি চাই সেটাকে সরিয়ে দিতে।’
এই কথাগুলো তাকে বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে বিচার–আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের ছায়া
ওয়াটসনের উত্তরাধিকারকে জটিল করে তোলে আরেকটি সত্য। ১৯৫৩ সালে তাদের দলে প্রদর্শিত হয় রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের তোলা ডিএনএ–র এক অসামান্য এক্স-রে ছবি—ফটো ৫১।
এটি ছিল ডাবল হেলিক্স–এর দিকে গবেষণার পথ দেখানো গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।

কিন্তু ফ্র্যাঙ্কলিন ইতিহাসে উপেক্ষিতই থেকে যান। ১৯৫৮ সালে তার মৃত্যু এবং নোবেলের পরমরশর্ত—মরণোত্তর পুরস্কার না দেওয়া—তার স্মৃতিকে আরও আড়াল করে দেয়।
ক্রিক ও উইলকিনস ২০০৪ সালে মারা যান, ফলে এই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের শেষ জীবিত প্রতিনিধি ছিলেন জেমস ওয়াটসন নিজেই।
এবং জীবনভর তিনি তার বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাহার করেননি।
বিজ্ঞান তাকে মহিমান্বিত করেছে। কিন্তু তার কথাগুলো তাকে আবার মাটিতে নামিয়েছে।
এটাই জেমস ওয়াটসনের জটিল উত্তরাধিকার—যা তিনি নিজেই গড়ে তুলেছিলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















