০৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
তিন বিপর্যয়ের যৌথ আঘাতেই কি পৃথিবী বদলে গেল ২০২৫-এর সেরা টিভি শো: কূটনীতি, যুদ্ধ, রহস্য ও সম্পর্কের অদ্ভুত সব গল্প মানুষকে খুশি রাখার ফাঁদ: কেন আমরা ‘হ্যাঁ’ বলতে বাধ্য হই এবং মুক্তির পথ কোথায় দারিয়াগঞ্জের মুঘল প্রাচীর ঃ শেষ প্রহরীর আর্তনাদ তানজানিয়ার সহিংস নির্বাচনেই অর্থনীতির ওপর ঘনিয়ে আসছে অনিশ্চয়তা পুরুষরা কি সত্যিই বেশি কষ্টে ভোগে? ‘ম্যান ফ্লু’ নিয়ে নতুন বৈজ্ঞানিক রহস্য উন্মোচন আফ্রিকার নীল-কার্বন বিপ্লব: উপকূল রক্ষায় কার্বন ক্রেডিট কি নতুন আশা? লিসার সাহসী লুক নিয়ে নতুন জল্পনা: লুই ভুঁইতোঁ ইভেন্টে নজর কাড়লেন কে-পপ তারকা মিষ্টি পানীয় কর থেকে প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা—২০২৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসছে ছয়টি নতুন নিয়ম দুবাইয়ে মৃত্যুবরণ করলেন আমিরাতপ্রবাসী ভারতীয় ‘সুপারম্যান’ দেবেশ মিস্ত্রি

তিন বিপর্যয়ের যৌথ আঘাতেই কি পৃথিবী বদলে গেল

ডাইনোসরদের বিলুপ্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের ধাঁধার সমাধানে বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন—এটি একক কোনো বিপর্যয় ছিল না। একসঙ্গে তিনটি মহাবিপর্যয় পৃথিবীর জীবনচক্রকে বদলে দিয়েছিল। প্রায় ১৮ কোটি বছর ধরে স্থল, সাগর ও আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো ডাইনোসররা মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলীন হয়ে যায়।

ডাইনোসর–যুগের আকস্মিক সমাপ্তি

৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রেটাসিয়াস যুগের শেষ প্রান্তে পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাণী—২৫ কেজির বেশি ওজনের প্রায় সব জীব—মুছে যায়। সেই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন পৃথিবীর নানা স্থানে পাওয়া গেছে। এত প্রমাণ পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তর্ক ছিল—আসলে কোন ঘটনার কারণে এই গণবিলুপ্তি?

বিশাল উল্কাপিণ্ড: প্রথম সন্দেহভাজন

উনিশশো আশির দশকে ভূবিজ্ঞানী ওয়াল্টার আলভারেজ ও তার দল পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরে অস্বাভাবিক রকমের ইরিডিয়াম খুঁজে পান, যা সাধারণত উল্কাপিণ্ডে থাকে। এই স্তরটিই ক্রেটাসিয়াস–প্যালিওজিন সীমা। কিন্তু প্রশ্ন ছিল—উল্কাপিণ্ড আঘাত করলে তার বিশাল গর্ত কোথায়?

পরে জানা যায়, উনিশশো ষাটের দশকে মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপে পেমেক্স–এর অনুসন্ধানের সময় ১৮০ কিলোমিটার–ব্যাসের গহ্বর ধরা পড়েছিল—চিচুলুব ক্রেটার। ১০ বিলিয়ন টনের উল্কাপিণ্ড ঘণ্টায় ৮০,০০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল। বিস্ফোরণের শক্তি আজকের সব পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তির বিশ হাজার গুণ।

Last day of the dinosaurs' reign captured in stunning detail | National Geographic

আঘাতের তীব্রতায় শিলা ও উল্কা বাষ্পীভূত হয়, আকাশ ভরে ওঠে ইরিডিয়ামসমৃদ্ধ ধূলিকণায়। সূর্যালোক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পৃথিবীতে তাপমাত্রা নেমে যায়, ফটোসিন্থেসিস বন্ধ হয়ে পড়ে। খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যেতে থাকে—এবং ডাইনোসররা বিলীন হতে শুরু করে।

আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত: দ্বিতীয় বিপর্যয়

একই সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ডেকান ট্র্যাপস অঞ্চলে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত চলছিল, যা কয়েক হাজার বছর ধরে স্থায়ী ছিল। একটি দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই কিলোমিটার পুরু লাভার প্রলেপ আজও সেই দুর্যোগের সাক্ষ্য দেয়।

বায়ুমণ্ডলে ছাই ও অতিরিক্ত কার্বন–ডাই–অক্সাইড জমে আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে—শীতলতার পরপরই আসে চরম উষ্ণতা, যার ধকল পৃথিবীর জীবজগত সামলাতে পারেনি।

সমুদ্রপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন: তৃতীয় আঘাত

ক্রেটাসিয়াস যুগের শেষদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠ ধীরে পতন হচ্ছিল। কিন্তু উল্কাপিণ্ড–আঘাতের সময় আকস্মিকভাবে জলস্তর বেড়ে যায়। ভূ–ত্বকের সরে যাওয়া, সাগরতলের উঁচু–নিচু হওয়া কিংবা বরফ গলার ফলে সৃষ্ট এই পরিবর্তন ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া বাস্তুতন্ত্রে আরও চাপ তৈরি করে।

At the site of the dinosaur-killing crater, scientists find a surprise | Mashable

কেন পাখিরা টিকে গেল?

যেখান থেকে অন্য ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, সেখানেই টিকে গেছে আভিয়ান ডাইনোসররা—আজকের পাখিরা। তাদের ছোট আকৃতি, দ্রুত বংশবৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাসের নমনীয়তা এবং সম্ভাব্য সুরক্ষিত বাসা–ব্যবস্থাই হয়তো তাদের রক্ষা করেছে।

মানুষের উত্থানের পথ খুলে দেয় এই গণবিলুপ্তি

ডাইনোসরদের বিলুপ্তিই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উত্থানের পথ তৈরি করে। ছোট, অভিযোজ্য স্তন্যপায়ীরা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আজকের নীলতিমি—পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাণী—এই স্তন্যপায়ী শ্রেণিরই সদস্য। আর সেই পথ ধরেই উদ্ভব ঘটে মানবজাতির।

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন বিপর্যয়ের যৌথ আঘাতেই কি পৃথিবী বদলে গেল

তিন বিপর্যয়ের যৌথ আঘাতেই কি পৃথিবী বদলে গেল

০৭:৩০:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ডাইনোসরদের বিলুপ্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের ধাঁধার সমাধানে বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন—এটি একক কোনো বিপর্যয় ছিল না। একসঙ্গে তিনটি মহাবিপর্যয় পৃথিবীর জীবনচক্রকে বদলে দিয়েছিল। প্রায় ১৮ কোটি বছর ধরে স্থল, সাগর ও আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো ডাইনোসররা মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলীন হয়ে যায়।

ডাইনোসর–যুগের আকস্মিক সমাপ্তি

৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রেটাসিয়াস যুগের শেষ প্রান্তে পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাণী—২৫ কেজির বেশি ওজনের প্রায় সব জীব—মুছে যায়। সেই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন পৃথিবীর নানা স্থানে পাওয়া গেছে। এত প্রমাণ পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তর্ক ছিল—আসলে কোন ঘটনার কারণে এই গণবিলুপ্তি?

বিশাল উল্কাপিণ্ড: প্রথম সন্দেহভাজন

উনিশশো আশির দশকে ভূবিজ্ঞানী ওয়াল্টার আলভারেজ ও তার দল পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরে অস্বাভাবিক রকমের ইরিডিয়াম খুঁজে পান, যা সাধারণত উল্কাপিণ্ডে থাকে। এই স্তরটিই ক্রেটাসিয়াস–প্যালিওজিন সীমা। কিন্তু প্রশ্ন ছিল—উল্কাপিণ্ড আঘাত করলে তার বিশাল গর্ত কোথায়?

পরে জানা যায়, উনিশশো ষাটের দশকে মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপে পেমেক্স–এর অনুসন্ধানের সময় ১৮০ কিলোমিটার–ব্যাসের গহ্বর ধরা পড়েছিল—চিচুলুব ক্রেটার। ১০ বিলিয়ন টনের উল্কাপিণ্ড ঘণ্টায় ৮০,০০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল। বিস্ফোরণের শক্তি আজকের সব পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তির বিশ হাজার গুণ।

Last day of the dinosaurs' reign captured in stunning detail | National Geographic

আঘাতের তীব্রতায় শিলা ও উল্কা বাষ্পীভূত হয়, আকাশ ভরে ওঠে ইরিডিয়ামসমৃদ্ধ ধূলিকণায়। সূর্যালোক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পৃথিবীতে তাপমাত্রা নেমে যায়, ফটোসিন্থেসিস বন্ধ হয়ে পড়ে। খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যেতে থাকে—এবং ডাইনোসররা বিলীন হতে শুরু করে।

আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত: দ্বিতীয় বিপর্যয়

একই সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ডেকান ট্র্যাপস অঞ্চলে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত চলছিল, যা কয়েক হাজার বছর ধরে স্থায়ী ছিল। একটি দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই কিলোমিটার পুরু লাভার প্রলেপ আজও সেই দুর্যোগের সাক্ষ্য দেয়।

বায়ুমণ্ডলে ছাই ও অতিরিক্ত কার্বন–ডাই–অক্সাইড জমে আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে—শীতলতার পরপরই আসে চরম উষ্ণতা, যার ধকল পৃথিবীর জীবজগত সামলাতে পারেনি।

সমুদ্রপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন: তৃতীয় আঘাত

ক্রেটাসিয়াস যুগের শেষদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠ ধীরে পতন হচ্ছিল। কিন্তু উল্কাপিণ্ড–আঘাতের সময় আকস্মিকভাবে জলস্তর বেড়ে যায়। ভূ–ত্বকের সরে যাওয়া, সাগরতলের উঁচু–নিচু হওয়া কিংবা বরফ গলার ফলে সৃষ্ট এই পরিবর্তন ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া বাস্তুতন্ত্রে আরও চাপ তৈরি করে।

At the site of the dinosaur-killing crater, scientists find a surprise | Mashable

কেন পাখিরা টিকে গেল?

যেখান থেকে অন্য ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, সেখানেই টিকে গেছে আভিয়ান ডাইনোসররা—আজকের পাখিরা। তাদের ছোট আকৃতি, দ্রুত বংশবৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাসের নমনীয়তা এবং সম্ভাব্য সুরক্ষিত বাসা–ব্যবস্থাই হয়তো তাদের রক্ষা করেছে।

মানুষের উত্থানের পথ খুলে দেয় এই গণবিলুপ্তি

ডাইনোসরদের বিলুপ্তিই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উত্থানের পথ তৈরি করে। ছোট, অভিযোজ্য স্তন্যপায়ীরা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আজকের নীলতিমি—পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাণী—এই স্তন্যপায়ী শ্রেণিরই সদস্য। আর সেই পথ ধরেই উদ্ভব ঘটে মানবজাতির।